ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল ব্যাংকিং

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৭ আগস্ট ২০১৭

স্কুল ব্যাংকিং

এটা খুবই আশার কথা যে, দেশে স্কুল ব্যাংকিং ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ২০১০ সালের নবেম্বরে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। এর আগে দেশব্যাপী মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগ নেয়া হয় কৃষিজীবীদের জন্য। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এ দুটো কার্যক্রম চালুর পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গবর্নর ড. আতিউর রহমানের উৎসাহ ও উদ্যোগ অবশ্যই উল্লেখের দাবি রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাইয়ের শেষে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খুদে সঞ্চয়ী তথা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৩টি। শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ সর্বশেষ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে যা লক্ষণীয় তা হলো, স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় পল্লী শাখায় এ্যাকাউন্ট খোলার হার শহরের তুলনায় কম। তদুপরি বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা ও সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি। এর একটা কারণ এই হতে পারে যে, সরকারী ব্যাংকগুলোতে গত কয়েক বছরের লুটপাট-দুর্নীতির কারণে শিক্ষার্থী তথা অভিভাবকদের আস্থায় চিড় ধরেছে। সরকারী ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয়ের সুদের হার এবং সুযোগ-সুবিধাও কম। তুলনামূলকভাবে দেশে বেসরকারী ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতায় অনেক এগিয়ে। দেশের মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটা অংশ শিক্ষার্থী। তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমের বাইরে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের মধ্যে শৈশবকাল থেকেই সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুললে তাদেরও যেমন লাভ, তেমনি গতি সঞ্চার হয় দেশের অর্থনীতিতেও। প্রধানত এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাংকগুলোকে স্কুল ব্যাংকিং চালু করার অনুমোদন দেয় সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে দেশের ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৫টিই স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে। ইয়ং স্টার, ফিউচার স্টার, প্রজন্ম স্টার ইত্যাদি নানা আকর্ষণীয় নামে খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিম চালু করেছে ব্যাংকগুলো। স্বভাবতই ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কিছু করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে ব্যাংকগুলোকে। সত্য বটে, দেশে সঞ্চয়ের বিপরীতে সুদের হার অনেক কম। অথচ আমানত আকৃষ্ট করতে হলে সুদের হার বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই বললেই চলে। সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এহেন আর্থিক নীতি সমালোচিতও হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সে অবস্থায় সঞ্চয়ের বিপরীতে খুদে শিক্ষার্থীদের সুদের বিকল্প হিসেবে কিছু প্রণোদনা দেয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখতে পারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবশ্য কতিপয় ব্যাংক প্রতিবছর দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধাসহ বিভিন্ন বৃত্তি দিয়ে থাকে। এর আওতা আরও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। মোটকথা, সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহী ও আকৃষ্ট করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আর তাহলেই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাফল্য সুনিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে শিশু ও কিশোর শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তদুপরি মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এ জাতীয় সঞ্চয়ে।
×