ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীদের ভিড়

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীদের ভিড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২৮ জানুয়ারি ॥ ঠাকুরগাঁও ও তার আশপাশ এলাকায় পশ্চিমা বাতাসে কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীতে ঠাকুরগাঁওয়ে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে গত ৩ দিনে এ জেলায় তিন শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার পাঁচ গুণের বেশি শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। শয্যা সংখ্যা কম থাকায় হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার সকালে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ১৮ শয্যার শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১শ’ ২৬ শিশু ভর্তি ছিল। এসব শিশুর বেশির ভাগই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। শুক্রবার দুপুরে ৪৫ টি শিশুকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলেও রাতে আরও ২৫টি নতুন শিশু ভর্তি হয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ১শ’ ২৬ শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯৬ শিশু ডায়রিয়া ও ৩০ শিশু শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। শয্যা সংকটের কারণে বেশির ভাগ শিশুকে ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বারান্দায় বিছানা পেতে শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছেন অনেক অভিভাবক। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় বিছানা পেতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আট মাসের শিশু শাহিনের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের রহিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকালে আমার নাতনির বমি শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হলে বিকালে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসে দেখি, বিছানা নাই। শেষে উপায় না দেখে মেঝেতে কম্বল পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু শাহিনের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।’ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর গ্রামে থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ধীরেন রায় বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নয় মাসের ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ‘দুই দিন ধরে হাসপাতালের বারান্দায় থেকে ছেলের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রাতে ঠান্ডা বাতাস বারান্দার রোগীদের কাবু করে দেয়। তখন বাড়তি কম্বল দিয়ে ছেলের শরীর ঢেকে দিই। তবু ঠান্ডা লাগে।’ সদর উপজেলার গড়েয়া এলাকা থেকে আসা মোকলেসা খাতুন বলেন, শিশুটিকে ভর্তি করার পর থেকে দেখি একটি বিছানায় ৩ জন করে শোয়ানো হয়েছে, আর মেঝেতেও কোন জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নবজাতক ও শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ‘শয্যা না থাকায় কনকনে শীতের মধ্যেই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগে আক্রান্ত শিশুদের ওয়ার্ডের মেঝেতে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল কবির বলেন, ‘শুধু শিশু ওয়ার্ডে নয়, সব ওয়ার্ডেই প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়। এই স্বল্প জনবল দিয়ে আমরা সকল রোগী ও শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’
×