ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪ ব্যাংক নগদ অর্থ সঙ্কটে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২১ নভেম্বর ২০১৭

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪ ব্যাংক নগদ অর্থ সঙ্কটে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১৪টির নগদ অর্থ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলোÑ ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাস শেষে এ ১৪ ব্যাংকের পরিচালন নগদ প্রবাহ বা অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ার অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের সঙ্কট সৃষ্টি হওয়া। ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিতরণ করা ঋণ প্রত্যাশা অনুযায়ী আদায় না হওয়া পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করছে তা কোয়ালিটিসম্পন্ন নয়। ফলে আশানুরূপভাবে ঋণ আদায় হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ হলো কিছু না কিছু সমস্য সৃষ্টি হচ্ছেই। এ সমস্য যদি দ্রুত সমাধান করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এতে ব্যাংকের মুনাফায় ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। আবার মুনাফার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যাংক আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করতে পারে। এতে সঙ্কট আরও বাড়বে। এর আগে জুন মাস পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। শেষ তিন মাসের ব্যবসায় নতুন করে ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মকের তালিকায় নাম লিখিয়েছে এক্সিম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের নগদ অর্থ সঙ্কটের পাশাপাশি সম্পদমূল্যও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদমূল্য ঋণাত্মক আছে ১৫ টাকা ৫৪ পয়সা। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আগের বছরের তুলনায় চারটি ব্যাংকের সম্পদমূল্য কমে গছে। সম্পদমূল্য কমে যাওয়া ব্যাংকের তালিকায় রয়েছেÑ সাইথ ইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক। এর মধ্যে সাইথ ইস্ট ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই নগদ অর্থ সঙ্কটে রয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক পাঁচ টাকা ৬৬ পয়সা। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ ছিল ঋণাত্মক পাঁচ টাকা। অবশ্য আগের বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো ধনাত্মক ছিল। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থ সঙ্কটে পড়া ট্রাস্ট ব্যাংক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসেছে। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে এক টাকা ১৯ পয়সা, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ঋণাত্মক ২৬ টাকা ৫২ পয়সা। তবে জানুয়ারি-জুন সময়ের মতো সেপ্টেম্বর শেষে বড় ধরনের নগদ অর্থ সঙ্কটে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২২ টাকা ৪৯ পয়সা। গত জুন শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ ছিল ঋণাত্মক ২৫ টাকা। আগের বছরও এ ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। ২০১৬ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ ছিল ঋণাত্মক সাত টাকা ১৪ পয়সা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেন এমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানটিতে নগদ অর্থের সঙ্কট তৈরি হয়। এতে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। বিশেষ করে পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে অর্থের প্রয়োজন হলে তা যোগানে সমস্যার সৃষ্টি হয়। শেয়ারহোল্ডারের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা বলছেন, একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচালন নগদ প্রবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর (সূচক)। তবে একটি প্রান্তিকের (তিন মাসে এক প্রান্তিক) আর্থিক অবস্থা দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। বিভিন্ন কারণে হঠাৎ যে কোন প্রান্তিকে আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক থাকলে বুঝতে হবে ওই প্রতিষ্ঠান সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। আর যে প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ ঋণাত্মকের পরিমাণ যত বেশি হবে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্কটের মাত্রা তত বেশি হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বখতিয়ার হাসান বলেন, একটি ব্যাংকের অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে গেলে বুঝতে হবে ওই ব্যাংকের নগদ অর্থের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের জন্য ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকলে তা বড় ধরনের কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে।
×