ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আকরাম খান

বড় ক্ষতি কার?

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

বড় ক্ষতি কার?

১৬১০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার ইসলাম খাঁ সর্বপ্রথম ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন। বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পাড়ে ঢাকা শহরের গোড়াপত্তন হলেও আড়াই শ’ বছর পর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকা পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। ১৯০৫ সালে বাংলাকে দুইটি প্রদেশে বিভক্ত করায় একবার এবং ভারত বর্ষের স্বাধীনতা লগ্নে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব বাংলায় ১৯৪৭ সালে আরও একবার ঢাকা প্রাদেশিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালে সেটি স্বাধীন দেশের পূর্ণাঙ্গ রাজধানী হিসাবে যাত্রা শুরু করে। বর্ণনা সংক্ষেপ হলেও বিস্মিত হওয়ার মতো বাস্তবতা এই যে মাত্র অর্ধ শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে সেটি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ব্যস্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। ১১৮৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ ঢাকায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে। যার মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ছিল। ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার ও মধুপুর এলাকার টিলার উৎপত্তি সেই ভূমিকম্পের ফসল বলে ধারণা করা হয়। সিলেট অঞ্চলের মাটির পাহাড়গুলো পোড়ামাটির সভ্যতার যুগে সৃষ্ট এতে কোন সন্দেহ নেই। নিকট অতীতে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। পৃথিবীর আহ্নিক গতির প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পরিবেশের পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিশেষ করে প্রস্তরস্তরের উপরিভাগে এটি একটি সহজ সম্ভাবনা। কাজেই নিকট ভবিষ্যতে মাঝারি থেকে অতিমাত্রার ভূমিকম্প কেবল ঢাকা নয় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশেই আঘাত হানতে পারে। আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় যেটি তাহলো রাজধানী ঢাকা শহরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে ৮৫ শতাংশ স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। প্রাণহানির আশঙ্কা কমপক্ষে ৬০ শতাংশ। সবচেয়ে বড় কথা, এমনটি হলে ঢাকার রাস্তা পরিষ্কার করতে সময় লাগবে ৩ বছর, উদ্ধার কাজ শুরু করতে ব্যয় হবে কমপক্ষে ১২০ দিন সময়। এমনকি প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতিও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে যাবে, যে কারণে দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা। আধুনিক সভ্যতার স্বর্ণযুগেও ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত পরিত্যক্ত ঢাকা মহানগরী দেখতে হতে পারে আমাদের। সহস্রাব্দের উন্নয়ন ভাবনার পরিবর্তে সহস্রাব্দ পেছন থেকে আবার যাত্রা শুরু করতে হতে পারে। আমরা তা চাই না। ইতোমধ্যে দেশের অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, রাজধানী ঢাকার ৯৫% স্থাপনাই ত্রুটিপূর্ণ। বিল্ডিং কোড দূরের কথা, মালিকের ইচ্ছা ও পরিকল্পনায় রাজমিস্ত্রিদের পরামর্শে এই মহানগরীর অধিকাংশ বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এমন কি টিনশেডের উপযোগী দেয়ালের ওপর তিনতলা ভবন, তিনতলার ওপর নয় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন অতিলোভী ও অবৈধভাবে অর্থবিত্তের মালিক হওয়া দখলদার ব্যক্তিগণ। ঢাকামুখী জনস্রোত অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে আবাসিক সঙ্কটের চাহিদা পূরণ, অন্যদিকে কর্মমুখী জনস্রোতকে কাজে লাগাতে লাভজনক ব্যবসা-বাণিজ্য ও কলকারখানা গড়ে তুলতে মালিক মহাজনরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ঢাকার আয়তন বেড়েছে রাতারাতি, ভারি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে যত্রতত্র মাটির বহন ক্ষমতা পরীক্ষা করা ছাড়াই। শুধু খাল বিল, পুকুর ডোবাই নয়, রাজধানীর বর্জ ফেলা হয় যে সব স্থানে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ও মালিকদের যোগসাজশে তার ওপরও গড়ে উঠেছে বিশাল আকৃতির বহুতল ভবন ও কারখানা। সংস্কারবিহীন পুরান ঢাকা আর নির্মাণ ত্রুটির নতুন ঢাকার ৯৫% দালানকোঠা এখন মহা-বিপর্যয়ের সীমান্ত রেখায় অবস্থান করছে। এসব স্থাপনা ঘিরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন। বড় ধরনের বিপর্যয়ে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ঘটলে সেটি কেমন ভয়াবহ হবে ভাবাই যায় না। কাজেই আমরা মনে করি ঢাকাকে বাসযোগ্য এবং রক্ষা করতে হলে দেশের প্রশাসনিক রাজধানী স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে গ্রহণ করা উচিত। অবিলম্বে রাজধানী স্থানান্তরের ঘোষণা দেয়া হলে অনেকগুলো সুফল পাওয়া যেতে পারে। এক. ঢাকামুখী জনস্রোত থম্কে যাবে। দুই. ঢাকার পরিধি না বাড়িয়েই ঢাকাকে আধুনিক নগরীতে পরিণত করা সহজ হবে। তিন. যানজট নিরসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। চার. বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কলকারখানার অসহনীয় চাপ হ্রাস পাবে। মধুখালী, ফরিদপুর থেকে
×