ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়টি আশাব্যঞ্জক বৈকি। মঙ্গলবার ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তাদের নেতৃত্বে ১৫ জন করে কর্মকর্তা নিয়ে মোট ৩০ সদস্যের এই গ্রুপ গঠন করা হয়। এই কমিটি মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, পুনর্বাসনসহ তাদের নাগরিক অধিকার দেয়ার বিষয়টি সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করবে। এই তিনটি ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংগঠন ও দাতা দেশের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। জানুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে প্রত্যাবাসনের কাজটি শুরু হতে পারে। তবে সমস্যা রয়ে গেছে বিস্তর। কেননা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপ এবং নিন্দা জ্ঞাপন সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা বন্ধ হয়নি। প্রাণ বাঁচাতে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে তারা কতটা মরিয়া তার প্রমাণ মিলেছে উপগ্রহ চিত্রে। অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের পরিবর্তে অন্য কোন দেশে চলে যেতে চাইছেন। অনেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে থেকে যেতে চাইছেন এদেশেই। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত কঠোর নজরদারি অত্যাবশ্যক। সর্বশেষ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সার্বিক প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ সুফল পেতে হলে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। জাতিসংঘের পাশাপাশি ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডার সাহায্য-সহযোগিতাও প্রত্যাশিত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ৫টি প্রস্তাবও পেশ করেছে। এগুলো হলো সে দেশে স্থায়ীভাবে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন বন্ধ করা; জাতিসংঘ মহাসচিবের অধীনে একটি নিজস্ব অনুসন্ধানী দল প্রেরণ; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং তা পূরণে সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা; রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে, যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, তাদের নিজ নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; সর্বোপরি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত পূরণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ, বিপুল জনগোষ্ঠী ও স্বল্প পরিসরে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সমর্থ নয়। প্রধানমন্ত্রীর উদারতা, মানবিকতা ও সহানুভূতির কারণে বাংলাদেশ তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সহায়-সম্বলহীন শরণার্থীদের জন্য। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই ঔদার্য ও মানবিকতা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেসহ অন্য রাষ্ট্রপ্রধানরা আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া, চীন ও ভারত এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে খোলাখুলি কিছু না বললেও বিরোধিতা করেনি। বরং ভারত ও চীন ত্রাণ পাঠিয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। ওআইসিও রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে। বলতেই হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবারই প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বেশ জোরেশোরে উপস্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিসরে এবং জাতিসংঘে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত ৫ দফা সমস্যাটির সুদূরপ্রসারী সমাধানে প্রভূত সহায়ক হতে পারে।
×