ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ার বাজারের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শেয়ার বাজারের সম্ভাবনা

সর্বশেষ শেয়ার বাজার ধসের পর নানা সংস্কার উদ্যোগের কারণে কয়েক বছরে দেশের শেয়ার বাজার স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে, মানুষের মধ্যেও আস্থা ফিরেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সেমিনারে বলেছিলেন, ‘শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি খুশি। এতদিনে পুঁজিবাজার একটি ভিত্তি পেয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে শেয়ার বাজারের উন্নতি দৃশ্যমান হবে। শেয়ার বাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইন-কানুনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।’ অর্থমন্ত্রীর কথা যে অর্থপূর্ণ তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা তারই প্রমাণ। সাধারণভাবে এটা বলতেই হবে, বৃহত্তর সংখ্যক মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র কেনার পাশাপাশি অন্যত্র বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করবেন। এরকম পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজার তাদের কাছে প্রধান বিনেয়োগক্ষেত্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। তাই শেয়ার বাজার সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নিয়েই এখানে বিনিয়োগ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ওঠানামা বেশি হয়। তাছাড়া বহু বিনিয়োগকারী না বুঝেই শেয়ার বাজারে পুঁজি খাটান। বুঝেসুজে বিনিয়োগ করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। বেশির ভাগ শেয়ার অতি মূল্যায়িত। কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, অথচ শেয়ারের দাম বাড়ছে। এ ধরনের চিত্র পাওয়া যায়। শেয়ারবাজার আসলে তথ্যের বাজার। যার কাছে তথ্য আছে, সে বেশি লাভবান। অর্থনীতির শাস্ত্র অনুযায়ী, শেয়ার বাজার ফটকা বাজারেরই অংশ এবং এর মূল কথাই ঝুঁকি। এটা ঝুঁকির বাজার। সুতরাং ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে কেবল এই বাজারে থাকা যায়। আরেকজনকে দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক পদ্ধতি হতে পারে না। কোম্পানি প্রোফাইল দেখে বিনিয়োগ করাই বিচক্ষণতা। একটি কোম্পানির আর্থিক বিবরণী কিভাবে বুঝতে হয়, সেটি না জানলে শিখে নেয়া যায়। কখন কিনতে হয় আর কখন বিক্রি করতে হয় সেটিও বুঝতে হয়। মোটকথা জেনে বুঝেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যত্র বিনিয়োগ করলেও অভিন্ন নীতি অনুসরণীয়। চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হয়ে ওঠারই সম্ভাবনা বেশি। ইতোমধ্যে বিষয়টি পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত সবার মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই প্রধান বাজারে এটিই ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। চীনের শীর্ষ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর ২৫ শতাংশের মালিক হলে নতুন বিনিয়োগসহ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বাড়বে বলে মনে করছেন শেয়ার বাজারের কর্তাব্যক্তিরা। তবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এই ডিএসইর অংশীদারিত্ব পেতে শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়ছে না ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসএই)। তবে সঙ্গত কারণেই ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ দর বেশি পাওয়ায় বরাদ্দকৃত ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকেই দেয়ার পক্ষে রয়েছে। আর্থিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করলে শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ফলত প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসতে পারে বলে ধারণা করা যায়। সব মিলিয়ে আমরা আশার আলোই দেখছি।
×