ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনই মুক্তবাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে আসবেন ট্রাম্প

টিপিপি ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

টিপিপি ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি তার দায়িত্ব নেয়ার দিনই আমেরিকাকে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টারশিপ (টিপিপি) বাণিজ্য চুক্তি হতে সরিয়ে আনবেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া টিপিপি চুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন। খবর বিবিসি, টেলিগ্রাফ ও ইয়াহুনিউজের। ট্রাম্প বাণিজ্য চুক্তির প্রতি তার বিরোধিতার কথা তার নির্বাচনী প্রচার অভিযানকালেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ দেশ চুক্তিটি সই করেছিল। বিশ্ব অর্থনীতির শতকরা ৪০ ভাগ এ চুক্তির আওতাভুক্ত হয়। এটি ছিল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য উদ্যোগ। সোমবার ট্রাম্প টিপিপিকে তার দেশের জন্য এক সম্ভাব্য বিপর্যয় বলে বর্ণনা করে এটি অবিলম্বে বাতিল করবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচী কি হবে সেই সম্পর্কে দেশের প্রতি তার প্রথম সরাসরি ভাষণ দিচ্ছিলেন। ইউটিউবে প্রচারিত এক ভিডিওতে রিপাবলিকান বলেন, আমেরিকাকে প্রথমে স্থান দেয়ার নীতির ভিত্তিতেই তার কর্মসূচী তৈরি করা হবে। ট্রাম্প বলেন, আমাদের আইনশৃৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে ও আমাদের চাকরির সুযোগ ফিরিয়ে আনতে প্রথম দিনই আমি গ্রহণ করতে পারি এমন নির্বাহী ব্যবস্থাপগুলোর তালিকা তৈরি করতে আমার অন্তর্বর্তী টিমকে বলেছি। তিনি বলেন, বাণিজ্য প্রশ্নে আমি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি থেকে সরে আসার অভিপ্রায় সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে যাচ্ছি। এর বদলে আমরা আমেরিকান উপকূলে চাকরি ও শিল্প ফিরিয়ে আনবে এমন যুক্তিসঙ্গত ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করব। টিপিপি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়নি। এক মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। ওয়াশিংটন ও এর আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে প্রায় এক দশকে আলোচনার পর চুক্তিটি নিয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ সালে নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট সই করার পর টিপিপিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। এতে ফেব্রুয়ারিতে সই দেয় এমন ১২ দেশ হলো জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। চুক্তিটির লক্ষ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর এবং প্রবৃদ্ধি জোরদার করা। কিন্তু এ চুক্তি নিয়ে গোপনে আলোচনা করা হয়েছিল এবং এতে বড় বড় কর্পোরেশনের প্রতি আনুকূল্য দেখানো হয় বলে এর সমালোচকরা উল্লেখ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া টিপিপি অর্থহীন বলে মন্তব্য করেন। তিনি সোমবার আর্জেন্টিনায় এক সরকারী সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি আরও বলেন যে, চুক্তিটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করা যেতে পারে না। এতে সুযোগ-সুবিধার মৌলিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। ট্রাম্পের টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার অভিপ্রায় জ্ঞাপক ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার কিছু পূর্বেই আবে ওই মন্তব্য করেন। এর আগে আবে গত সপ্তাহান্তে পেরুতে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতাদের এক বৈঠকে যোগ দেন। এ বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, তারা চুক্তিটি ট্রামের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এটিকে সংশোধনের চেষ্টা করতে পারেন বা যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই বাস্তবায়ন চাইতে পারেন। কিন্তু আবে আমেরিকার অংশগ্রহণ ছাড়া চুক্তিটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ধারণা নাকচ করে দেন। সপ্তাহান্তে পেরুতে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা বলেছিলেন, ট্রাম্পের বিরোধিতা সত্ত্বেও অবাধ বাণিজ্য চুক্তিটি নিয়ে তারা এগিয়ে যাবেন। সেন্টার অব এশিয়া ও গ্লোবালাইজেশনের পরাগ খানা বলেন, ট্রাম্পের আচরণে বিস্ময়ের কিছু নেই, কিন্তু তার বাণিজ্য নীতি টিপিপি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আনতে পারত এমন সুযোগ সুবিধা বিনষ্ট করবে। এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের ডেবোরাহ এলমস বলেন, এটি খুবই হতাশা ব্যঞ্জক খবর। এর অর্থ হলো বাণিজ্যের ওপর মার্কিন নেতৃত্বের অবসান এবং এশিয়ার হাতে নেতৃত্ব চলে আসা। অর্থনীতিবিদ হারুমি আগুচি বলেন, টিপিপি ভেঙ্গে পড়লে এশিয়াতে এক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। চীন এ শূন্য পূরণের জন্য এগিয়ে আসছে বলে কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে।
×