ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় মাসে ব্যাংক ঋণের স্থিতি কমেছে ১০ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ হিসাবে প্রতি মাসে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু অর্থবছরের ৬ মাস অতিক্রম হলেও এ খাত থেকে উল্লেখযোগ্য কোন ঋণ করেনি সরকার। উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ শোধ করায় এ খাতে সরকারের ঋণ ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক গতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে কম। আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ করলে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় ঋণপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। তখন ঋণের সুদহার বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তবে কয়েক বছর ধরেই এ খাতে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ করছে কম। অন্যদিকে বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য জমা পড়েছে। এতে ঋণের সুদ হারও কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে তা এক অঙ্কের ঘরে নেমেছে, যা বেসরকারী খাতের জন্য স্বস্তিদায়ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এতে তারা আমানতের সুদ কমিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের অবস্থাও ভাল যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সঞ্চয়পত্রকে এখন অনেক বেশি লাভজনক মনে করছে। এতে বিক্রি বাড়ছে সঞ্চয়পত্রের। ফলে বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা কমছে। জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসেই এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে। এ সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে (নিট বিনিয়োগ) ২০ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০৯ কোটি টাকা বেশি। গেল অর্থবছরে এ খাতে নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মূলত শেয়ারবাজারের দীর্ঘ মন্দা ও ব্যাংক আমানতের সুদ হার ক্রমাগত কমতে থাকায় সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রে টাকা খাটানোর প্রবণতা বাড়ছে। বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়া হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের মোট ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণের মোট স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। ফলে এ সময় সরকারের নিট ব্যাংক ঋণের স্থিতি কমেছে ১০ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের ব্যাংক ঋণের মোট স্থিতি ছিল ২১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা ২৯ ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার কোন ঋণই করেনি। উল্টো আগের নেয়া ঋণের প্রায় ১০ হাজার ১২৩ কোটি টাকা শোধ করেছে। অন্যদিকে গেল অর্থবছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা, যা ১৫ ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৭ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময় সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে মাত্র ৭১৯ টাকার মতো ঋণ নিয়েছে সরকার। বাজেটে ঘাটতি পূরণে বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। তবে বছরের বেশিরভাগ সময়েই সরকারের ঋণের চাহিদা কম ছিল। ফলে পুরো অর্থবছরের সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়ায় মাত্র ৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াই ছিল এর অন্যতম কারণ। এদিকে চলতি অর্থবছরের নবেম্বর শেষে ঋণের গড় সুদ হার ১ অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। নবেম্বরে ঋণের গড় সুদ হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা অক্টোবরেও ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ। ঋণের সুদ কমায় বেসরকারী খাতে ঋণের যোগান বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৬ সালের নবেম্বর পর্যন্ত গেল ১ বছরে এ খাতে ঋণের যোগান বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। গেল অর্থবছরের পুরো সময় এ খাতে ঋণের যোগান বেড়েছিল ১৬ ধমমিক ৭৮ শতাংশ।
×