ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্রোতের বিপরীতে সফল রাইসুল

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

স্রোতের বিপরীতে সফল রাইসুল

রাইসুল হক চৌধুরী। দেশের প্রতিষ্ঠিত সংবাদ উপস্থাপনা চর্চা কেন্দ্র লক্ষ্য নিউজ প্রেজেন্টেশন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, দেশকে উপহার দিয়েছেন চার বছরে ৭২ জন নতুন মুখ! রাইসুল বিশ্বাস করেন, ‘প্রতিযোগিতা সবসময় নিজের সঙ্গে কখনোই অন্যের সঙ্গে নয়।’ তার রয়েছে নানা স্বপ্ন, আজকের ডিপ্রজন্মে থাকছে ব্যতিক্রমী সফল তরুণ রাইসুল হক চৌধুরীর বিশেষ সাক্ষাতকার। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- বেনজির আবরার ডিপ্রজন্ম-রাইসুল হক চৌধুরী সম্পর্কে জানতে চাই- রাইসুল হক- থিয়েটার আর বিতর্কের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আসা, এরপর উপস্থাপনা আর সংবাদ উপস্থাপনা এক সুতায় গেঁথে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে পথচলা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি আমার জন্মভূমি তবে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় কেটেছে ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরে। স্কুল জীবনে অভিনয়, গল্প বলা, উপস্থিত বক্তৃতায় জাতীয় পুরস্কার পেলেও ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন আয়োজনে শ্রেষ্ঠ বক্তা ও চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার আমার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা । প্রিজন্ম- ছোটবেলায় যা হতে চেয়েছিলেন? রাইসুল হক- ছোটবেলা থেকে চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট আর ভাল বিতার্কিক হওয়ার ইচ্ছা ছিল। প্রথমটি হওয়া হলো না কিন্তু বিতর্ক করতে করতে একটা সময় উপস্থাপক হিসেবে কাজ করা শুরু করলাম। এখন আছি সংবাদ উপস্থাপনার জগতে। ডিপ্রজন্ম- সংবাদ উপস্থাপনায় যেভাবে আসলেন? রাইসুল হক- ২০০৬ সালে আমি যখন উচ্চমাধ্যমিক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তখন য়ে সংবাদ উপস্থাপনা বিষয়ক একটা কোর্স করি, আমার পারফরমেন্স দেখে আমার গুরু প্রথিতযশা সংবাদ উপস্থাপক ডালিম ভাই আর সামিয়া আপা বললেন তুমি অনেক ভাল পড় কিন্তু তুমি অনেক ছোট। তোমার বয়সের কারণে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। পরবর্তীতে ডালিম ভাইয়ের পরামর্শে ২০০৮ সালে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হই। ২০১১ সালের ২৭ আগস্ট দেশের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে এটিএন নিউজে ক্যারিয়ার শুরু করি। মাঝের পাঁচ বছর একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত একটি রিয়েলিটি শোতে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করি। ২০১২ সালে এনটিভিতে যোগদান করি। ডিপ্রজন্ম- লক্ষ্য নিউজ প্রেজেন্টেশন একাডেমি সম্পর্কে জানতে চাই- রাইসুল হক- গান, নাচ, আবৃত্তি অভিনয়ের জন্য বাংলাদেশে অনেক চর্চা কেন্দ্র থাকলেও সংবাদ উপস্থাপনার জন্য কোন চর্চা কেন্দ্র নেই সেই অভাবকে ধারণ করেই ২০১৩ সালে লক্ষ্য নিউজ প্রেজেন্টেশন একাডেমির পথচলা শুরু। সংবাদ উপস্থাপনা সাংবাদিকতার বাকশিল্পকেন্দ্রিক একটি পেশা। একজন ভাল শিল্পী দীর্ঘদিনের চেষ্টা, শ্রম আর সাধনায় নিজেকে প্রস্তুত করেন, কখনও এক-দুই মাসে প্রস্তুত হয় না। আমরা এই ধারণাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের প্রথম সংবাদ উপস্থাপনার প্র্যাকটিস স্টুডিও লক্ষ্য চালু করে, বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে প্রেজেন্টেশন ক্যাম্প, বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে আমরা ছুটে গিয়েছি। অনেকে আজ লক্ষ্যকে মডেল একাডেমি হিসেবেও আখ্যায়িত করছেন, কারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিগত যে কারিগরি ব্যবস্থা রয়েছে যা অনেক ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে। ডিপ্রজন্ম- বলা হয়ে থাকে, ‘লক্ষ্য’ একজন তরুণকে গুণগত উপস্থাপক হতে সাহায্য করেÑ কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন। রাইসুল হক- বিষয়টা সত্যি। আগামী মাস থেকে উন্নত (ওয়ার্ল্ড)-এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করে ফেলছি, যেখানে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ ঘরে বসে ক্লাস করতে পারবে। এ ছাড়াও অটোকিউ সুবিধা সংবলিত লক্ষ্যর প্রফেশনাল স্টুডিওতে রয়েছে সংবাদ উপস্থাপনায় আগ্রহীদের জন্য নিয়মিত চর্চার সুযোগ। অটোকিউ সুবিধা সংবলিত প্রফেশনাল নিউজ স্টুডিও; ওয়াইফাই সুবিধা সংবলিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম; দেশ সেরা সংবাদ উপস্থাপকদের ভিডিও ফুটেজ কিংবা ভাল কোন নিউজ রিপোর্ট নিয়ে রয়েছে ডিজিটাল নিউজ লাইব্রেরি। এ ছাড়াও রয়েছে দেশসেরা প্রশিক্ষকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ। আমরা শিক্ষার্থীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার চেষ্টা করি। অন্যান্য সরকারি কিংবা বেসরকারি ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে কোর্স শেষ করে সার্টিফিকেট পেলেই বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যমে সংবাদ উপস্থাপনার জন্য আবেদন করতে পারেন, আমাদের এখানে যে পর্যন্ত প্রশিক্ষকরা অডিশনের জন্য যোগ্য মনে করবেন না সে পর্যন্ত কোথাও সেই শিক্ষার্থী সিভি জমা দিতে পারেন না। আমরা সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করি, আমরা বাণিজ্যিক না, পেশাদারিত্বের সঙ্গে লক্ষ্য একটি গুণগত পরিবর্তন চায়। ডিপ্রজন্ম- লক্ষ্য পরিবারের সফলতার কারণ এবং সাফল্যগুলো কি? রাইসুল হক- আমার কাছে, লক্ষ্য পরিবারের সফলতা যারা এর শিক্ষার্থী কিংবা প্রশিক্ষক বা শুভাকাক্সক্ষী সবাই লক্ষ্যকে নিজেদের আরেকটি পরিবার ভেবেছে। অনেকেই লক্ষ্যর জন্য নিরলসভাবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন ও পাশে থেকেছেন। আর শিক্ষার্থীদের সফলতা হলো মাত্র চার বছরে দেশের সম্প্রচার মাধ্যমকে ৭২ জন সম্প্রচার সাংবাদিক উপহার দিয়েছে। যার মধ্যে বিগত ২ বছরে ৩৫-৪০ জন। আমাদের কয়েকটি স্বপ্ন আছে, একটি হলো দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগে আর্ট অব প্রেজেন্টেশন নামে বা প্রেজেন্টেশন সম্পর্কিত একটি কোর্স চালু করার প্রস্তাবের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। যা ইতোমধ্যে আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্ট্যামফোর্ড ও জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগ সময়ের চাহিদাকে বিবেচনা করে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে যা হয়ত অন্যরা অচিরেই করবে । আরেকটি হলো আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেজেন্টেশন ক্লাব চালু করা, যেন স্কুল পর্যায় থেকে ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষিত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। ডিপ্রজন্ম- সারাদেশের যারা এই পেশায় আসতে চায়, তাদের জন্য পরামর্শ- রাইসুল হক- একটা সময় ধারণা ছিল উপস্থাপনা শুধু টেলিভিশন কিংবা স্টেজে সীমাবদ্ধ, এখন এই ধারণাটির পরিবর্তন হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে প্রত্যেকটি বিষয়ে ১০ নম্বর থাকে প্রেজেন্টেশন এর ওপর যা সামগ্রিক ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখে, তাই যে সংবাদ উপস্থাপনা পেশায় আশার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে তা না, নিজের ভাল ক্যারিয়ারের জন্য প্রেজেন্টেশনে ভাল হতে হবে। যদিও আমি নিজে এখনও কিছুই শিখতে পারিনি, আমার ছোট কর্মজীবনের প্রস্তুতি থেকে বলতে পারি চর্চা চর্চা আর চর্চা। সংবাদ দেখতে হবে, শুনতে হবে, পত্রিকা পড়তে হবে এবং বলার চেষ্টা করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে প্রতিযোগিতা সব সময় নিজের সঙ্গে কখনোই অন্যের সঙ্গে নয়। দিনশেষে আপনার জীবনের প্রাপ্তি একটি, হয় আপনি ভাল আর না হয় খারাপ। প্রত্যেকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলেই আমাদের চারপাশের খারাপ লাগাগুলোও ভাল লাগবে ।
×