ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিক্রমপুরের বটতলার মেলা

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২২ এপ্রিল ২০১৭

বিক্রমপুরের বটতলার মেলা

বৈশাখী মেলা। আসছে ১৫ বৈশাখ কয়কীর্তন বটতলায় ইতিহাসখ্যাত বার্ষিক গলইয়া মেলা। আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। ১৫ চৈত্র থেকে শ্রীনগর থানা এলাকাব্যাপী মাইকে ঘোষণা হয়েছে, হাটে-বাজারে ঢুলি ঢোল পিটিয়ে জনগণকে আগাম দাওয়াত দিচ্ছে। বিক্রমপুর পরগনার শ্রীনগরের একাধিক স্থানে মেলা হলেও কয়কীর্তন বটতলার ইতিহাসখ্যাত মেলার আকর্ষণ ভিন্ন রকম। বিক্রমপুরে মেলার সুপরিচিত নাম গলইয়া। প্রায় ২০০ বছর পূর্বে জমিদার কামাখ্যা দাস চৌধুরী তার স্ত্রী লাবণ্য প্রভা দেবীর ইচ্ছানুসারে মেলা উদ্বোধন করেন। ২০০ বছর পুরনো বটবৃক্ষের পাদদেশে বিশাল মাঠে সে থেকে গলইয়া হয়ে আসছে। পরবর্তীতে মরহুম আপ্তাজদ্দিন ফকির গলইয়া পরিচালনা করার পরবর্তীতে মরহুম সেলিম খানের উৎসাহ-উদ্দীপনায় মেলার সৌন্দর্য ও প্রসার বৃদ্ধি পায়। মেলা শুরু হওয়ার সাত দিন পূর্ব থেকে বট ও পাকইড় বৃক্ষ তথা স্বামী-স্ত্রীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সিঁদুরের ফোঁটায় রাঙ্গিয়ে দিয়ে হিন্দু মহিলারা উলুধ্বনি দেয়। প্রণাম জানায়। আলিঙ্গন হয় ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে। হিন্দু প্রসিদ্ধ ঘনবসতি গ্রাম কয়কীর্তন। এখানে ভোটারের সংখ্যা ৮০০। এলাকার জনপ্রতিনিধি দীনেশ চন্দ্র দাস। কালের বিবর্তনে নামপ্রসিদ্ধ বটতলার পাদদেশের বিশাল পতিত ভূমির রকম পরিবর্তন হওয়ার কারণে গলইয়ার স্থান পরিবর্তন হয়ে কিছুটা দূরে কালী মন্দির বিশাল মাঠে ইতিহাসখ্যাত বৈশাখী মেলা বসে আসছে। মেলা গণজোয়ারে পরিণত হয়। মেলা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শ্রী নির্মল চন্দ্র সরকার প্রয়াত পিতা প্রাণকুমার সরকারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রাণের মেলা, আনন্দের মেলা। পুতুল নাচের মেলা। সারি সারি আসনে বসে চরক গাছে বা পালকিতে বসে আকাশে ওঠানামা করে শিশু, যুবক-যুবতীরা। বাহারি রকমের বাঁশির সুরে বেচা-বিক্রির ধুম। মাটির হাঁড়ি-পাতিল, সংসারের প্রয়োজনীয় টুকিটাকি, খেলনা, বেতের ঝুড়ি, মোড়া, বেলুন, পিঁড়ি কত কি। বেঁদে মহিলারা গায়ের বধূদের হাতে পরিয়ে দিচ্ছে নানা রঙ্গের চুড়ি। আলতা, স্নো, পাউডার, মাথার খোঁপা, চশমার দোকানে ভিড়। পছন্দের মিষ্টি-দধি, রসগোল্লা, বাহারি রকমের নামকরা সুস্বাদু মিষ্টি বিক্রি হয় প্রচুর। দূর-দূরান্ত হতে মেলায় আসে হিন্দু-মুসলমান সকল পেশা-শ্রেণীর লোকজন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ প্রতিবছর মেলা উদ্বোধন করে থাকেন। বানরের খেলা, সাপের খেলাÑ ভিড় জমে শিশুদের। মেলাকে কেন্দ্র করে সারারাত চলে পালা গান। নামী-দামী বয়াতিদের আসরে হাজার হাজার লোকের সমাগম। আবেদ আলী, আলী হোসেন বয়াতির মরমি কণ্ঠে জারি গান শুনে হাসি-মুখে তৃপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরে নারী-পুরুষ, একদিকে বৈশাখী মেলা অন্যদিকে কালী পূজা। আনন্দের জোয়ারে মিলিত হয় হিন্দু-মুসলমান সবাই। তৈরি করা হয় মঞ্চ। সাংস্কৃতিক বিষয়াদি নিয়ে চলে আলোচনা। বঙ্গের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক স্যার জগদীশ চন্দ্রের ইতিহাসে সমৃদ্ধ হন সবাই। বিক্রমপুরের ইতিহাসখ্যাত বটতলার বৈশাখী গ্রামীণ মেলা এক কথায় সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মেছের আলী শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ
×