ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এজিডব্লিউইবি আয়োজিত সেমিনারে তথ্য

প্রতিবছর ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ পান নারী উদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

প্রতিবছর ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ পান নারী উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বের শ্রমিশক্তির ৪০ ভাগ নারী। উন্নত দেশের ২৫ ভাগ শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক নারীরা। বাংলাদেশে এই পরিমাণ ১০ শতাংশেরও কম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে উদ্যোক্তা হতে যেসব সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক সমর্থন প্রয়োজন বাংলাদেশের নারীরা তা পান না। ব্যাংকগুলো প্রতিবছর বিতরণকৃত ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ পান নারী উদ্যোক্তারা। নারী উদ্যোক্তাবান্ধব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৩২টি দেশের মধ্যে ১২৫তম। মঙ্গলবার নারী উদ্যোক্তা দিবস উপলক্ষে সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন এ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস উইমেন এন্টারপ্রিনিয়ার্স বাংলাদেশের (এজিডব্লিউইবি) প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম। আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার। ‘নারী উদ্যোক্তা : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে যৌথভাবে এজিডব্লিউইবি ও আইএফআইসি ব্যাংক। এতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহম্মেদ, এফবিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ এ সারোয়ার বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় মূল প্রবন্ধে মৌসুমি ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সূচকে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। এটি হতাশাজনক। সূচকের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও সুইডেন। উন্নত দেশে নারীরা বড় ভোক্তা শুধু নয়, বড় উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ২৫ থেকে ৩১ শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক নারীরা। তবে বাংলাদেশে এ হার ১০ শতাংশেরও নিচে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। ইদানীং বাধাবিপত্তির মধ্যেও তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছেন। এতে বেশকিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যাংকিং সেবা না পাওয়া, পুরুষের তুলনায় শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, দেরিতে ব্যবসা শুরু করা, পরিবারের দায়িত্ব ও বাজার এবং ঋণের পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতে তৈরি পণ্য বিক্রির কাজে নিয়োজিত। এই সংখ্যা মোট উদ্যোক্তার ৪৭ শতাংশ। পোশাক ও পণ্যের নক্সার কাজে ২৮ শতাংশ, তৈরি পোশাক খাতে ১৩ শতাংশ এবং কৃষিজাত সংক্রান্ত ব্যবসার কাজে ১১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা নিয়োজিত। বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতির কারণে তারা পারছেন না। ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিচ্ছেন তার মাত্র ৪ শতাংশ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে স্বল্প সুদে ঋণ, গ্যারান্টার জটিলতা, নিরাপদ বাজার, নারীদের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার বন্ধ ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। বীরেন সিকদার বলেন, দেশের শীর্ষ ক্ষমতায় রয়েছে নারীরা। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে এখনও নারীরা এগিয়ে যায়নি। তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে হবে। সরকার বিভিন্ন খাতে নারী অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে হলেও গত কয়েক বছরের ব্যবধানে উন্নতি ঘটেছে। উন্নত দেশের তুলনায় আমরা পিছিয়েছি কিন্তু অনেক দেশের তুলনায় আমরা এগিয়ে। শাহ এ সারোয়ার বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকগুলো তাদের জন্য কাজ করছে। তবে ব্যাংকিং ব্যবসা নিরাপদ রাখতে কিছু আইনী বিষয় রয়েছে এটি অবশ্যই ব্যাংকগুলো পরিপালন করবে। সঠিকভাবে ও ভাল উদ্যোগ নিলে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা ব্যাংকের জন্য অনেক সহজ হবে।
×