ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৪ আগস্ট ২০১৭

কোরবানির পশুর হাট

আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় এবার কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য রাজধানীতে ২৩টি হাট বসবে। বুধবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) আয়োজিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১০টি আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১৩টি স্থানে এ পশুর হাট বসবে। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাজধানীতে প্রতিবারই কোরবানির পশুর হাট বসে। এমনিতেই ঢাকা শহর মানুষ, যানবাহন এবং ভবনের ভিড়ে ভারাক্রান্ত। তবু লাখো মানুষের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিপুলসংখ্যক গবাদিপশুর আমদানি ঘটে এ সময়। পশুর সঙ্গে পশু বিক্রেতা বা পশু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মীরা রাজধানীতে আসেন। ফলে ওই সময়টায় মহানগরীর যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বড় ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এসব অসুবিধা মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই মেনে নেয় বটে। যদিও মানুষের স্বাভাবিক রুটিন কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে শহরের ভেতরে স্থাপিত পশুর হাটগুলো বরাবরই যানবাহন এবং জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটায়। এমনিতেই যানজট ঢাকাবাসীর জন্য নিত্য বিড়ম্বনার কারণ। তার ওপর পশুর হাটের কারণে অতিরিক্ত মানুষ ও পশুর যাতায়াতের ফলে ঢাকায় অনেকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ঈদ-উল-আযহায় মোট কতসংখ্যক পশু কোরবানি হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও কোরবানি ঈদের পর চামড়া গণনায় দেখা যায় গড়ে ৩৫ লাখ গরু কোরবানি হয়। দেখা যাচ্ছে দেশে প্রতি বছর কোরবানির গরুর চাহিদা তৈরি হয় সর্বোচ্চ ৪০ লাখের মতো। অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশ নিজস্ব উৎপাদন থেকে আসছে। তবে কোরবানির সময় এটি মোট চাহিদার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঘাটতি থাকে। কোরবানির বেশ আগে থেকে পশুর হাট বসা নিয়ে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা যায়। বিগত কয়েক বছরের এসব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা এবং হাট পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আকাক্সক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে ফাঁক কতটা বড়। এবারও কোরবানির পশুর হাট নিয়ে মাসাধিককাল আগে থেকেই জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বিরাজমান সমস্যা ও তার সমাধানের বিষয়ে পরামর্শ ও প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। এসব বক্তব্যের ভেতর সদিচ্ছাই যে প্রকাশ পেয়েছে তাতে কোন সংশয় নেই। কোরবানির পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক, মানুষের দুর্দশা সীমিত পর্যায়ে থাকুক- সবার ভেতরেই এ ধরনের শুভ চিন্তা কাজ করছে। অতীতে দেখা গেছে রাজধানীতে নির্দিষ্টভাবে এক কুড়ির কম বা বেশি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও পথেঘাটে যেখানে-সেখানে, এমনকি গলির ভেতরে পর্যন্ত সেসব হাটের সম্প্রসারণ ঘটেছে। এমনকি অনুমোদিত হাটের জায়গা থেকে বেশ দূরেও ছোটখাটো পশুবাজার বসে যেতে দেখা গেছে। এবার এসব অনির্ধারিত, অবৈধ এবং অননুমোদিত ছোট ছোট হাট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা গেলে নগরবাসীর যন্ত্রণা যে অনেকখানি লাঘব হবে তা বলাই বাহুল্য। আমরা আশা করব, রাজধানীতে বসবাসকারী পৌনে দুই কোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে অচল, বিপন্ন বা বিপর্যস্ত করে যত্রতত্র পশুর হাট বসানো বন্ধে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটের জায়গা পাওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। ১০-১৫ বছর আগেও অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল। এখন নেই। ফলে স্কুল-কলেজের মাঠে, খেলার মাঠে বা সড়ক-রেললাইনের পাশে হাট বসাতে হয়। কোরবানির পশুর হাট জরুরীও বটে। তবে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারের লোকদের উচিত হবে নির্দেশনা আমলে নিয়ে উল্লিখিত জায়গায় হাট না বসানো। বিকল্প জায়গার খোঁজ তারা করবেন এটাই প্রত্যাশা।
×