ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৩০ পরিবারের চিকিৎসা করেন আত্মানন্দ ব্রহ্মচারী

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৬ মে ২০১৭

১৩০ পরিবারের চিকিৎসা করেন আত্মানন্দ ব্রহ্মচারী

আশ্রম মানে আজীবন পরহিতার্থে সর্বাঙ্গীণ শ্রম প্রদান। সনাতন ধর্মে সেইটাই আশ্রম। ‘ঈশ^র পরম কৃষ্ণ সচ্চিদান্দ বিগ্রহ অনাদিরাদি গোবিন্দ সর্বকারণের পরম কারণ’ স্রষ্টার নামে বিশ^বাসী সুখী হোক ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি। বিশে^র সকল প্রাণের মঙ্গল প্রার্থনার স্থানই আশ্রম। পূর্বতম মণিঋষি মহাত্মাগণের ধ্যান-ধারণ সাধন ভজনের স্থানকে প-িতরা আশ্রম বলেন। অনেকে প্রশ্ন রাখতে পারেন, সেবাশ্রম কেন? যিনি বিশ^ স্রষ্টার গুণকীর্তন ও সেবাপরায়ণ হয়ে অবস্থান করেন, সেই স্থানকে আশ্রম তথা সেবাশ্রম বলা হয়। জীব ও আত্মার পরমাত্মার সেবায় নিয়োজিত স্থানকেও আশ্রম মনে করেন। পূর্বতম সাধু মহাত্মাগণ সন্যাস ধৈব জ্ঞানপ্রাপ্তির স্থানও আশ্রম নামে খ্যাত। অনাথ শরণার্থীকে অন্ন, বস্ত্র, সৎজ্ঞান ও চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তির স্থানকে আশ্রম রূপে ভাবেন। সনাতনী বৈষ্ণব সাধু, গিরি, পুরি, ভারতী, সকল সম্প্রদায় ইষ্টদেবের পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার স্থানকে আশ্রম বলা হয়ে থাকে। সর্বজীবের মিত্র সমদর্শী হয়ে যথাস্থানে আশ্রয় নিয়ে কর্ম করেন, সেইটাই আশ্রম। বৈদিক ধর্মীয় মতে বলা হচ্ছে সত্য, ত্রেতা দ্বাপরে কলিতে নিত্যানন্দ প্রভু, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভ,ু অদৈত প্রভ,ু রাজা শিবি হরিশচন্দ্র, সম্রাট ভরট, রাম লক্ষ্মণ কৃষ্ণ বলরাম সবার জ্ঞানার্জন জাগতিক দুঃখ-দুর্দশা নিবারণ হওয়ার স্থানও আশ্রম। নিজের পবিত্র সংসারও আশ্রম, দয়া করে ভুলে যেও না। আদি যুগে উপাসনালয়কেও আশ্রম বলত। পর্যটন শহর কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কয়েকটি আশ্রম রয়েছে। তার মধ্যে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন টেকনাফের হ্নলা নাটমুরা পাড়ায় অবহেলিত আশ্রম দেখলে যে কোন দয়ালু ব্যক্তির মন মোমের মতো গলে যাবে। অত্যন্ত গরিব হিন্দুদের বসতি হচ্ছে নাটমুরা পাড়ার জালিয়াপাড়া। নাফনদীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ১৩০টি পরিবারের হিন্দুপাড়াটির অবস্থান। লোকসংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। চলাচলের ভাঙ্গা ছোট রাস্তা রয়েছে হিন্দুপাড়ার মাথা পর্যন্ত। নিজেদের তৈরি চলাচল অযোগ্য চিকন মেঠোপথ ধরে যেতে হয় নাটমুরাপাড়া শ্রীশ্রী রাধাকৃঞ্চ সেবাশ্রমে। শ্রীল স্বামী আত্মানন্দ ব্রহ্মচারী (বাবাজি) সনাতনী বৈষ্ণব সাধু, গিরি, পুরি, ভারতী, সকল সম্প্রদায় ইষ্টদেবের পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার এক ব্যক্তি আশ্রমে বসে ১১ শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ লোকজনকে শিক্ষা দিচ্ছেন। বিশ^ স্রষ্টার গুণকীর্তন ও সেবাপরায়ণ হয়ে আত্মানন্দ ব্রহ্মচারী শুধু ওই ১১ জনকেই নয়, ১৩০ পরিবারের লোকজনকে ফ্রি ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, এ পাড়ার লোকজন অত্যন্ত গরিব। আশ্রম পরিচালনার জন্য কমিটি থাকলেও তারা গরিব হওয়ায় আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারেন না। তারপরও শ্রম-মজুরি দিয়ে বা সাধ্যমতো সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আত্মানন্দ ব্রহ্মচারী আরও বলেন, ১১জনের পেছনে প্রতিমাসে অন্তত ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচার, পূজা অর্চনা ও ভক্তদের দেয়া অর্থে এ আশ্রমের ব্যয় মেটানো হচ্ছে। স্বামী আত্মানন্দ বাবাজি টেকনাফ পৌর এলাকার পেঠান চন্দ্র ধরের সন্তান। আট বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর ব্রাহ্মণ বাণশ্বর আচার্য্যরে কাছে পড়া-লেখা শুরু করেন। টেকনাফ মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন শ্রী চৈতন্যদেবের জীবনের প্রতি লক্ষ্য করে পারমার্তিকভাবের উদয় হয়ে বৈঞ্চব, সাধু, ফকির, মাওলানা ও ভান্দদের সঙ্গ পেতে ছুটে যান। ‘জীব দয়া, নামে রুচি, বৈঞ্চব সেবন-ইহা হইতে ধর্ম আর নাহি সনাতন’ শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের এ বাণীর মাধ্যমে তিনি অবগত হন, প্রথমে জীবে দয়া। এরপর জীবকে সেবা করার জন্য ক্ষুদ্র সংসার ত্যাগ করে তিনি বৃহৎ সংসার পরিচালনার সঙ্কল্প করেন। তেরো বছর বয়সে প্রাণী হত্যা ও আমিষ খাবার বর্জন করে ১৫ বছর বয়সে স্বপ্নযোগে ব্যসমুনির কাছে মন্ত্র পান। ১৮ বছর বয়সে শ্রীপাদ নিত্যানন্দ গোস্বামীর সাক্ষাত হলে তিনি বৈরাগ্য ধর্ম গ্রহণের পরামর্শ দেন। -এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে
×