ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাজু আহমেদ

দিল্লীতে প্রশংসিত ঢাবির ‘সাজবেলার বিলাপ’

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

দিল্লীতে প্রশংসিত ঢাবির ‘সাজবেলার বিলাপ’

ডিজাইনের দিক থেকে বাংলাদেশের মঞ্চনাটক বিশ্বমানের। এ কথা যে কেউ স্বীকার করবেন। নাটকগুলো যখন দেশের বাইরে মঞ্চায়ন করতে যায় তখন এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়। বিশেষ করে কনটেন্টের বিষয়টি নিয়ে একটু কমতি লক্ষ্য করা গেলেও বাংলাদেশের নাটকগুলোর ডিজাইন নিয়ে সারা বিশ্বেই আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লিসহ বিভিন্ন প্রদেশের একাধিক উৎসবে অংশ নিয়ে বরাবরই প্রশংসিত হয়ে আসছে বাংলাদেশের নাট্যদলের বিভিন্ন নাটক। এরই ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশের মঞ্চ নাটকের তীর্থস্থান খ্যাত ভারতের নয়াদিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে (এনএসডি) সম্প্রতি শেষ হওয়া সপ্তাহব্যাপী ৯ম এশিয়ান প্যাসেফিক এপিবি নাট্যোৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ‘সাঁঝবেলার বিলাপ’ প্রদর্শিত হয়। নাটকটি উপস্থিত দর্শক ও নাট্য বোদ্ধাদের কাছে ভূয়সী প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। জ্যঁ রাসিনের ফরাসী ধ্রুপদী নাটক ‘ফেইড্রা’র বাংলা অনুবাদ করেছেন অসিত কুমার। নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাবির থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অগ্রজ অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীন। নাটকে থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এমএ (শেষ বর্ষ) শিক্ষার্থীরা অভিনয় করেছেন। এ নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ঢাবির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ সুত্রে জানা যায় ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার নাট্যশিক্ষক, নাট্যশিক্ষার্থী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, নির্দেশক ও ২০টির বেশি দেশের নাট্যজনরা এই নাটকটির দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে নাটকটি মঞ্চায়নের সময় উপস্থিত ছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত নির্দেশক রতন থিয়াম এবং এনএসডির পরিচালক অধ্যাপক ড. ভামান কেনন্দে। উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও সিঙ্গাপুর, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশকিছু দেশ অংশ নেয় । উৎসব চলাকালীন সময়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার উন্মুক্ত মঞ্চে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যপক, তরুণ নাট্যকার ও নির্দেশক শাহমান মৈশান। এছাড়া একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন সাইদুর রহমান লিপন, শাহমান মৈশান, অমিত চৌধুরী, আশিক রহমান লিয়ন ও কাজী তামান্না হক সিগমা। দিল্লি যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় টিএসসি তৃতীয় তলায় সেমিনার কক্ষে নাটকটির বিশেষ একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। এক ঘণ্টা ব্যাপ্তিকালের নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ঢাবির থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইলিয়াস বাসেত, আফরিন তোড়া, ইসতিয়াক খান পাঠান, ধীমান চন্দ্রবর্মন, রানা নাসির, সাওগাতুল ইসলাম হিমেল এবং সাফওয়ান মাহমুদ। কোরাসে সাইদুর রহমান লিপন, কাজী তামান্না হক সিগমা, অমিত চৌধুরী এবং প্রযোজনার শিক্ষার্থীরা। ড্রামাতুর্গ ও নাট্যকথন ও গীতরচনায় শাহমান মৈশান, মঞ্চ, আলো ও দ্রব্য পরিকল্পনায় আশিক রহমান লিয়ন, পোশাক পরিকল্পনায় ওয়াহীদা মল্লিক জলি, আশিক রহমান লিয়ন, কাজী তামান্না হক সিগমা, রূপসজ্জা পরিকল্পনায় রহমত আলী, সঙ্গীত পরিকল্পনা ও প্রয়োগে সাইদুর রহমান লিপন, কাজী তামান্না হক সিগমা এবং দেহবিন্যাসে অমিত চোধুরী। নাটকটি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ থেকে যখন একটি প্রযোজনা হয় তখন সেটি আর শুধু একটি প্রযোজনারূপেই থাকে না। ‘সাঁঝবেলার বিলাপ’ প্রযোজনাটি থিয়েটারের শিক্ষণপ্রণালীর ফলাফলরূপে নির্মিত। আমার মনে হয়, পেডাগজি বা শিক্ষণপ্রণালী কেবল কিছু নিয়মবদ্ধ নীতিমালা বা পদ্ধতি মাত্র নয়। শিক্ষা পদ্ধতি বলতে সাধারণত যা বোঝায়, শিল্পের শিক্ষণপ্রণালী তার চেয়েও বেশি কিছু। আর জ্যঁ রাসিনের ‘ফেইড্রা’ নাটকে ফরাসী ধ্রুপদীবাদের মৌল নীতিগুলোর প্রতিফলন খুবই স্পষ্ট। কিন্তু রাসিনের এই মাস্টারপিসের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই আমরা এক নতুন প্রস্থান বিন্দুর সূচনা করতে চেয়েছি। এই প্রস্থান-বিন্দুতে লক্ষ্য করা যাবে পশ্চিমা ধ্রপদী কানুনের সঙ্গে আমাদের অঞ্চলের এথনিক বা জাতিতাত্ত্বিক ও দেশজ নাট্য নন্দনতত্ত্বের একটি সংশ্লেষ ঘটেছে। আমরা এই প্রযোজনার মর্মস্থলে বা পরতে পরতে অভিনয়, দৃশ্যগত উপাদান যেমন মঞ্চ আলো পোশাক রূপসজ্জা, দেহবিন্যাস এমনকি বিষয়বস্তু বা পা-ুলিপিগত দিক থেকেও সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে পুনঃসৃজনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। নাট্যসাহিত্যের অনুকরণের ধারণাকে না বলতে চেয়েছি। অনুকরণের পরিবর্তে এই প্রযোজনায় আমরা গুরুত্ব দিয়েছি থিয়েটার শিল্পের সৃজনশীল মূলনীতিগুলোকে কিভাবে নতুনভাবে প্রয়োগ করা যায়।
×