ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন ৯ ফেব্রুয়ারি

জনসনের সফরের সময় কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জনসনের সফরের সময় কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-লন্ডন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঢাকায় আসছেন। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে তিনি ঢাকা আসবেন। প্রায় ১০ বছর পর যুক্তরাজ্যের কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার ঢাকা সফরে আসছেন। বরিস জনসনের ঢাকা সফরের সময় যুক্তরাজ্যগামী কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসছে। ঢাকা সফরকালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হবে। বরিস জনসনের ঢাকা সফরের সময় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য কার্গো অবরোধ তুলে নেয়ার বিষয়টির চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া ব্রেক্সিট ও ভিসা সহজীকরণ নিয়েও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড ঢাকা সফর করেছিলেন। এর প্রায় ১০ বছর পরে ব্রিটিশ কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার ঢাকায় আসছেন। ঢাকা-লন্ডন রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকা সফরে আসছেন, ঠিক তখনই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করছে। যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল। তারা জোরালো ভূমিকা রেখেছে। ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইন নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাজ্যই প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করে। তারপর দেশটি রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও সহায়তা করেছে। অর্থ সাহায্যও দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বৈঠকের সময়ে বরিস জনসন জাতিসংঘ সদর দফতরে পৃথকভাবে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছাড়াও অনেক দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বরিস জনসনের ঢাকা সফরের সময় রোহিঙ্গা সঙ্কটে যুক্তরাজ্যের নিকট সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানির বাজার। সেখানে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে যুক্তরাজ্য বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শুল্কনীতি মেনে চলছে কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তারা এই জোট থেকে বের হয়ে যাবে। বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পরেও যেন বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেই বিষয়ে জোর দেয়া হবে। দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত কোন জটিলতা না থাকলেও বাংলাদেশীদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটি এই সফরের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হবে। কেননা বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ভিসা দেয়ার হার কম। তারা অনেক সময় নিচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশী ছাত্ররা যেন অবাধে যুক্তরাজ্যে পড়তে যেতে পারে সে বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সব ধরনের কার্গো পাঠানোর ওপর ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য সফর করে। ওই সময় দুই পক্ষই একমত হয় যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে বরিস জনসনের সফরের সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বরিস জনসন ২০১৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে লন্ডনের মেয়র পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। আগামী ১১-১৪ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করবে। ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি রেনেসাঁ তিরিঙ্কের সঙ্গে এক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সফরের সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা প্রাধান্য পাবে।
×