ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ রানীর আমন্ত্রণে সাজিদ ও রাহাত

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২০ জুন ২০১৭

ব্রিটিশ রানীর আমন্ত্রণে সাজিদ ও রাহাত

সাজিদ ডিপ্রজন্ম-সাজিদ, অভিনন্দন। প্রথমেই আপনার সম্পর্কে জানতে চাই- সাজিদ ইকবাল- আমি সাজিদ, মাস্টার্স শেষ করলাম নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এ্যান্ড ম্যানুমেন্টের ওপর। পড়ালেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ ফেন্সিং এ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলাম। ডিপ্রজন্ম- আপনার প্রতিষ্ঠিত ‘চেঞ্জ’-এর কাজ সম্পর্কে বলুন- সাজিদ ইকবাল-চেঞ্জ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালু করি ২০১২ সালে। আমাদের প্রজেক্ট বোতলবাতি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছিল। মূলত নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পানি বিষয়ক উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে। চেঞ্জ কলকারখানার দিনরাতের আলোর পর্যাপ্ততার মাধ্যমে বিদ্যুতের সাশ্রয়ের নতুন পদ্ধতি পরিচিত করেছে। এ ছাড়া সৌরবাতি ও সৌর সেচ নিয়েও কাজ করে। মূলত এসবের স্বীকৃতি হিসেবেই কুইন্স ইয়াং লিডার ১৭ অর্জন। ডিপ্রজন্ম- আপনার প্রশংসিত প্রজেক্ট ‘বোতলবাতি’ নিয়ে জানান পাঠকদের- সাজিদ ইকবাল- আমার ফেসবুক ওয়ালে এক বন্ধু একটা ভিডিও শেয়ার করে। সেখান থেকেই প্রথম আইডিয়াটা পাই। পকেটে মাত্র ৫ হাজার টাকা ছিল, সেটা দিয়েই কাজ শুরু“ করি। প্রথম দিকে অনেক বিরক্তি আর মানুষের গালি শুনতে হতো। আমার ভাবনার মূল লক্ষ্য ছিল- বস্তির অন্ধকার ঘরগুলো। যেগুলোতে দিনের আলো পর্যন্ত পৌঁছে না। তারা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে। সেই অবৈধ সংযোগের পরিবর্তে বৈধ পথে, বিনা খরচে তাদের ঘরে আলো পৌঁছে দেয়া। প্রথমে বস্তির এক রিকশাচালক মামুনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ৩/৪টা বাড়িতে তাদের টিনের চাল ফুটো করে প্লাস্টিকের বোতল বসিয়ে দেই। কাজটা সহজ ছিল না। যখনই আমরা বললাম যে টিন কেটে বোতল বসাবো, তখন সবাই যেন পারলে আমাদের মারতে আসে। তাদের ধারণা ছিল, তারা গরিব মানুষ হতে পারে, তবে বোতলের আলো দিয়ে সংসার চালানোর মতো এত দুরবস্থা নেই তাদের। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। তখন আবার বর্ষাকাল ছিল। সঠিক প্রযুক্তি তখনও ব্যবহার করতে পারিনি। বৃষ্টি যখন আসল তখন বোতল চুইয়ে পানি পড়া শুরু করল। বিরক্ত হয়ে তারা রাতে ফোন দিয়ে, হুমকি দিয়েছিল। ওই বস্তিতে এটা জনপ্রিয় করতে, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ডিপ্রজন্ম - ব্রিটিশ রানীর সম্মাননা অর্জনের অনুভূতি- সাজিদ ইকবাল- প্রথমত, পুরো বিষয়টি নিয়ে খুবই এক্সাইটেড । আমরা আজ মঙ্গলবারই যুক্তরাজ্যে রওনা হচ্ছি, ফিরব ঈদের পর ১৯ জুন রানীর হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেই। এবারের অর্জনটি নতুন করে কাজগুলো নিয়ে কাজ করার স্প্রীহা দিয়েছে। অনেক বড় গর্বের এবং তৃপ্তির সম্মাননা এটি। ডিপ্রজন্ম-২৯ জুন কি পরিধান করবেন, কিছু ঠিক করেছেন? সাজিদ ইকবাল- আমাদের বলে দেয়া হয়েছে হয় আনুষ্ঠানিক পোশাক অথবা নিজের দেশের সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন পোশাক পড়তে। আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছি, এমন সুযোগ হাতছাড়া করব না। গামছা কোটি পরব, সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে। ডিপ্রজন্ম - বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের পতাকা উড়াবেন ২৯ জুন, তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন- সাজিদ ইকবাল- যদি নিজের ওপর বিশ্বাস থাকে তাহলে সত্যি যে কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়। এটুকু পথ পাড়ি দিতে এবং রানীর এই সম্মাননা অর্জন করার পুরো পথটিতে হাজারো বাধা এসেছে কিন্তু থেমে থাকিনি, তাই বলতে পারি বাধায় পথচলা থেমে থাকা নয়। ডিপ্রজন্ম- রাহাত, অভিনন্দন। প্রথমেই আপনার সম্পর্কে জানতে চাই- রাহাত-আমি রাহাত হোসাইন। জন্ম, বেড়ে ওঠা দুটোই ঢাকাতে। আমি বিবিএ করেছি ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে আর এমবিএ করেছি এআইইউবি থেকে। ক্রিটিকালিংক-এ কাজ শুরু করেছি মার্চ ২০১৪ থেকে, পোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি