ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি বন্ধে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে লবণচাষী কল্যাণ পরিষদ

লবণ আমদানি হলে পথে বসবে ৫০ হাজার চাষী

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লবণ আমদানি হলে পথে বসবে ৫০ হাজার চাষী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মৌসুম সামনে রেখে বিদেশ থেকে আরও লবণ আমদানি হলে কক্সবাজার উপকূলের প্রায় ৫০ হাজার চাষী পথে বসবে। আর এতে লাভবান হবে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট চক্র। তাই আর যাতে লবণ আমদানির অনুমোদন না দেয়া হয় সে জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশ লবণচাষী কল্যাণ পরিষদ। ইতোমধ্যে লবণ আমদানি বন্ধে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। লিখিত আবেদনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আর এক মাস পর থেকে চাষীরা লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে নামবেন। ইতোমধ্যে জমি প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেট চক্র চাহিদার বেশি লবণ আমদানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকার দুই দফায় আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এসব লবণ দেশে আসা শুরু হয়েছে। এরপরও মৌসুম সামনে রেখে আরও কয়েক লাখ টন লবণ আমদানির ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যদি আমদানির সুযোগ দেয়া হয়, দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কোন চাষী লবণ উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন না। জানা গেছে, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু গত অর্থবছরের উদ্বৃত্ত তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ যোগ করলে জাতীয় চাহিদায় ঘাটতি পড়ার কথা নয়। তারপরও এবারের কোরবানি সামনে রেখে একটি সিন্ডিকেট চক্র লবণের ঘাটতির অভিযোগ তুলে বিদেশ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু তারপরও সিন্ডিকেট চক্র থেমে থাকেনি। এখন আরও ১ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এই লবণ আমদানি হলে মাঠের ৫০ হাজার প্রান্তিক চাষীসহ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলের ১৫ লাখ মানুষ পথে বসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে লবণ চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার আন্তরিক ও সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। সম্প্রতি লবণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয় তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হলে আমদানির প্রয়োজন হয় না। তারপরও ঘাটতি মোকাবেলায় আমদানি আইনে নিষিদ্ধ থাকার পরও প্রতিবছর বিদেশ থেকে কয়েক লাখ টন লবণ আনার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে দেশীয় শিল্প রক্ষা এবং চাষীদের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার লবণ আমদানি নিরৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ পণ্যটি আর আমদানির প্রয়োজন না হয় সেজন্য উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বিসিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় লবণের মাঠ আছে ৬৪ হাজার ১৫১ একর। এসব এলাকায় নবেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়। তবে দেশের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লবণ আমদানি করায় এখানকার চাষীরা লবণের দাম পাচ্ছেন না। গত বছর দেশের চাহিদা মিটিয়ে লবণ উদ্বৃত্ত ছিল ৪ লাখ ২৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। এসব লবণ বিক্রি না হওয়ায় গর্ত খুঁড়ে পলিথিন দিয়ে রেখেছেন কৃষকেরা। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মহলের চাপে লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ কারণে চাষীরা উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে পারছেন না। অবিক্রীত প্রচুর লবণ এখনও রয়েছে বলে দাবি করছেন চাষীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লবণচাষী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট থেকে আগামী দুই মাস পর্যন্ত আমদানি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত নীতি আদেশ, ২০১৫-২০১৮ এর অনুচ্ছেদ ২৬ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৫৮) এস আর ও নং ২৬৩ আইন-২০১৬ স্থগিত করা হয়েছে। লবণ আমদানির ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে ১১টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে আগামী দুই মাস লবণ আমদানি করা যাবে।
×