ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় হাজার এমপি, ৫৫ স্পীকার নিয়ে ১ এপ্রিল আইপিইউ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৫ মার্চ ২০১৭

দেড় হাজার এমপি, ৫৫ স্পীকার নিয়ে ১ এপ্রিল আইপিইউ সম্মেলন

এম শাহজাহান ॥ ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে যোগ দিতে দেড় হাজার বিদেশী অতিথি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ যাবৎকালের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন ঘিরে অতিথিদের কড়া নিরাপত্তা প্রদান, তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা এবং থাকার জন্য রাজধানীর অভিজাত ১৫টি হোটেল নির্ধারণ করা হয়েছে। আইপিইউ সদস্যভুক্ত ১৭১টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর কথা জানানো হবে বিদেশীদের। এবারের সম্মেলনে ২০৩০ মধ্যে স্থায়িত্ব উন্নœয়ন বা এসডিজি অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের অবস্থান তুলে ধরবেন পার্লামেন্টারিয়ানরা। এমডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারবাহিকতায় এসডিজি অর্জনে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে তা সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, আইপিইউ সম্মেলন সফল করতে সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রব হাওলাদার স্বাক্ষরিত চিঠি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিদেশীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে। এছাড়া এসডিজি অর্জনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কি পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চেয়েছে সংসদ সচিবালয়। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের পদক্ষেপ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার সাফল্যগাঁথা তুলে ধরা হবে সম্মেলনে। আইপিইউভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে এ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইপিইউ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আগামী ১ এপ্রিল। সম্মেলনে ১৭১টি দেশের ৫৫ জন স্পিকারসহ দেড় হাজারের বেশি সাংসদের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিইউর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার তিন বছর পর প্রথমবারের মতো আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ। সূত্রমতে, রাজনৈতিক ইস্যু, পার্লামেন্টারিয়ানদের একত্রে আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা ও কার্যক্রমের জন্য সুপারিশ তৈরিতে আইপিইউ একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। আগে এটিকে ইন্টার-পার্লামেন্টারি সম্মেলন বলা হতো। এ প্রসঙ্গে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলন। এ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ১৭২-১৭৩টি দেশের প্রতিনিধিদের আসার কথা রয়েছে। সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবেÑ এসডিজি বাস্তবায়ন, পার্লামেন্টারিয়ান ডেমোক্রেসি চর্চা, গণতন্ত্র সুসংহতকরণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা, ক্লাইমেট চেঞ্জ সম্পর্কে করণীয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য নিরসন, মানবাধিকার এবং সম্মেলনের বাইরে আন্তর্জাতিক বিষয় সমাধানে পার্লামেন্টের ভূমিকা। এসব বিষয়ে প্রতিটি অধিবেশনে সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও এবারের সম্মেলন নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, সম্মেলনে দেশের উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী পণ্যসামগ্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা তুলে ধরা হবে। আইপিইউভুক্ত দেশগুলো থেকে আগত অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত এ সম্মেলনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। একই সঙ্গে সেসব দেশে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সৃষ্টিসহ রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে। এসডিজি অর্জনে কর্মসূচী ॥ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করার কৌশল নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে রূপকল্প-২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। আর মাথাপিছু আয়ের উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এ জন্য এসডিজির লক্ষ্যসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েই প্রতিটি বাজেট দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়গুলো এবার আইপিইউ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও উপস্থাপন করা হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মকৌশল প্রণয়ন করবে সরকার। এর আগে এমডিজি অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। এদিকে, এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যসমূহ আগামী পনেরো বছরে পূরণ করা হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে অর্থায়ন। তবে এসডিজি বাস্তবায়নে এবার নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে চলতি বাজেটেও কিছু বাস্তবমুখী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসডিজি সম্পর্কিত খাতগুলোতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি এডিপি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নজর দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসডিজি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে বেসরকারী খাতে দ্রুত শিল্পায়ন হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার ভাতা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ব্যবসায়ীরা কর্মসংস্থান এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করছেন। আর এসব কারণে রূপকল্প-২১ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। সরকারের এই সাফল্য আইপিইউ সম্মেলনে তুলে ধরার মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। জানা গেছে, এসডিজি হলো গত ১৫ বছরে প্রচলিত এমডিজির সম্প্রসারিত ও হালনাগাদ রূপ। এতে টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ধনী এবং গরিব সকল দেশকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ। আর এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, ব্যয়সাধ্য ও টেকসই জ্বালানি, সবার জন্য কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো, বৈষম্য হ্রাসকরণ, টেকসই শহর ও সম্প্রদায়, সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, সমুদ্রের সুরক্ষা, ভূমির সুরক্ষা, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশীদারত্ব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বতর্মান সরকারের লক্ষ্য এসডিজি অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের অনুপাত ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।
×