ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতা, যানজট

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৮ জুলাই ২০১৭

জলাবদ্ধতা, যানজট

শ্রাবণের মাঝামাঝি ভারি বর্ষণে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। একদিকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে অসহনীয় যানজট জনজীবনকে প্রায় স্থবির করে দিয়েছে। সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান না থাকলেও এ কথা বলা যায় যে, রাজধানীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জলমগ্ন হয়েছে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে। ঢাকার চারপাশের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় অব্যাহত ঝরে পড়া বৃষ্টির পানি অপসারিত হতে পারে না। অন্যদিকে যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বছরের পর বছর ধরে উড়াল সড়ক নির্মাণ, কাটাকাটি, নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতা, সর্বোপরি মৌসুমী বৃষ্টিপাত জনজীবনের এই প্রলম্বিত দুর্ভোগের জন্য প্রধানত দায়ী। বেদখল হয়ে যাওয়া ৫৩টি খালও এই জলাবদ্ধতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। অন্যদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদীও মুমূর্ষুপ্রায়। এসব নিয়ে প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজউক, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসার চাপানউতোর খেলাসহ সভা-সেমিনারে সুপারিশ প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এর পাশাপাশি বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের অবস্থাও শোচনীয়। সেখানের পরিস্থিতি অনেকাংশে রাজধানীর অনুরূপ হলেও বাড়তি উপদ্রব কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি। চট্টগ্রামে ভাটার সময় কোমর পানিতে কোন রকমে চলাচল করা সম্ভব হলেও প্রবল জোয়ারে প্রায় তলিয়ে যায় সমগ্র শহর। বৃষ্টির প্রাবল্য তো আছেই। ফলে সেখানে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধসহ খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের দাপট না কমলে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল সংস্কারসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হলেও বরাবরই তা থেকে গেছে উপেক্ষিত। নির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং নির্বাচিত মেয়রসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর এই চাওয়া-পাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন পুরোপুরি। এর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার অবস্থাই কী আদৌ ভাল বলা যাবে? তিনদিনের প্রবল বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্ট হয়েছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। হাটবাজার, সুপার মার্কেটও বাদ যায়নি জলাবদ্ধতা থেকে। দীর্ঘ সময়ব্যাপী যানবাহন সঙ্কটের পাশাপাশি অসহনীয় যানজটে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষকে। সরকার আসে, সরকার যায়। তবে বাস্তবে মানুষের দুর্ভোগ কমে না আদৌ, বরং আরও বেড়ে যায়। অথচ বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমনটি হওয়ার কথা নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকারের আমলে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা, মিলেছে নানা প্রতিশ্রুতি। বলা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আমূল সংস্কারসহ উন্নয়নে নেয়া হবে নানা পদক্ষেপ। বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর খালগুলো এবং চট্টগ্রামের চাক্তাই ও অন্যান্য নালা পুনরুদ্ধার এবং নাব্য রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও জনজীবন একটু হলেও সান্ত¡না পেত। কিন্তু হা হতোস্মি! মানুষকে এখনও পানিতে ডুবে অথবা পাহাড় চাপায় অসহায়ভাবে মরতে হয় যৎসামান্য প্রাকৃতিক বিড়ম্বনায়? প্রশ্ন হলো, যে দেশটিতে পদ্মা সেতুর মতো সুবিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হচ্ছে প্রায় স্বউদ্যোগে, সেখানে কী প্রতিরোধ করা যায় না জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধস?
×