ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫ সেপ্টেম্বর থেকে আইপিও আবেদন শুরু

রাজস্ব না দিয়েই হিসাবে দেখিয়েছে ওইম্যাক্স

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৭ আগস্ট ২০১৭

রাজস্ব না দিয়েই হিসাবে দেখিয়েছে ওইম্যাক্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের কোষাগারে রাজস্ব জমা না দিয়েই আর্থিক প্রতিবেদনে নগদ প্রবাহ হিসাবে অর্থ প্রদানের তথ্য দিয়েছে ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভুল করে এমন আর্থিক হিসাব দেখানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটির আইপিও আবেদনের জন্য জমা দেয়া প্রসপেক্ট্রাসের আর্থিক হিসাবেও কিছুটা গড়মিল রয়েছে। এর মধ্যেই কোম্পানিটি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করতে যাচ্ছে। বিএসইসিতে জমা দেয়া প্রসপেক্ট্রাস অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের নগদ প্রবাহ হিসাবে রাজস্ব বা কর বাবদ সরকারী কোষাগারে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যালেন্স শীটে অগ্রিম কর প্রদানে মাত্র ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকার হিসাবে পাওয়া গেছে। বাকি ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকার কোন হিসাব নেই। অন্যদিকে নোট ৭.০২ এ অগ্রিম করের সঙ্গে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা সমন্বয় করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও নোট ১৭.০১-এ ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা সমন্বয় দেখানো হয়েছে। আর বাকি ৫ লাখ টাকা নগদ প্রদান বলে উল্লেখ আছে। এ হিসাবে একই বিষয়ে দুই রকম তথ্য প্রকাশ করে বিএএস-১ লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে অনেক কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) এক দুই বছর আগে থেকে কৃত্রিমভাবে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধে ৫ থেকে ১০ বছরের আর্থিক হিসাব পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। এছাড়া কোম্পানিটির নগদ প্রবাহের বিক্রয়বাবদ গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় হিসাবেও রয়েছে গরমিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে টাকা আদায় সঠিক থাকলেও পরের বছরগুলোতে রয়েছে গরমিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিক্রয় হয়েছে। এর মধ্যে বাকিতে হয়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার। এ হিসাবে নগদ প্রবাহ হিসাবে গ্রাহকের কাছ থেকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আদায় হওয়ার কথা থাকলেও ৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া ওয়েস্টেজ পণ্য বিক্রয় বিবেচনায় নিলেও নগদ প্রবাহের সঙ্গে গরমিল থাকছে। একইভাবে পরবর্তী অর্থবছরগুলোতেও গরমিল আর্থিক হিসাব দেখানো হয়েছে। এদিকে বিএএস-৭ অনুযায়ী, ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হিসাব করতে হয়। কিন্তু ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ মোট শেয়ার বিবেচনায় এ হিসাব করেছে। যাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ ১.০৮ টাকার পরিবর্তে ০.৮৭ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ০.৩১ টাকার পরিবর্তে ০.২৭ টাকা দেখানো হয়েছে। কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোঃ ইকরামুল ইসলাম বলেন, নগদ প্রবাহ হিসাবে ভুল হয়ে গেছে। নগদ প্রবাহ হিসাবে ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে পার শেয়ার ক্যাশ ফ্লো নির্ণয় করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। তবে কমিশন চাইলে এ হিসাব করে দেয়া হবে। আর ওয়েস্টেজ পণ্য বিক্রয় বিবেচনায় নিলে বিক্রয়বাবদ অর্থ আদায় হিসাব গরমিল থাকবে না বলে জানান। ভুল রিটার্ন অন ইক্যুইটি দেখিয়ে আসছে ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। মুনাফাকে গড় ইক্যুইটি দিয়ে ভাগ করে রিটার্ন অন ইক্যুইটি দেখাতে হয়। কিন্তু ওইম্যাক্স কর্তৃপক্ষ বছর শেষের ইক্যুইটি দিয়ে রিটার্ন অন ইক্যুইটি নির্ণয় করে। যা প্রকৃত চিত্র দেখায় না। ২০১০ সালের ২১ মার্চ উৎপাদন শুরু করা ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস ব্যবসায় শুরুর ১৫ মাসে (২১ মার্চ ২০১০-জুন ২০১১) ৪৮ লাখ ৯ হাজার টাকা মুনাফা করেছে। মাত্র ৪ লাখ টাকার ইক্যুইটি দিয়ে কোম্পানিটি এ অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে। কিন্তু পরবর্তী অর্থবছর ২০১১-১২ তে ৫২ লাখ ৯ হাজার টাকার ইক্যুইটি দিয়ে মুনাফা করেছে ২৪.৪২ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অস্বাভাবিকভাবে ২০৫ শতাংশ বেড়ে বিক্রয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। কোম্পানির সিএফও মোঃ ইকরামুল ইসলাম বলেন, টাইপিং মিসটেকের কারণে শেয়ার মানি ডিপোজিটে এ ভুল হয়েছে। রিস্টেট ইপিএসে ভুল হয়েছে এবং তা পরে সংশোধন করা হয়েছে। তবে প্রসপেক্টাসে এ সংশোধন দেখাতে পারেননি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে, সেভাবেই ঋণের কারেন্ট পোরশন দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে কেন মিলছে না বা গরমিল রয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা তার জানা নাই বলে জানিয়েছেন। ২০০৫ গঠিত কোম্পানিটির উৎপাদন শুরু হয় ২০১০ সালে। যে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা ১২ মাসের মধ্যে ব্যবহার করবে।
×