ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৯ আগস্ট ২০১৭

বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন

সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে দিন দিন। একই সঙ্গে বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ত্রাণ বিতরণ ও বন্যা-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে বগুড়া ও গাইবান্ধা সফর করেছেন। পর্যায়ক্রমে তিনি অন্যান্য দুর্গত এলাকা পরিদর্শনেও যেতে পারেন। এতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনকল্পে আন্তরিকতারই প্রতিফলন ঘটেছে। ত্রাণ বিতরণকালে উত্তরাঞ্চলের বন্যাদুর্গত জনগণের পুনর্বাসনে ৭১৭ কোটি টাকার পুনঃপ্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে। সর্বাধিক জোর দেয়া হয়েছে কৃষকদের পুনর্বাসনে। উত্তরাঞ্চলের ৬ জেলার ৬ লাখ কৃষককে আগামী ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত কয়েক কেজি করে ধান বীজসহ বিভিন্ন রকম বীজ, সার, নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। সহায়তা দেয়া হবে বাসস্থান নির্মাণেও। সত্য বটে, বন্যার চেয়েও বেশি ধকল যায় বন্যা-পরবর্তী দুর্ভোগ সামলাতে, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে। বন্যায় এ পর্যন্ত যে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল বলতে কিছু নেই। প্রায় আশ্রয়হীন এসব বন্যাদুর্গতের দৈনন্দিন খাবার বলতেও কিছু নেই। সর্বত্র যে সরকারী-বেসরকারী ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেছে, এমনটা বলা যাবে না। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্রকট। রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। চিড়া, গুড়, মুড়ি, রুটি খেয়ে আর কতদিন? তদুপরি পেটেরপীড়া, কলেরা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি পানিবাহিত রোগব্যাধির উৎপাত। ব্যাপক ফসলহানির খবরও আছে। এসবের মোকাবেলায় চাই পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও ওষুধপত্র। সরকারী হিসাবে বন্যাকবলিত ৩০ জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেসরকারী হিসাবে আরও বেশি। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে বলে জানানো হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও কমতির দিকে। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। বীজতলাসহ ফসলহানির খবরও আছে। সঙ্কট রয়েছে আমন ও বোরো বীজের। অতঃপর প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য হবে সব রকম সাহায্য-সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এনজিওগুলোও এক্ষেত্রে জরুরী ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। সরকারীভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত ত্রাণ দেয়া হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। বাংলাদেশের যেসব অংশে বন্যা দেখা দিয়েছে, সে সবই মূলত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টি, যা অনেক সময় বাঁধ উপচে পড়ার কারণে ছেড়ে দেয়া হয়। একদিকে তিস্তা-ধরলা-তোরসা, অন্যদিকে অসমের ব্রহ্মপুত্রের বন্যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদ-নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে ফারাক্কাসহ অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণের কারণেই প্রতিবছর এমন ঘটনা ঘটে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর এর অনিবার্য অসহায় শিকার হচ্ছে দু’দেশের সীমান্তবর্তী লাখ লাখ গরিব মানুষ। প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমস্যার নিরসনসহ তিস্তা-ফেনীর পানি সমস্যাটিও ঝুলে আছে অথচ বন্যাদুর্গত ও নদী ভাঙ্গনকবলিত অসহায় মানুষের সাংবাৎসরিক দুর্দশা লাঘবে দু’দেশের মধ্যে পানি সমস্যার মীমাংসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত এ বিষয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি নেপাল, সিকিম, ভুটান ও চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খরা মৌসুমে মঙ্গাপরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেয়া হয়েছে দরিদ্র ও বিধবা ভাতা, কাবিখা-টাবিখা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে। এবার হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হয়ত প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল না তেমন। যা হোক, এখন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উচিত সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার করার পাশাপাশি পুনর্বাসনে প্রয়োজন বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার, জরুরী ওষুধপত্র, তাঁবু ইত্যাদি। গরিব ও অসহায় মানুষদের কাছে এখনই সে সব পৌঁছে দেয়া প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য। সরকার তথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এদিকে নজর দেবে বলেই প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে তারা জরুরী উদ্যোগ নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত।
×