ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের নীরবতা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিশ্বব্যাংকের নীরবতা

মিয়ানমারে ব্যাপকহারে গণহত্যা এবং জন্মভূমি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনায় জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্ববাসী যখন উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ এবং ধিক্কার জানাচ্ছে, বিষয়টির সমাধান চাইছে, তখন বিশ্বব্যাংক নীরব। তার এই নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বিশ্বের সর্বাধিক নিপীড়িত, নির্যাতিত ও বৈষম্যের শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। লাখ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ফলে যে বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা বর্ণনাতীত। বন-পাহাড় কেটে আশ্রয় শিবির বানাতে হয়েছে, সে বিষয়েও বিশ্বব্যাংক নীরবতাকে প্রাধান্য দিয়েছে বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। স্মরণ করা যায়, কয়েক দশক সামরিক জান্তা শাসনের পর সেনা সমর্থিত আউং সান সুচির নির্বাচিত একটি সরকার মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন। গণতন্ত্রের মানসকন্যা (?) হিসেবে সুচিকে অভিধা দিয়েছিল বিশ্ববাসী। সেই সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর দেশটির অর্থনীতি বিশ্বাঙ্গনে উন্মুক্ত হতে শুরু করে। সে সময় বিশ্বব্যাংক সাড়ম্বরে মিয়ানমারে আসে। দেশটিতে বর্তমানে ব্যাংকের দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। এই অর্থলগ্নিকালে বিশ্বব্যাংক বলেছে, মিয়ানমারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় সরকারের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় যোগ দিয়েছে তারা। এ উন্নয়নে গরিব ও দুস্থসহ মিয়ানমারের জনগণ উপকৃত হবে। ব্যাংকের আশাবাদ যথার্থই হতো, যদি সেখানে গণহত্যা ও নাগরিক নিপীড়ন শুরু না হতো। এমনকি আগুন জ্বালিয়ে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। আর এসব ঘটনা দেশটির উন্নয়নকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। রোহিঙ্গারা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র ও প্রান্তিক একটি জনগোষ্ঠী। শিক্ষা-দীক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দশকের পর দশক ধরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার তারা। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। সেখানে সাংবাদিক ও বিদেশী কোন প্রতিনিধিকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি জাতিসংঘ যে ত্রাণ বিতরণ করে এসেছিল সেই ত্রাণ প্রদানও বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার এরা। সেদেশের সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে এখনও। জাতিসংঘের মহাসচিব কোফি আনান কমিশন যে সুপারিশ পেশ করেছে তা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে সমস্যার সমাধান। কিন্তু দেশটি সে বিষয়ে কোন গা করছে না, রা-ও নয়। এত সব নির্মম বিভীষিকাময় কর্মকা-ের পরও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক একদম ‘স্পিকটি নট’। অথচ ২০১২ সালেও রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা চালানো হলে অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সে সময় বিশ্বব্যাংক ওই সহিংসতাকে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে মূল্যায়ন করেছিল। সত্যকে চাপা দেবার এই এক উদাহরণ। এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনার শিকার হয় সংস্থাটি। ২০১৫ সালে এসে স্বীকার করে যে, মিয়ানমার সরকার বহুদিন ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য ও বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আজকের বর্বরতা যখন বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, তখন কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না তারা। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ংকিমের ভূমিকাও স্পষ্ট নয় এ ব্যাপারে। উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচী শ্লথ হয়ে পড়ছে, সমন্বিত উন্নতি থেকে দেশটি সরে যাচ্ছে, সে বিষয়েও কোন ভাষ্য নেই। বিশ্বের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে না দাঁড়িয়ে বিশ্বব্যাংক কি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
×