ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিন শেষে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ২৩৮/৭

কলম্বোয় শততম টেস্টে শুরুটা দুর্দান্ত বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৬ মার্চ ২০১৭

কলম্বোয় শততম টেস্টে শুরুটা দুর্দান্ত বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শততম টেস্টের রোমাঞ্চ বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। একাদশে থাকা ক্রিকেটাররা তো পুলকিত। তাতে এ টেস্টের শুরুটাও বাংলাদেশ করল দুর্দান্ত। প্রথমদিনে শ্রীলঙ্কা ২৩৮ রানের বেশি করতে পারেনি। ৭ উইকেটও হারিয়েছে। কলম্বোর পি সারা ওভালের উইকেটের যে চরিত্র তাতে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ারই কথা। কিন্তু কোন দল টসে জিতে যদি ব্যাটিংটা নেয়। আর যদি সেই ব্যাটিং ভাল হয়, তাহলে জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। শ্রীলঙ্কা যেন সেই লক্ষ্যেই আগে ব্যাটিং করতে নামল। তাতে করে দিনেশ চান্দিমালের (৮৬*) অসাধারণ ব্যাটিংয়ে প্রথমদিনেই অনেকটা দূর এগিয়ে গেল। সেই এগিয়ে যাওয়াতেও অবশ্য দিনটি শ্রীলঙ্কার হতে পারেনি। কারণ উইকেট যে ৭টি পড়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ যদি প্রথম ইনিংসে ভাল করতে পারে, তাহলে এই টেস্ট থেকে ভাল কিছু আশা করা যায়। শততম টেস্টে এসে বাংলাদেশ দলে আরেক ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেক হলো। তিনি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ভাগ্যবান ক্রিকেটারই বলতে হয় মোসাদ্দেককে। লিটন কুমার দাস ইনজুরিতে পড়ে যাওয়ায় একাদশে মোসাদ্দেকের স্থান হয়। তাও শততম টেস্টটিতে এসেই। ক্রিকেটের ইতিহাসে সৈকত নবম ক্রিকেটার, যিনি কিনা শততম টেস্টে অভিষেক ম্যাচ খেলছেন। বাকি ৮ জনের মধ্যে তিনজনই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার। তারা হলেন বার্লো কারক্রিক, সিড ইমেরি, ক্লাউডি জেনিংস। এছাড়া জিম্বাবুইয়ের কার্ল মুম্বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের টনি হোয়াইট, শ্রীলঙ্কার দিলহারা ফার্নান্দো, ইংল্যান্ডের জ্যাক শার্প আর দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক চিথাম নিজ নিজ দেশের শততম টেস্টে অভিষেক করেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করা সৈকত জানিয়েছিলেন, ‘টেস্টে সুযোগ পেলে বড়কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করব।’ এখন তার সুযোগ এসেছে নিজেকে প্রমাণ করার। বাংলাদেশ দল শুধু এ একটি পরিবর্তন নয়, সব মিলিয়ে চারটি পরিবর্তন নিয়ে শততম টেস্ট খেলতে নামে। লিটন না থাকায় আবার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কাঁধেই উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব পড়ে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শততম টেস্টে থাকছেন না। তা সবারই জানা। তার পরিবর্তে আবার একাদশে সুযোগ পান সাব্বির রহমান রুম্মন। বাজে ফর্মের কারণে একাদশ থেকে ছিটকে পড়েন মুমিনুল হকও। স্পেশালিস্ট টেস্ট ব্যাটসম্যান মনে করা হয় মুমিনুলকে। কিন্তু ইদানীং স্পেশাল কিছু করে দেখাতে পারছেন না। আর তাই একাদশ থেকে মুমিনুলকে বাদ দেয়া হয়। সেই বাদ পড়ার সম্ভাবনা আগেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু এমন এক ম্যাচে বাদ পড়লেন, যেটি বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচ। মুমিনুলের পরিবর্তে একাদশে জায়গা করে নেন ইমরুল কায়েস। আরেকটি পরিবর্তন হয়। গল টেস্টের পেসার তাসকিন আহমেদকে বসিয়ে একাদশে নেয়া হয় স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। তার মানে, শততম টেস্টের ১১ ভাগ্যবান ক্রিকেটার