ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার শুরু দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ

ঢাকা টেস্টের জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

ঢাকা টেস্টের জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এখনও কী চট্টগ্রাম টেস্টের ঘোর কাটেনি! না কাটলেও কাটাতে হবে। আর মাত্র একদিন পরই যে ঢাকা টেস্টে নেমে পড়তে হবে। শুক্রবার থেকেই যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামতে হবে। তাই চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে ভেবে এখন আর লাভ নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন ঢাকা টেস্টের ভাবনাতেই ডুবে থাকতে হবে। সেই ভাবনা শুধু বাংলাদেশ দলেই নয়, ইংল্যান্ড দলেও আছে। আর তাইতো মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে ফিরে বুধবার দুইদলই অনুশীলনে নেমে গেছে। সকালে ইংল্যান্ড দল ও দুপুরে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করেছে। ঢাকা টেস্টের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এগিয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড। ব্যবধান ১-০। এখন দ্বিতীয় টেস্ট জিতলে, সিরিজ জেতার সঙ্গে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশও করবে ইংলিশরা। সেই সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় ইংল্যান্ড। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে দুর্দান্ত খেলার পর ২২ রানে হার হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যে আত্মবিশ্বাসে আবারও ভাল কিছুই উপহার দিতে পারবেন মুশফিকরা। এমন বিশ্বাস বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমেরই। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চমদিনটি আমাদের সহায় ছিল না। ৩৩ রান আর দুই উইকেটের ব্যবধানটা আপনাকে সব বুঝিয়ে দেবে। তারপরও আমি বলব আমাদের খেলোয়াড়রা শেষ চারদিন দারুণ খেলেছে। দীর্ঘ ১৫ মাস পর আমি এই পারফর্মে গর্ববোধ করছি। তারা (ইংল্যান্ড) দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান তুলেছে। আমরা যদি প্রথম ইনিংসে ২৯০ রান তুলতে পারতাম, তাহলে ম্যাচের রেজাল্ট আমাদের দিকেই আসতো। সেটি না হওয়ায় আমরা টার্গেট থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। আশা করব পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর।’ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনতো আরও শক্তিশালী হয়েই ধরা দেবে বাংলাদেশ, এমনই মনে করছেন। বলেছেন, ‘ঢাকাতে আমরা আমাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে লড়ব। ভাল করব আশাকরি। চট্টগ্রাম টেস্টে ছোটখাট যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে ঢাকা টেস্টে তা আমাদের ছেলেরা শুধরে নিতে পারবে। আমরা যতটুকু পারি ভাল খেলব। মিরপুরের উইকেট সবসময়ই ভিন্ন। আমরা চাইব উইকেট যেন আমাদের মতোই হয়।’ চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মুশফিক। বলেছেন, ‘যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই উইকেট পেয়েছি। আমাদের বোলাররা অসাধারণ বোলিং করেছে। আমরা যদি এমন উইকেটে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে পারতাম, তাহলে হয়তো প্রস্তুতিটা ভিন্ন হতো। এটার হয়তো সুযোগ ছিল না। তারপরও বলব সবমিলিয়ে আমাদের জন্য ভাল একটা ম্যাচ হয়েছে। আমাদের বোলাররা খুব ভাল বল করেছে। আমরা ২০ উইকেট নিয়েছি, এটা খুব ভাল দিক। প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের ব্যাটসম্যানরা অনেক ভাল ব্যাটিং করেছে। আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। এমন উইকেটে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে।’ ঢাকাতেও কী সেইরকম উইকেট মিলবে? উইকেট নিয়ে এখন সবার মাথাব্যথা! সবার নজরেই আছে উইকেট। