ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাথাব্যথা ও তার প্রতিকার

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মাথাব্যথা ও তার প্রতিকার

মাথাব্যথা-মাথাব্যথা-মাথাব্যথা। এমন কোন পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারে মাথাব্যথা নেই। প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ লোক মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। আপনারা অবশ্যই জানেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ মাথাব্যথায় ভুগে আসছেন। মাথাব্যথা মেডিক্যাল কন্ডিশনের একটি অন্যতম অসুস্থতা। এই মাথাব্যথা থেকে আমরা সবাই মুক্তি পেতে চাই। আর সেজন্যই মাথাব্যথার ওপর আজকের এই ছোট লেখা। সুপ্রিয় পাঠক, লিখতে বসেছি কিভাবে, কোথা থেকে মাথাব্যথা হয়, তার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে। মিসেস রাহিমা বেগম। বয়স ২৫ বছর। থাকেন ধামরাইয়ে। গত পাঁচ বছর যাবত মাথার ডান পার্শ্বে ব্যথায় ভুগছেন। মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে তার চোখেও ব্যথা হয়। মাঝেমধ্যে ভমিটিং এবং ডিজিনেস হয়। তিনি তার মাথাব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করেছেন এবং বিভিন্ন প্রকার রক্ত পরীক্ষাও করেছেন। সর্বপ্রকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোন অসুবিধা নেই। চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তার উপদেশ অনুযায়ী চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা করেছেন। এই রিপোর্টেও বলা হয়েছে কোন অসুবিধা নেই। মিসেস রাহিমা এখন খুবই হতাশ জীবনযাপন করছেন। মাথার ব্যথায় তিনি অনেক কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বলা হয়েছে, মাথায় কোন অসুস্থতা নেই। মাথাব্যথা বিভিন্ন প্রকার হয়। যেমনÑ সার্ভিকো জেনিক, মাইগ্রেন, টেনশন এবং সাইনোসাইটিস থেকে মাথাব্যথা হয়। মাথাব্যথায় ভোগেন ১৮% লোক। এই ১৮%-এর মধ্যে ১৪% লোক সার্ভিকো জেনিক হেডেকে ভোগেন। এছাড়াও প্যাথলজিক্যাল কারণের জন্য মাথাব্যথা হতে পারে। আমি যে মাথাব্যথার চিকিৎসা করি এবং যে মাথাব্যথার বিষয়ে এখানে লিখছি- সে মাথাব্যথার নাম সার্ভিকো জেনিক হেডেক। অর্থাৎ ব্যথা হয় মাথায় কিন্তু ব্যথার উৎপত্তি ঘাড়ের উপরিভাগে। ঘাড়ের উপরিভাগে অর্থাৎ সি-১-২-৩ লেভেলে কষ্ট থাকে কিন্তু রোগী কষ্ট পায় মাথায়। ঘাড়ের এই অংশের যে সমস্ত স্ট্রাকচারে কষ্ট হলে মাথাব্যথা হয় তা হলোÑ মাসেল, লিগামেন্ট, জয়েন্ট, ডুরামেটার, ডিস্ক এবং ভার্টিব্রাল আর্টারি। এই সমস্ত স্ট্রাকচার সি-১-২-৩ সার্ভাইক্যাল স্পাইনাল নার্ভ দ্বারা ইনারভেটেড। ওই সমস্ত স্ট্রাকচারগুলোই সার্ভিকো জেনিক হেডেক তৈরি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন গভেষক বলেছেন, সার্ভিকো জেনিক হেডেকের সঠিক ম্যাকানিজম বলা খুব কঠিন। তবে অস্ট্রেলিয়ান ফিজিওথেরাপি বিজ্ঞানী এন বকডাক বলেছেন, সার্ভিকো জেনিক হেডেকের উৎপত্তি ওই সমস্ত স্ট্রাকচার থেকে, যে সমস্ত স্ট্রাকচার ইনারভেটেড বাই সি-১-২-৩ সার্ভাইক্যাল নার্ভ। এছাড়াও রিমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, আপার নেক মাসেলের ট্রিগার পয়েন্ট, আপার সার্ভাইক্যাল জয়েন্ট ডিসফাংশন হলে সেখান থেকেও সার্ভিকো জেনিক হেডেক হতে পারে। এছাড়াও উইফ্লাস ইঞ্জুরি (গাড়ির এ্যাক্সিডেন্ট) থেকেও সার্ভিকো জেনিক হেডেক হয়। মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি এই রোগে ভুগে থাকেন। মিসেস রাহিমার ঘাড় পরীক্ষা করে দেখলাম ঘাড়ের উপরিভাগের ডানদিকে টেন্ডার। পাশ থেকে দেখা যায় যে, তার এন্টিরিওর হেড পোশ্চার আছে। তার অক্সিপিটো-নিউকিয়াল রিজিওনে লোকালাইজড পেইন আছে। তার ঘাড়ের মুভমেন্ট কম এবং মাসেল দুর্বল। এই সমস্ত পরীক্ষা, দিকনির্দেশনা দেয় মিসেস রাহিমা সার্ভিকো জেনিক হেডেকে ভুগছেন। মনে রাখবেন, সার্ভিকো জেনিক হেডেকের ক্ষেত্রে মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআইতে কোন অসুবিধা থাকে না। মিসেস রাহিমার জন্য চিকিৎসা হবে ঘাড়ের সফট টিস্যু মোবালাইজেশন, স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দেনিং এবং হোল্ড রিলাক্স। তার সঙ্গে পৃথিবীর বিখ্যাত সর্বাধুনিক ফিজিওথেরাপির প্রযুক্তি লো-লেভেল লেজার থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, হট বা কোল্ড থেরাপি (এ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী) ব্যবহার করতে হবে। মিসেস রাহিমা এই চিকিৎসায় ভাল হবেন। অর্থাৎ তার মাথাব্যথা চলে যাবে। প্রিয় পাঠক, আমি আমার এই ছোট লেখার মাধ্যমে ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি যে, আপনার যদি সার্ভিকো জেনিক হেডেক বা ঘাড়ের উপরিভাগের কষ্টের জন্য মাথাব্যথা হয় তাহলে আপনি কী ধরনের চিকিৎসা করবেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আমার চিকিৎসা অন্যদের চেয়ে সর্বাধুনিক এবং উন্নততর। দেশেই আমরা দিচ্ছি আপনাকে সর্বাধুনিক সার্ভিকো জেনিকের চিকিৎসা। আপনার সার্ভিকো জেনিক হেডেক বা মাথাব্যথার জন্য আপনার ঘাড়ের উপরিভাগের যতœ নিন, মাংস শক্তিশালী রাখুন এবং মাথাব্যথার কষ্ট দূরীভূত করে সুস্থ জীবনযাপন করুন। প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার পান্থপথ, ঢাকা। ০১৭৬৫ ৬৬ ৮৮ ৪৬, ০১৭৮৫ ৯৯ ৯৯ ৭৭
×