ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্ট্রিট আর্ট ॥ প্রতিফলক এবং প্রতিফলনজনিত প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্ট্রিট আর্ট ॥ প্রতিফলক এবং প্রতিফলনজনিত প্রতিক্রিয়া

‘স্ট্রিট আর্টের’ প্রচলন কিংবা ধারা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। কদাচিৎ ঢাকার রাস্তা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেখা মেলে এমন শিল্পকর্মের। যার অধিকাংশ অঙ্কন করেন শৌখিন শিল্পী কিংবা চারুকলায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে এ শিল্পে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া কিংবা সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বা আগ্রহ একেবারেই নগণ্য। এই সঙ্কট উত্তরণে কিছুটা হলেও আশা জাগায়িছে এবারের ‘ঢাকা লাইভ আর্ট দ্বিবার্ষিক’ আয়োজন। মোট ১৩টি দেশের ৪৬ জন আর্টিস্ট প্রথম এমন পারফর্মেন্স আর্টে অংশ নিয়েছেন। যা বাংলাদেশের শিল্প ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পধারার এ সংমিশ্রণ ভবিষ্যতে নতুন রসায়ন ও শিল্প ধারার জন্ম দেবে নিশ্চিত। সেই সঙ্গে এ ধারা নতুন শিল্পদেরও পারফর্মিং আর্টে সম্পৃক্ত করার এক অনন্য প্রয়াস। পারফর্মেন্স আর্ট স্ট্রিট আর্টেরই অংশ। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনির চৌধুরী সেমিনার হলে ডিল্যাব আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, ছবির হাট, কার্জন হল ও বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুলে শিল্পীরা নিজেদের পারফর্ম তুলে ধরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আগত দর্শকরা প্রথমবারের মতো এমন মনোমুগ্ধকর পারফর্ম উপভোগ করেন। ডিল্যাবে অংশ নেয়া বাংলাদেশের শিল্পী সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির। তার কাজের শিরোনাম প্রতিফলক এবং প্রতিফলনজনিত প্রতিক্রিয়া, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে একজন ব্যক্তির বর্ণনা। অতঃপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলেন কপাটে তালা ঝুলিয়ে রেল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আনমনে স্টেইটন্সে স্টিলের পাতের ওপর দিয়ে পুব বরাবর রুপালি ট্রেন আসে-যায় কোন স্টেশনে বিরতি ছাড়াই তিনি হেঁটে চলেন পুব বরাবর সূর্যের দিকে। চাঁদ কিংবা জলের ওপর পদ্মফুলের মনোহারবাগান তার নন্দন ক্রিয়ায় বিঘœ ঘটাতে পারে না। শিল্পীর কথা মানুষ মানবীয় গুণাবলীসম্পন্ন আধ্যাত্মিক সত্তা। জাগতিক ক্রিয়াকর্মে লিপ্ত থেকেও তাই মাঝে মধ্যেই তার বুকের গভীরে ঘণ্টা বেজে ওঠে। অসীমের নাড়া অনুভব করে অন্তরে, আত্মায়। এটা যেন শেকড়ের টান। মাঝরাতে তাই হঠাৎই সেই অপার্থিব ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর ছাড়ে অতৃপ্ত মানুষ, নিরুদ্দেশ পানে, সবকিছু তুচ্ছ করে। জাগতিক মানুষ দিন দিন তার বোঝা বাড়িয়েই চলে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। জাগতিক বোঝা, মানসিক বোঝা। চেতনে অবচেতনে বেড়ে যায় তার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার বোঝাÑ পাহাড়সম হয়ে এক সময় তার কাঁধে চেপে বসে। একটু একটু করে সে বাড়িয়ে তোলে অসীমের সঙ্গে দূরত্ব, যোগাযোগ। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে তার অস্থিরতা, হৃদয়ের আয়নায় অযতেœ পড়তে থাকে অস্বচ্ছ আস্তরণ। অজানা এক অতৃপ্তিতে আচ্ছন্ন হয় সে, চাপা এক অস্বস্তি। পার্থিব কোন প্রাপ্তিই এই অতৃপ্তি ঘুচাতে পারে না এক সময়, স্বস্তি মেলে না কিছুতেই। এক রকম অর্থহীনতা গ্রাস করে তাকে। তখন এক সময় সে খুঁজে ফেরে ‘কিছু’ একটা। সন্ধান করে বেঁচে থাকার মানে। মানুষের এই অর্থহীনতার বোধ, এই অনুসন্ধানই আমার কাজের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। মানুষের অন্তরের এই টানাপোড়েন, জিজ্ঞাসা, হৃদয়ের এই আজন্ম আকাক্সক্ষা, এই-ই আমার কাজের বিষয়বস্তু। আমার সাম্প্রতিক উপস্থাপনা ‘প্রতিফলক এবং প্রতিফলনজনিত প্রতিক্রিয়া’য় আমি একজন জিজ্ঞাসাতাড়িত মানুষ বা আত্মাকে প্রতীকায়ন করেছি। যার পিঠে চেপে থাকা বিশাল বোঝা যা আপাতদৃষ্টিতে চকমকে হলেও তা তার আকাক্সক্ষা ও অতৃপ্তির প্রতীক। অস্থির মানুষটি স্টেথোস্কোপ নিয়ে অনুসন্ধান করে ফিরছে সেই ‘কিছু’র। তার অভিব্যক্তিতে রাজ্যের অস্থিরতা। আমি মানুষের মাঝে, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। তাই আমার কাজের ক্ষেত্র পাবলিক প্লেস, রাস্তা এবং এক্ষেত্রে দর্শক বা আশপাশের মানুষজনও আমার কাজের অংশ। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক ছবি : আরজু রহমান
×