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মাথায় আছে। তারা যে চট্টগ্রামের মতো উইকেটই চান। আর তাইতো বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা একদিকে অনুশীলন শুরু করেছেন। আরেকদিকে প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে উইকেটেই পড়ে রইলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উইকেট দেখলেন। উইকেটের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করলেন। একটি বল দিয়ে বারবার উইকেটে মারতে থাকলেন। বল কি রকমভাবে ব্যাটসম্যানের কাছে আসবে, তা বুঝতে চাইলেন। একঘণ্টা ধরে শুধু উইকেট নিয়েই যেন গবেষণা করলেন। শুধু কি হাতুরাসিংহে, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে ব্যাট হাতে ইনডোরের দিকে যে ক্রিকেটারই যাচ্ছেন, উইকেট পরখ করে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামের মতো উইকেট হলে যে প্রতিপক্ষকে অন্তত চাপে ফেলা যাবে। সেইরকম উইকেটই কী শেষ পর্যন্ত মিলবে? মিরপুরের উইকেটগুলোর ইতিহাসতো সেই কথা বলে না! বাংলাদেশের বিপক্ষে এ টেস্ট সিরিজের আগে চারটি সিরিজ খেলেছে ইংল্যান্ড। প্রতিটিতেই বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। কখনই এতটা বিপাকে পড়তে হয়নি। মিরপুরে ২০১০ সালে একবারই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ যেমন ৪১৯ রান করেছে, ইংল্যান্ডও ৪৯৬ রান করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়েই ব্যবধানটি গড়ে। বাংলাদেশ ২৮৫ রানের বেশি করতে পারেনি। ইংল্যান্ড ২০৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৯ উইকেটের জয় তুলে নেয়। সেই ম্যাচটিও পাঁচদিনে গড়ায়। মধ্যাহ্ন বিরতির কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়। কিন্তু বাকি থাকা দুই সেশন শেষ না হতেই জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। মিরপুরের উইকেটই এরকম। সবসময়ই স্পোর্টিং উইকেট হয়। যেখানে ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে গেলে রান পান। তৃতীয়দিনে গিয়ে স্পিন ধরতে থাকে। বাংলাদেশের যতগুলো আন্তর্জাতিক ভেন্যু আছে, সেইগুলোর মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান মিরপুরেই হয়েছে। ২০১৪ সালে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৭৩০ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। মিরপুরে এখন পর্যন্ত ৫০ ইনিংস খেলা হয়েছে। এরমধ্যে ২০০ রানের নিচে সাতটি ইনিংস গুটিয়ে যাওয়া দেখা মিলেছে। ২০টি ইনিংসে ২০০ রানের বেশি হয়েছে। চারটি ইনিংসে ৩০০ রানের বেশি হয়েছে। ৬টি ইনিংসে ৪০০ রানের বেশি হয়েছে। ৫০০ রানের বেশি ইনিংস আছে চারটি, ৬০০ রানের বেশি আছে একটি ও একটি ইনিংস আছে ৭০০ রানের বেশি। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে মাত্র একটি। সেটি ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ১৯২ রানে অলআউট হয়। এছাড়া সবকটি ইনিংসেই ২০০ রানের বেশি হয়েছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, মিরপুরের উইকেট ব্যাটিংবান্ধব। আর যদি তা হয়, তাহলে ইংল্যান্ডে যে ব্যাটসম্যানের ছড়াছড়ি, তাতে করেতো হু হু করে ইংল্যান্ড ইনিংসে রান বেড়েই যাবে। যত রান বাড়বে, ততই কী বাংলাদেশের জন্য বিপদ ঘনিয়ে আসবে না? তবে চট্টগ্রাম টেস্টের পর যে আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ শিবিরে মিলেছে, ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই সেটি কাজে লাগবে। ইংল্যান্ড যদি ব্যাটিংয়ে ভাল করে তাহলেতো বাংলাদেশেরও ভাল করার কথা। আর যদি বোলিংয়ে করে তাহলে বাংলাদেশেরও করার কথা। তবে সমস্যা হচ্ছে, পেস আক্রমণ। যেটি ইংল্যান্ডের অনেক শক্তিশালী। আর এটিই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তবে কি হবে, তা সময়ই বলবে। এখন যে ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররা বাংলাদেশকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ দেখছেন, সেটিই বজায় থাকুক।
×