ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাগাদা দিলেও ফেরত দিতে গড়িমসি

সিলেটে যমুনা ব্যাংক গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সিলেটে যমুনা ব্যাংক গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাত

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ যমুনা ব্যাংকের দুই ম্যানেজারের জালিয়াতি, প্রতারণা ও আত্মসাতের কবলে পড়ে সিলেটে পথে বসেছেন প্রবাসীসহ ৭টি পরিবার। তারা প্রায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ওই ব্যাংকে আমানত রেখে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমানতের টাকা উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন মহলের দ্বারে ঘুরেও কোন কূলকিনারা মিলছে না তাদের। প্রতারক দুই ম্যানেজার পলাতক ও তাদের বিরুদ্ধে মামলার অজুহাতে আমানত আটকে রেখেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদন্তের পর এক প্রবাসীর টাকা ফেরত দেয়ার তাগাদা দিলেও যমুনা ব্যাংক তা আমলে নিচ্ছে না। জানা গেছে, তিন বছর আগে যমুনা ব্যাংক গোয়ালাবাজার ও সিলেট নগরীর মধুবন শাখার পর্যায়ক্রমিক তৎকালীন ম্যানেজার মোজাম্মেল হক ও গোয়ালাবাজার শাখার পরবর্তী ম্যানেজার জাজিদুল আলম তুহি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ জন আমানতকারীর ৩ কোটি ৮০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। এদের মধ্যে আমানতকারী প্রবাসী হায়দার আলী পরিবারের নগদ ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ ৭টি এফডিআরে তার মোট ২ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অপি থাই এ্যালোমিনিয়ার স্বত্বাধিকারী হরেন্দ্র সূত্রধর ও তাল ছেলে মিন্টু সূত্রধরের ৭১ লাখ টাকা, ঝলক গ্লাস এ্যান্ড ফোম সেন্টারের মালিক নীরেন্দ্র কুমার পাল মিন্টুর ২০ লাখ টাকা, মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহজাহানের ৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, বাপ্পি এ্যান্ড ব্রাদার্সের অনীল দেবনাথের ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা, কুশিয়ারা ট্রেডিংয়ের আতাউর রহমানের ৬ লাখ ৫০ হাজার, জনৈক শাহিন মিয়ার ৩ লাখ টাকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিটে জালিয়াতি ও আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হলে যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার মতিঝিল থানায় দুর্নীতির মামলা করে। মামলাটি থানা থেকে পরবর্তীতে দুদকে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে যমুনা ব্যাংকের সাবেক ওই দুই ব্যবস্থাপক আত্মগোপনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যমুনা ব্যাংক আমানতকারী পরিবারগুলোকে তাদের টাকা অচিরেই ফেরত দেয়ার জন্য বারবার আশ্বস্থ করে। কিন্তু আজোবধি তাদের আমানতের টাকা ফেরত দেয়নি। শাখা ব্যাংকগুলো দুদকে মামলার অজুহাত দেখিয়ে তাদের টাকা আটকে রেখেছে। গ্রাহকদের বক্তব্য মামলার বাদী স্বয়ং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং আত্মসাতকৃত টাকা ব্যাংকেরই। আমানতকারীদের মামলার সঙ্গে ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও টাকা ফেরত না দেয়ায় আমানতকারীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকে রেখে এখন পথে বসেছেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট শাখার তদন্তের পর প্রবাসী হায়দার আলী পরিবারের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য যমুনা ব্যাংককে চিঠি দেয়। তবে ব্যাংক থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বলা হয়, দুদকে মামলা চলাকালীন টাকা দেয়া যাবে না। তবে গ্রাহক হায়দার আলীর বক্তব্য, ব্যাংক তার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট শাখার উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা হায়দার আলীর টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেছি। যমুনা ব্যাংক জানিয়েছে, মামলা চলছে। তবে এ মামলার সঙ্গে গ্রাহকের টাকা কি সম্পর্ক তা আমরাও বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়ের করা মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
×