ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সায়েম খান

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ বৈষম্য ভেদ করে সাম্যের প্রতীক হয়ে উঠুক

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১১ আগস্ট ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ বৈষম্য ভেদ করে সাম্যের প্রতীক হয়ে উঠুক

স্বাভাবিকভাবে মনে হয় কবি মানে উন্নাসিক। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, কবি মানে চিন্তক। আর এই চিন্তার ব্যঞ্জনা কখনও ফুটে উঠবে মাত্রা ও ছন্দের নিয়মে আবার কখনও শব্দের অলঙ্কারে। কবিতা বলতে আমার কাছে ভাবের প্রগাঢ়তাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কবিতা আর গল্পের পার্থক্য করি এই ভাবের প্রগাঢ়তায়। গল্প হলো শব্দের বুনন যা ধীরে ধীরে ভাব খুঁজে নেবে। আর কবিতা হলো ভাব যা শব্দের যোগান দেবে। সেই শব্দের প্রভাবে কবি খুঁজে পাবে নিজের অচেনা জগত ও কবিতার আত্মকথা। শব্দের জাগরণে বিশ্বাসী আমি। শব্দের জাগরণ এক ধরনের সংগ্রাম। কবিকে এই সংগ্রামে ক্লান্ত হতে নেই বরং সংগ্রামের মোহনায় দাঁড় করাতে হয়। সংগ্রাম শুধু নিজের সঙ্গে নিজের করে নতুন নিজেকে জন্ম দিয়ে থেমে থাকা নয়। সংগ্রামের এই পথ ধরে হাঁটতে চাই সমাজ ও রাষ্ট্র ভাবনার পথে। তাই তো ভালবাসাকে কখনও দ্রোহের হাতিয়ার আবার দ্রোহকে ভালবাসার হাতিয়ার করে বিপরীতমুখীকে করতে চাই একমুখী। প্রত্যাশা করি, আমার কবিতা বৈষম্য ভেদ করে সাম্যের প্রতীক হয়ে উঠুক। পুনর্জন্মের প্রথমবার কয়লার রঙের রাত্রিকে বিতাড়িত করে জ্বলন্ত লোহার রঙের সূর্যোদয় নিয়ে সাদা আলোর প্রতিটি দিনের মতো বার বার তোমার মুখোমুখি হতে ভাল লাগে না। কালো রাত্রি আমাকে গ্রাস করেছিল কিন্তু অপবিত্রতা স্পর্শ করতে পারেনি। সকালের সাদা আলোতে যে দাগ স্পষ্ট ছিল, যার পরিণামে ছিল তোমার ভরতসনা সে আমার প্রথম জন্মের পবিত্র দাগ। এ জন্মটা মায়ের জঠরে নয়, এ জন্মটা তোমাতে- যেটা বার বার মরে বেঁচে থাকার প্রমাণক। হন্তারক ভালবাসা তোমার ভালবাসা হৃদয়ে যখন বলব তাহলে বুলেটও আমাকে ভালবাসে কারণ দুটোতেই ক্ষত হয় একখানে। তোমার কথা যখন বুলেট হয় গোলাপের পাপড়ি হয় হন্তারকের ছুরি মিথ্যের বেসাতি ছাড়া প্রেম হয় কি? অনুরোধ, প্রেমিককে মিথ্যুক বলো না, অপ্রেমিকরা যখন প্রেমিক হয়ে যায় তখন প্রেমিক আত্মোৎসর্গ করে। তোমার শেখানো বিদ্যে তোমার শেখানো বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছি দিনে দিনে রপ্ত করেছি অনেক গুরু দক্ষিণা দাবি কর না পায়ের তলার মাটি সরে তবে শূন্যে ভাসবো মাধ্যাকর্ষণ টান বল কাজ করবে না জাগতিক ফ্রেমে বন্দী জীবন ছেড়ে কল্পনার সঙ্গে বসবাস সে মানায় না, তাই তোমার কাছে আবেদন- পৃথিবীতেই হোক আমার শেষ নিঃশ্বাস। মৃতের জীবন আমার হৃদয় গোরস্তান বানিয়ে কর মড়ার চাষ জানো কি, কবরের ও প্রাণ আছে! সেখানে সূচিত হয় মৃতের জীবন। ভালবাসায় কঙ্কাল ভালবাসা নিলামে বিক্রি হবে প্রেমিক হয়ে যাবে খুনী। দেবালয় হয়ে যাবে শ্মশান চামড়ার পোশাক ছেড়ে দেবে দেহ মাংস খসে থাকবে শুধু কঙ্কালসার। ভালবাসা ও জীবন ভালাবাসা নাকি বাঁচতে শেখায়! কেউ কেউ বলে- ‘ভালবাসা মানেই জীবন।’ কিন্তু আমার বেলায় হয়নি সেটা বিপরীতমুখী তোমার ভালবাসা আর আমার জীবন বাঁচাতে গিয়ে জীবন, ভালবাসা বিসর্জন। জীবননগরে মরণ ফাঁদ পাতে যে প্রেমিকা- প্রেম যেখানে কারাগার তুল্য, প্রেমিক সেখানে পলায়নপর হতে বাধ্য। প্রশ্ন বিকেলে কলকলিয়ে ওঠা নদীর কাছে প্রশ্ন ছিল মাঝরাতে তুমি এত নিস্কব্ধ কেন? উত্তরে নদী বলে, ‘ভাঙ্গনের সুর দিতে দিতে আমি শ্রান্ত।’ ফুল না হয়ে ওঠা কলির কাছে প্রশ্ন ছিল ফুল হয়ে উঠতে তোমার বাধা কিসে? সে বলে, ‘যদি কীট হৃৎপিণ্ডে বাস করে!’ নীড় খোঁজা পাখির কাছে সন্ধ্যেবেলা প্রশ্ন ছিল তোমার ডানা ঝাপটানোর মাঝে পার্থক্য আছে কি? উত্তরে পাই, ‘সুখের উল্লাস আর আর্তনাদের ফারাক যা আছে কৈ কি।’ সকালের শান্ত প্রকৃতির কাছে গোধূলিলগ্নে প্রশ্ন ছিল তুমি এত বৈরী কেন? সে জানায়, ‘মানুষ মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি তাই।’
×