ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গো বৃত্তান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১১ আগস্ট ২০১৭

গো বৃত্তান্ত

গবাদি পশুর চাহিদা বেড়ে যায় বছরের এই একটা সময়ে। মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহার সঙ্গে সম্পর্কিত এই গবাদি পশু। উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ এই প্রাণী। বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের কাছে এই উৎসব আসে ত্যাগের মহিমা নিয়ে। উপমহাদেশের মুসলমানরা এই ঈদে গরু, উট, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণী কোরবানি প্রদান করে থাকেন। বাংলাদেশে বিশেষত গরু ও ছাগল কোরবানি দেয়া হয়। দেশীয় গরু দিয়ে এই চাহিদা পূরণ সম্ভব হতো না বলেই ভারত ও মিয়ানমার থেকে বৈধ-অবৈধ পথে গরু আমদানি হতো। ভারত গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় গত দুই বছর গরুর সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। এই সঙ্কট মোচনে দেশী খামারগুলোতে গবাদি পশুর প্রজনন, লালন-পালনের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায়। যে কারণে দেশে এখন গরুর সঙ্কট তেমন নেই। মজুদ পর্যাপ্ত। দেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ গরু কোরবানি দেয়া হয়। কোরবানির ঈদ সমাগত। এই পরিমাণ গরুর যোগান সম্ভব কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয় এবং উৎকণ্ঠা। সেই সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত এখন সরকার, খামারি, গরু ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারণ। আবার চামড়া ব্যবসায়ীরাও হিসাব কষছেন। কেননা, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের চামড়া শিল্প। কোরবানিতেই সংগৃহীত হয় সারা বছরে মোট চাহিদার অর্ধেক চামড়া। সবার দৃষ্টি এখন ভারতীয় গরুর দিকে। সীমান্তের ওপার থেকে আসা গরু দীর্ঘদিন ধরে এদেশের কোরবানির চাহিদা মেটাত। কিন্তু বিজেপি শাসিত সরকার গো হত্যা বন্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে এবং বাংলাদেশে অবৈধভাবে গরু পাচার বন্ধে সতর্কতা অবলম্বন করে আসছে। ফলে গরুর আমদানি আর তেমন নেই। গত বছর কোরবানিতে ভারত থেকে গরু সরবরাহ ছিল অনেক কম। তথাপি বৈধ-অবৈধ পথে গরু এসেছে এবং এখনও আসছে। ভারতের খামারিরাও প্রচুর লাভের মুখ দেখতে কোরবানির সময় বাংলাদেশে গরু রফতানি করে। বছরের এই একটা সময় তারা তাদের ব্যবসার বড় একটা মুনাফার মুখ দেখত। কিন্তু এখন তাতে ভাটা পড়েছে। কিন্তু গরু পাচার বন্ধ হয়নি। গত জুলাই মাস থেকে গরু আসা বাড়তে শুরু করেছে। চলতি মাসে তা অনেক বেড়ে যাবে। বৈধভাবে আসা গরুর সংখ্যাও কম নয়। সীমান্তবর্তী ৩১টি করিডর দিয়ে প্রতিদিনই আসছে গরু। বৈধপথে শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে এসব আমদানি হচ্ছে। পাশাপাশি অবৈধ পথেও আসছে সীমান্তের বিভিন্ন পথে দুপারের সীমান্ত রক্ষীরা কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করলেও গরু আসা বন্ধ হচ্ছে না। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে শিথিলতা আসবে, এমন ধারণা গরু ব্যবসায়ীদের। কিন্তু অধিক গরু আসার ফলে দেশী গরুর চাহিদা হ্রাস পেতে পারে বলে খামারিরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। দেশে এখন গরুর খামার রয়েছে সত্তর থেকে ৮০ হাজার। কোরবানির আগে এই খামার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে গরুর পরিচর্যা করেন এই ঈদকে সামনে রেখে। এবার আশা করা হচ্ছে দেশীয় উৎস থেকেই অন্তত ৮৫ ভাগ গরুর যোগান দেয়া সম্ভব হতে পারে। দেশে গবাদিপশুর উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে ছাগল ও ভেড়ারও। দেশী খামারিরা শঙ্কায় আছে, ভারত থেকে যদি অধিক গরু আসে তবে তাদের গরুর ভাল দাম মিলবে না। কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার থেকেও গরু আসছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে গরুর যে চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা বেশি। যোগান বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই দাম কম হবে। আর দাম কমলে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়বে। ভারত থেকে গরু আনা হলে দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে তারা আমদানিবিরোধী। চাহিদার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পূরণ করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আনা গরু। দেশী গরুর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তেমন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। সরকার যদি আগ্রহী হয়, খামারিদের আর্থিকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, তবে গরু উৎপাদন বাড়বে। এক সময় দেখা যাবে, দেশীয় চাহিদা মিটিয়েও বাংলাদেশ গোমাংস রফতানি করছে। গরুর জন্য চোরাচালানের পথও আর নিতে হবে না। হবে না সীমান্তে চোরাকারবারি হিসেবে আটক বা নিহত হওয়া। গরু নিয়ে গৌরব করার দিন আসার পথ তৈরির পাশাপাশি তা রফতানি করার শুভদিন আসুক এমন প্রত্যাশা নিরন্তর।
×