ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মশালায় আহ্বান

বিদেশে আলুর রফতানি বাড়াতে বীজ বাছাই করে চাষ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

বিদেশে আলুর রফতানি বাড়াতে বীজ বাছাই করে চাষ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আলু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। ধান ও গমের পরই আলুর স্থান হলেও দেশের উৎপাদিত সব আলু আমদানিকারক দেশের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই পূর্বের চেয়ে কমে এসেছে আলু রফতানি। চাষীরাও ভাল দাম পাচ্ছে না তাই অনেকেই চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। বিদেশে রফতানি বাড়তে এবং আমদানিকারকদের কাছে দেশের আলুর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে উপযুক্ত বীজ বাছাই করে চাষ করতে হবে। বৈশ্চিক বাজারে ভাল মানের আলু সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ারও মতো দিয়েছেন বক্তারা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পটেটো এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) আয়োজনে ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এগ্রো প্রোডাক্টস্ বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এপিবিপিসি) সার্বিক সহায়তায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বিপিএ সদস্য জাবের হোসেন বলেন, আলু নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ২০ শতাংশ ইনটেনসিভ রফতানির মূল সময়ে ১০ শতাংশ করা হলো। আবার রফতানি শেষে এসে আবার ২০ শতাংশে নেয়া হলো। কেন করা হলো ভেবে দেখা দরকার। ১ বা ২ টাকা কেজি আলুর দাম হলে উৎপাদন খরচ কি করে কৃষক উঠাবে, কেন কৃষক আলু চাষ করবে সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। বিপিএ আরেক সদস্য বলেন, আমাদের চীন পাকিস্তানের আলুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। বিশ^বাজারে ওদের আলু বেশি দিয়ে কিনতে রাজি থাকলেও আমাদেরটার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় না। তাই উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার সময় এখনি। অনুষ্ঠানে একটি তথ্যভিত্তিক ভিডিও উপস্থাপন করেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন শুভ রায়। তার উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশ আলু উৎপাদনে বিশে^র ৭ম। যার শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ আলু রফতানি করে ৩৯.৫৬ হাজার মেট্রিক টন যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৪০.২২ হাজার মেট্রিক টন। বিশ^বাজারসহ বিভিন্নভাবে আলুর কদর কমার কারণ হিসেবে তিনি নি¤œ মান, ব্যাকটেরিয়াল জনিত সমস্যা, ক্রপস জোন ঠিক করতে না পারা রফতানি পলিসিতে সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার বলেন, আলু আমাদের অন্যতম পণ্য। যে পরিমাণ ফলন তার রিটার্ন ভাল নয়। কোল্ড স্টরেজ করেও যে বাজার পাওয়ার কথা তা পাওয়া যায়নি। আলু চাষ থেকে ভোক্তা পর্যন্ত এমন হতে হবে যেখানে ভাল মানের কোয়ালিটি থাকতে হবে। বিদেশের বাজার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কি করে আরও ভাল বাজার পাওয়া যায় সে বিষয়ে দেখতে বলে তিনি বলেন, মান সম্মত পণ্যের বিষয়ে সরকার আন্তরিক। ব্যবসার পলিসি সেভাবে তৈরি করলে সরকার সাহায্য করবে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য ফসলে চলে যেতে পারে সে হিসেবে কৃষকদের আস্থা দিতে ব্যবসায়ীদের সে বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ভাগ্য রানী রণিক বলেন, আমরা দেশের মানুষের খাওয়ানোর জন্য হলেও আলু উৎপাদন করতে হবে। সে হিসাবে আলু উৎপাদন না কমিয়ে বাড়াতে হবে। যেহেতু অনেক ভ্যারাইটিজ উন্মুক্ত করা হয়েছে তাই রফতানিকারকরা কোন ধরনের পণ্য চান তা আগে জানাতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এত ছোট রাষ্ট্র যেখানে সবাই ভাল পণ্য চায়। ভাল পণ্য পেতে একটু সময়ও লাগে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় বলা আছে খাদ্যের অভাব থাকবে না। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র) বিভিন্ন বীজ নিয়ে তথ্য উপাত্ত দেন। আলু উৎপাদনের আধুনিক কৌশল নিয়েও রফতানিকারকদের ধারণা দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব মোঃ জাকির হোসেন এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. শেখ আব্দুল কাদের। এ সময় বিভিন্ন রফতানি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন কৃষিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
×