হচ্ছেন- তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, শুভাশীষ রায় ও মুস্তাফিজুর রহমান। তিন স্পেশালিস্ট স্পিনার ও দুই পেসারের সঙ্গে ৬ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। বোলাররা দুর্দান্ত বোলিংও করেন। মুস্তাফিজুর রহমান শুরুতেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন। দিমুথ করুনারতেœকে আউট করে দেন। এ মুহূর্তে মুস্তাফিজ ও মেহেদী হাসান মিরাজ হচ্ছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বয়সভিত্তিক দল থেকেই একসঙ্গে খেলেছেন। মুস্তাফিজ পেস আক্রমণে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রথম ভরসা হলো স্পিনে মিরাজ হচ্ছেন প্রথম নির্ভরতা। মুস্তাফিজের পর শ্রীলঙ্কা শিবিরে দ্বিতীয় আঘাতটি করেন মিরাজই। গল টেস্টের ব্যাটিং নায়ক কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরান। এরপর থারাঙ্গাকেও যখন আউট করে দেন মিরাজ, তখন ৩৫ রানে শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেটের পতন ঘটে। তাসকিনকে বসিয়ে রেখে পেসার হিসেবে শুভাশীষকে একাদশেই রাখা হয়। গুনারতেœকে আউট করে দিয়ে সেই প্রতিদানও দেন শুভাশীষ। ৭০ রানেই ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায় শ্রীলঙ্কার। বিপদে পড়ে লঙ্কানরা। ঠিক এমন সময়ই পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে সাদা-মাটা জুটি দাঁড় হয়ে যায়। ব্যাট হাতে চান্দিমাল যেন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কোনভাবে এই ব্যাটসম্যানকে আউট করা যায়নি। পঞ্চম উইকেটে চান্দিমালের সঙ্গে ডি সিলভার ৬৬ ও ষষ্ঠ উইকেটে চান্দিমালের সঙ্গে ডিকওয়েলার ৪৪ রানের জুটি শ্রীলঙ্কাকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে ১৮০ রানে নিয়ে যায়। এই সময়ে তাইজুল ও সাকিবও একটি করে উইকেট নেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ২০০ রানও হয়ত করতে পারবে না শ্রীলঙ্কা। কিন্তু প্রথমদিনে ২৩৮ রান করে ফেলে। মুস্তাফিজের কাটারে ১৯৫ রানে গিয়ে পেরেরার আউটে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেট হারালেও অষ্টম উইকেটে গিয়ে চান্দিমালের সঙ্গে অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ হাল ধরেন। তাতে করে ৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও হয়। ২১০ বল খেলে ৪টি চারে ৮৬ রান করে অপরাজিত আছেন চান্দিমাল। হেরাথ অপরাজিত ১৮ রান করে চান্দিমালকে সঙ্গ দিয়ে চলেছেন। প্রথমদিনে আরও ১৭ ওভার খেলার বাকি ছিল। কিন্তু আলো স্বল্পতায় দিনটি শেষ করতে বাধ্য হয়েছেন আম্পায়াররা। আজ দ্বিতীয়দিনে চান্দিমাল ও হেরাথ ব্যাট হাতে নামবেন। শততম টেস্ট ম্যাচটি শুরুর আগেই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা স্মরণীয় সংবর্ধনা পান। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি) থেকেই মিলল সংবর্ধনা। সংবর্ধনা দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। বিসিবির পক্ষ থেকে ক্রিকেটারদের উপহার দেয়া হয়েছে নীল রঙের ব্লেজার। যেখানে লেখা ছিল, ‘১০০ঃয ঞবংঃ, ইধহমষধফবংয ঈৎরপশবঃ ইড়ধৎফ’। এদিন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। সবচেয়ে বড় উপহার দিয়েছেন এসএলসির শ্রীলঙ্কান সভাপতি থিলাঙ্গা সুমাথিপালা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পুরনো ‘বন্ধু’ বিসিবি সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের স্বারক মেডেল পরিয়ে দিয়েছেন। যেখানে লঙ্কান ক্রিকেটের পক্ষ থেকে ‘ঈড়হমৎধঃঁষধঃরড়হ ঙহ ঞযব ঈবহঃঁৎু ঞবংঃ গধঃপয চষধুবফ ইু ইধহমষধফবংয.’ অভিনন্দনবার্তা লেখা ছিল। সংবর্ধনা শেষে বাংলাদেশের শততম টেস্টটি শুরু হয়। টেস্টটিতে শুরুটাও দুর্দান্তই করে বাংলাদেশ।
×