ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

আবারও দেশ বিক্রির সেই পুরনো কাসুন্দি

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১০ এপ্রিল ২০১৭

আবারও দেশ বিক্রির সেই পুরনো কাসুন্দি

আগেই জানা ছিল, গল্পটা আবার তিনি বয়ান করতে শুরু করবেন। কারণ, এই গপ্পো কথনে তিনি প্রাণ ফিরে পান। উছলে ওঠেন, উথলে ওঠেন। কণ্ঠের স্বর উচ্চনিনাদে তুলে তিনি আবার সেই স্ব-নির্মিত কেচ্ছা সামনে এনেছেন। কল্পকাহিনী ছড়িয়ে শ্রোতাদের মন জয়ের পুরনো এলেম আবার ঝালিয়ে নিতে তিনি বেশ রণরঙ্গিনী ভাব ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। এনেছেনও প্রায়। এই যে এ বাংলাদেশ, যে দেশে তিনি জন্মগ্রহণ না করলেও দেশ নিয়ে যে দারুণ ভাবনা তাকে তাড়িত করে, তা বোঝানোর জন্য নানা ‘ওজিফা’ বয়ান করতে পিছপা হন না। যে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিতে অনাগ্রহী ছিলেন, যোদ্ধা সেনা স্বামীর ডাকেও সাড়া দেননি। আলবদরের পৃষ্ঠপোষক জামায়াতী নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের মতো হয়ত একাত্তরেও তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশ ভারত হয়ে যাবে। ভারতীয়রা দখল, করতে চায় তার সাধের ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’। যে পাকিস্তানকে তিনি ভালবাসতেন করাচী, কাকুল, রাওয়ালপি-িতে সেনা স্বামীর সঙ্গে বসবাসকালে, সেই পাকিস্তানই যদি আর না থাকে, তবে তিনি কোথায় দাঁড়াবেন। জামায়াতের সেই চেতনা থেকে তিনি সরে আসা দূরে থাক, জামায়াতীদের নেত্রীই বনে গেছেন। ম্যাডামের ‘দেশপ্রেমের’ ঝোলায় দেশ বিক্রির যে কিসসা ঘুমিয়ে ছিল, তা আবার তিনি প্রকাশ্যে এনেছেন। এবার জোর পেয়েছেন গল্প কথনে। যখন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হলো। বিষয়টিকে তিনি ‘দেশনেত্রী’ হিসেবে কী করে মেনে নেবেন? এ যে তার জন্য সহ্যাতীত। বিক্রি যদি করতে হয় তবে তিনি নিজেই করবেন। চেষ্টাটা তিনি তার ক্ষমতাসীন থাকাকালে করেছিলেন বলেই বুঝতে পারেন, দেশও বিক্রি করা যায়। পাকিস্তান এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ভারতের সাত রাজ্যের স্বাধীনতাও চেয়েছিলেন। সংসদে দাঁড়িয়ে এই স্বাধীনতার জন্য দলীয় মন্ত্রী, নেতারাও সোচ্চার হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সেসব বিচ্ছিন্নতাবাদীকে স্বাধীনতাকামী আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। তাদের অর্থ ও অস্ত্রবলে বলীয়ান হওয়ার সব পদক্ষেপই নেয়া হয়েছিল। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় উলফাদের জন্য চালান করা দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ার পর কত রাঘববোয়াল যে জড়িত তা প্রকাশ হয়ে গেছে। সেই মামলা এখন শেষ পর্যায়ে। বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়া রীতিমতো মাতম তুলছেন, দেশ বেচা হয়ে গেছে। যেটুকু বাকি আছে, তা-ও নাকি বেচা হয়ে যাবে। মহা হৈ চৈ শুরু করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব তুলে দিয়েছেন ভারতের জিম্মায়Ñ এসব কথা বলতেও দ্বিধা করেননি অতীতে। আর এখন তো দেশই নেই তার আর। দেশ বিক্রি হলে সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষও বেচা হয়ে যাওয়ার কথা। বিক্রি হয়ে যাওয়া দেশে বসবাস করা তার জন্য নিশ্চয়ই হারাম। হালাল চিন্তা-ভাবনার মধ্য দিয়ে তিনি সব সময় যেতে চান বলেই, হারাম ক্রিয়াকলাপ না পসন্দ। সেই একাত্তর সালেই পাকিস্তানী হানাদার সেনারা যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতকারী’ বলেই ক্ষান্ত হতো না, ‘ভারতীয় চর’ উচ্চারণ করে বেশ জোশ পেতেন। পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতা সেই ১৯৪৭ থেকে চলে আসছে এবং এখনও চলছে। সেই নীতিতে আপ্লুত বিএনপি-জামায়াত ও পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতায় সম্পূরক নীতি অনুসরণ করে আসছে। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক জান্তা সরকার জেনারেল জিয়া ভেতরে ভেতরে ভারতের সঙ্গে আঁতাত করলেও প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতার জজবা তুলতেন। পঁচাত্তরের তেসরা নবেম্বর জেলহত্যা ঘটানোর আগে প্রচার করা হয়েছিল, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে জেল থেকে নেতাদের বের করে ক্ষমতায় বসাবে। আর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফ ও হায়দারকে ভারতীয় সমর্থক হিসেবে প্রচার করে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরপরই ভারত বিরোধিতায় একাট্টা হয়েছিল ভাসানী ন্যাপ, জাসদ, চীনাপন্থী এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ইসলামপন্থী দলগুলো। আজকে যেমন চীনা ও ইসলামপন্থী দলগুলো ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তির বিরোধিতায় একই কাতারে নেমেছে। একই বাক্য উচ্চারিত হচ্ছে তাদের কণ্ঠ হতে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভারতও বাংলাদেশের প্রতি ক্রমে বিরূপ হয়ে ওঠে জান্তা শাসকদের গণতন্ত্র ও জনগণবিরোধী অবস্থান ও পাকিস্তানী ভাবধারা ফিরিয়ে আনায়। জিয়ার সময় থেকেই বাংলাদেশে আইএসআইয়ের ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরশাদ-খালেদার আমলে তা আরও শক্তিশালী হয়। তারা পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণসহ অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা তৈরি করা হলে নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বহু লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যায় এবং সেখানে বছরের পর বছর শরণার্থী হিসেবে কাটায়। তাদেরই একটি বড় অংশ প্রশিক্ষণ নিয়ে শান্তিবাহিনী নাম ধারণ করে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে আসে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি হওয়ার পর সব শরণার্থী ফিরে আসে এবং তাদের পুনর্বাসন করা হয়। আর সশস্ত্র সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে সামরিক রসদসহ। সারা বিশ্বকে বিস্মিত করে শেখ হাসিনা পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি নেত্রী চুক্তির বিরোধিতা শুধু নয়, জজবা তুললেন এই চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও ফেনী ভারতের অংশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভারত গ্রাস করেছে। এই প্রলাপ চালানো কালেই তিনি গাড়ির বহর নিয়ে ফেনী-চট্টগ্রাম সফরও করেছেন। ক্ষমতায় এসে সেই চুক্তি বাতিলও করেননি। জিয়া যেমন ফারাক্কাবিরোধী কথিত লং মার্চের নামে ভাসানীকে মাঠে নামিয়ে, ভারত সীমান্তমুখী মিছিল পরিচালনা করেছিলেন, বেগম জিয়াও তার চেয়ে কম যাননি। ফলে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কোন সুরাহা হয়নি। ভারতের প্রতি গোপনে আনুগত্য প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতা চাগাড় দিয়ে রাখতেন। এতে জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং পাকিস্তান প্রীত হতো। দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ পাকিস্তান কালের মতো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল জিয়ার কাল থেকে। এরশাদ ও খালেদা একই নীতি অনুসরণ করেছেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে বেগম জিয়া ও জামায়াতীরা দেশবাসীকে এ কথা শুনতে বাধ্য করেছে যে, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে।’ ২০০৯ সালের নির্বাচনকালেও একই কল্পকাহিনী ছড়িয়েছেন ঝুলি থেকে বের করে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ‘হিন্দুরা ভারত থেকে এসে আওয়ামী লীগকে ভোট দিচ্ছে’ বলে দায়িত্বহীন বক্তৃতা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিহংসায় তিনি আকীর্ণ হয়ে আছেন এমনভাবে যে, মিথ্যাচারের মধ্যে তিনি এক ধরনের সান্ত¡না ও আত্মতৃপ্তি খুঁজে পান। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে হিন্দু নিধনও বিতাড়নের কাজটি তিনি চালিয়েছিলেন নির্মমভাবে। দেশকে নরকে পরিণত করেছিলেন। ভারত সফরে গিয়ে বেশ উষ্ণ সংবর্ধনা পেয়ে তিনি নিজেকে এমনভাবে ধন্য করেছিলেন যে, গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতকে বলারও সাহস পাননি। দেশে ফিরে এসে সংসদে বলেই ফেলেন যে, গঙ্গার পানি নিয়ে কথা বলতে ভুলেই গেছেন। তার জন্য এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে যতই বাক্যবাণ ছোড়েন না কেন, আদতে ছিলেন ভারতের প্রতি নমনীয় ও অনুগত। ভারত অখুশি হতে পারে, তাই ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ভারত বিরোধিতাকে ঝুলিতে রেখে দিয়েছিলেন। ছিটমহল সমস্যার কথা তার জানা ছিল না বলে কখনই সে বিষয়ে সামান্য ‘টু’ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি। তবে ভারত বিরোধিতার জজবা তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজটি সুচারুরূপেই করতে পেরেছিলেন। অথচ ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান অমীমাংসিত বিষয়গুলোর একটারও জট খুলতে পারেননি। বরং পাকিস্তানীদের পরামর্শে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি স্থাপন ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। বেগম জিয়া তখন পূর্বমুখী পররাষ্ট্র নীতি চালুর নামে থাইল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রাকে নিয়ে বিমান ভ্রমণ করেই কূটনৈতিক বিজয় সম্পন্ন করেছিলেন। এই নীতি কোন ফল বয়ে আনেনি। আনার কথাও নয়। ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ শেখ হাসিনারই নেয়া। খালেদা জিয়া এ ক্ষেত্রে তার শাসনামলে কোন উদ্যোগ নিতে পারেননি, ভুলে যাওয়ার কারণে হয়তো। শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের আগেই জামায়াতের বড় শরিক বিএনপি নেতারা জজবা তোলে যে, সফরের আগেই চুক্তির বিষয় প্রকাশ করতে হবে। আর চুক্তি হওয়ার পর এখন বেগম জিয়া দেশ বেচা প্রায় শেষ বলে কল্পকাহিনী প্রচার শুরু করেছেন। তিনি বোধহয় ভুলে গেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য কোন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক এই প্রথম নয়। এই কর্মটি শুরু করেছিলেন তিনিই। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথ প্রদর্শকের আখ্যা পেতে পারেন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে চীন সফরকালে বেগম জিয়া চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি সই করেছিলেন। এটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতের সহযোগিতার কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। এখন আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দল চিৎকারও করেনি যে, চীনের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। বরং এই চুক্তির আলোকে ২০১৪ সালে তৎকালীন চীনা জেনারেল জুকি লিয়াংয়ের ঢাকা সফরের সময় চারটি চুক্তি সই হয়েছিল। আবার ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরের সময় রাশিয়ার সঙ্গে একটি অস্ত্র ক্রয় চুক্তি সই হয়েছিল। এ খাতে রাশিয়া ঋণ দিয়েছিল এক বিলিয়ন ডলার। এ অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ বিমান, বিটিআর-৮০, ব্রেম কে ও বিএমএম ধরনের আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার এবং এম-আই ১৭১ ধরনের তিনটি হেলিকপ্টার কিনবে। তখন