এখানে। ডিপ্রজন্ম- ক্রিটিকালিংকের কাজ সম্পর্কে বলুন রাহাত- ক্রিটিকালিংক প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে অমুনাভোগী সামাজিক ব্যবসায় যেটি কিনা দুর্ঘটনায় প্রাথমিক সেবায় সবচেয়ে দ্রুত কাজ করার জন্য শুরু হয়। ক্রিটিয়ালিংক আধুনিক মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে দ্রুত সেবাগ্রহীতার নিকট পৌঁছাতে। দুর্ঘটনায় আহত মানুষের জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্রিটিকালিংক। এই সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার তরুণ। শুধু চিকিৎসাসেবাই নয়, শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক নানা কাজও করে থেকে ক্রিটিকালিংক। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের একটা দিনের কথা। ‘সেদিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আয়োজন করেছিল প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর। সেখানেই পরিচয় হয় মার্কিন তরুণী জেনিফার ফেরেলের সঙ্গে।’ আমি ও জেনিফারের এক হওয়ার কারণ, তাদের দু’জনের আগ্রহের বিষয় একই। কয়েক মাস পর তারা সিদ্ধান্ত নেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরী ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হার কীভাবে কমিয়ে আনা যায়Ñ তা নিয়ে কাজ করার। এরপর জেনিফার ফেরেল আমাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ক্রিটিকালিংক। জেনিফার ফেরেল এখন ক্রিটিকালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ডিপ্রজন্ম - ক্রিটিকালিংকের অর্জনগুলো সম্পর্কে জানতে চাই- রাহাত -এর আগে, ক্রিটিকালিংকের তৈরি করা মোবাইল এ্যাপ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত ‘জাতীয় মোবাইল এ্যাপি কেশন পুরস্কার ও ডেভেলপার সম্মেলন ২০১৫’-এ প্রথম স্থান অর্জন করে ‘স্বাস্থ্য’ বিভাগে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্বীকৃতিটাও পেয়েছে গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনে। সেখানে ১৭৮টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই উদ্যোগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘স্বাস্থ্য’ বিভাগে। ডিপ্রজন্ম - ক্রিটিকালিংকের সেবাগ্রহণের পদ্ধতি কেমন? রাহাত-সেবা দেয়া হয় দুইভাবে। ক্রিটিকালিংকের কল সেন্টারে ফোন করে (০৯৬৭৮৭৮৭৮৭৮) এবং ক্রিটিকালিংক এ্যাপের মাধ্যমে। এ্যাপের ক্ষেত্রে এ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ক্রিটিকালিংক (ঈৎরঃরপধষরহশ) এ্যাপ নামিয়ে শুরুতেই নিবন্ধন করতে হবে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে। এরপর এ্যাপটিতে ঢুকলেই কল করা যাবে সাহায্যের জন্য। দুর্ঘটনার তথ্য জানানোর জন্য ‘রিপোর্ট এ্যাকসিডেন্ট’ বিভাগে গিয়ে তথ্য দিতে হবে। সাহায্য চাওয়া ব্যক্তি নিজেই আহত নাকি প্রত্যক্ষদর্শী, কীভাবে আহত হয়েছেনÑ মূলত এ ধরনের তথ্যই জানাতে হবে। ঘটনাস্থলের ঠিকানা জানা না থাকলেও সমস্যা হবে না। গুগল ম্যাপসের সাহায্যে খুঁজে পাওয়া যাবে কোন জায়গা থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এরপর বার্তা চলে যাবে ক্রিটিকালিংকের স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে। এ্যাপটির ‘ফার্স্ট এইড টিপস’ বিভাগেও জানার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক অবস্থায় কী চিকিৎসা দেয়া হবে। এ্যাপ দিয়ে কাছের থানাতেও জানানো যাবে দুর্ঘটনার খবর। একই সঙ্গে জানা যাবে সবচেয়ে কাছে কোন হাসপাতাল রয়েছে। এ্যাপ নামানোর ঠিকানা : মড়ড়.মষ/জয়ষহংস ডিপ্রজন্ম - ব্রিটিশ রানীর সম্মাননা অর্জন, অনুভূতি- রাহাত-যখন আমাকে প্রথম জানানো হয় বিশ্বাস করতে পারিনি আসলেই এ্যাওয়ার্ডটা পেয়েছি। ব্রিটিশ রানীর কাছ থেকে এ্যাওয়ার্ড নেয়া, তার সঙ্গে দেখা করা এর থেকে বেশি খুশির আর কি হতে পারে! নিজের দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আর গৌরব কাজ করে। যখন থেকে এ্যাওয়ার্ড পেয়েছি ঘোষণা হলো তখন থেকে কখন সেটা গ্রহণ করতে যাব তা নিয়ে উত্তেজনা কাজ করছে। ডিপ্রজন্ম-বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবেন ২৯ জুন, তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন- রাহাত-তরুণদের উদ্দেশে একটা কথাই বলব, জীবনে যাই করি আমরা, ধৈর্য কখনও হারানো যাবে না। এ দুটোর সমন্বয় থাকলে জীবনে এক না এক সময় সাফল্য আসবেই।
×