ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের জনবল

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পুলিশের জনবল

সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে এটাও সত্য সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। পুলিশকে জনবান্ধব করতে হলে জনবল বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। অথচ রাজধানী ঢাকাতেই পুলিশ বাহিনীতে জনবলের সঙ্কট রয়েছে। পৌনে দুই কোটি মানুষ অধ্যুষিত এই মেগাসিটির প্রায় সাড়ে ৫০০ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন পুলিশ। রাজধানীতে এত অল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা বিধান কিভাবে সম্ভব। তবে বাড়ছে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগও। গত এক বছরে রাজধানীতে ৪০০ পুলিশকে বিভিন্ন অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে গত বছর ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৭০০ পুলিশ সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ডিএমপিতে। অথচ একটি দেশের রাজধানীই হচ্ছে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা উন্নত থাকলে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়। অথচ পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজধানীকে পেছনে রাখার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক হতে পারে না। ডিএমপিতে জনবল সঙ্কটের কারণে পুলিশ সদস্যকে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কর্তব্য পালন করতে হয় বাধ্য হয়েই। উল্লেখ্য, ডিএমপিতে যেসব বিভাগের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- গোয়েন্দা ও অপরাধ গোয়েন্দা বিভাগ, অপরাধ ও অপারেশন বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, সুরক্ষা ও প্রটোকল বিভাগ, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ও সদর বিভাগ, বিশেষ নারী পুলিশ বাহিনী ইত্যাদি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাড়াও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বিধানের সহযোগিতা এবং সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ বজায় রেখে কাজ করছে বাংলাদেশ আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বিশেষ শাখা (বাংলাদেশ), বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। এসব সংস্থায় কর্মরত যে ধরনের জনবল রয়েছে তাতে নানা ধরনের অপরাধ দমন এবং তদন্তে আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। আমরা আগেও বলেছি, নিকট অতীতে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটে- পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজের সহানুভূতির দৃষ্টি তেমন নেই। জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক; পুলিশ হয়ে উঠুক প্রকৃত সমাজবান্ধব- এমন প্রত্যাশা দেশের নাগরিকদেরও।
×