কিন্তু দেশ বেচার কথা শোনা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় নৌবাহিনীতে এসডব্লিউএডিএস ইউনিটও স্থাপন করা হয়েছে। তখনও বেগম জিয়া আপত্তি তোলেননি। এখন ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইকে বেগম জিয়ার কাছে দেশ বেচা মনে হচ্ছে। এরই আলোকে প্রশ্ন তোলা যায়, বেগম জিয়া এর আগে চীনের কাছে দেশ বিক্রি করেছিলেন কি না? সামরিক চুক্তি বা সামরিক সহযোগিতা দিয়ে একটি দেশকে যে কব্জা করা যায় না, বেগম জিয়ার চীন চুক্তি তা প্রমাণ করে। কিন্তু আজকে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তি হতো তবে বেগম জিয়া বলতেন, আওয়ামী লীগ সঠিক কাজ করেছে। ক্ষমতায় আবার এলে তিনি হয়তো এই কাজটিই করবেন। চীনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করতে না পারার দুঃখ তার থেকেই যাবে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সমঝোতা কী জিনিস, তা ক্ষমতা দখলদার জেনারেলের স্ত্রীর অবহিত না হওয়ার কথা নয়। খালেদা ও তার অনুগত সুশীল এবং বুদ্ধিজীবীরা, আওয়ামী লীগকে ভারতের তাঁবেদার দালাল বলে এই স্বস্তি খুঁজে পান যে, তারা পাকিস্তানের হয়ে গালাগাল করতে পারছেন। সামরিক দিক থেকে বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে প্রতিমুহূর্তে। যা খালেদার দুই চোখের বিষ। আর এই বিষ যে তিনি মনেও লালন করেন, তা প্রকাশ করেছেন। চুক্তি পরবর্তী ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় এই চুক্তি যে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্নের কারণ হবে, সে কথাও বলেছেন। এমনকি ভারতও তাকে বাচাতে আসবে না। তার এই ভাষ্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্টকে মনে করিয়ে দেয়। ক্ষমতাসীন সরকারের তত্ত্বাবধানে খালেদাপুত্র ও মন্ত্রীরা এই গ্রেনেড হামলা করেছিল হাসিনাকে হত্যার জন্য। ব্যর্থ হয়ে খালেদা বলেছিলেন, হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেকে হত্যা করার জন্য। এই বক্তব্য কোন বিকারগ্রস্তের নয়, খোদ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদার। এমনও বলেছেন, চুক্তি করে অতীতে কেউ রক্ষা পায়নি। হতেও পারে। চীনের সঙ্গে চুক্তির পর ২০০৬ সালে সেই যে তিনি ক্ষমতা হারালেন, আজ দশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা থেকে দূরে। সংসদেও নেই প্রতিনিধিত্ব। খালেদার ঝুলিতে দেশ বিক্রি করার উদাহরণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন। করতেই পারেন। দেশ যে বেচা যায় সেসব রাজা-বাদশার যুগে ছিল। লাখেরাজ সম্পত্তি হিসেবে কতজন জমিদার হলো। আবার কত জমিদার তার জমিদারিত্ব বেচে দিয়েছে সেসব ইতিহাসে আছে। ম্যাডামের ঝুলিতেও তা থাকতে পারে। বেগম জিয়া যদি চুক্তিগুলো পাঠ করে মর্মাথ উদ্ধার করতেন, তবে দেখতেন চুক্তিতে যেসব সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে, তা বর্তমানে বিদ্যমান। শুধু সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোতে নিয়ে আসার জন্য চুক্তি করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসার পর বেগম জিয়া তাকে যে ফর্দ দিয়েছিলেন, তাতে কি কি বেচতে চান, সে তথ্য ছিলো কিনা, তা তিনিই জানেন। শেখ হাসিনা এই যে ‘সব বিক্রি করে দিয়েছেন’, তা শুধু খালেদা ও তার অনুগতরাই টের পান। কারণ বেচার কাজটি তারা ভাল বোঝেন। আর এই বোঝার বুঝি শেষ নেই। বেগম জিয়া যেসব বাক্য উচ্চারণ করেছেন, প্রলাপ বলে তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রতিহিংসার অন্ধ প্রকোষ্ঠে বসে তিনি যা বলছেন, তা গোয়েবলসকে ডিঙ্গাতে কসুর করেনি। দেশ বিক্রির এই বস্তা পচা গল্প আরও অনেকদিন তিনি শুনিয়ে যাবেন। যান, তবে হাসিনার বেঁচে থাকা যে তার ওপর নির্ভর করে, সেটাই সংশয়ের কারণ।
×