ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

ইউরোপের বামদের কেন কোন ভবিষ্যত নেই

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইউরোপের বামদের কেন কোন ভবিষ্যত নেই

ইউরোপকে এখন একাধিক ভূত তাড়া করছে- সন্ত্রাসবাদ, চরম দক্ষিণপন্থীর পুনরুত্থান তুরস্কের অস্থিরতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রকল্পের ভাঙ্গন। আর মহাদেশজুড়ে মূলধারার রাজনীতি অর্থাৎ সনাতনী বাম দলগুলো সঙ্কটকবলিত হয়ে পড়েছে। জার্মানিতে একদা মহাশক্তিধর সরকারী দলের জাতীয় নির্বাচনে প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট ওলাদের রেটিং ১৫ শতাংশের আশপাশে চলছে। স্পেনের সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির জনসমর্থন এক দশকে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্রীসের প্রধান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এক দশক আগে সেখানে নির্বাচনে জিতত এখন সেখানে ৫ শতাংশও আসন পায় না। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় একদা অজেয় সোশ্যাল ডেমোক্রেসির দলগুলো থেকে ভোটাররা উত্তরোত্তর মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। দক্ষিণপন্থী পপুলিস্টরা সেখানে বাজিমাত করছে। ব্রিটেনের লেবার পার্টি আধুনিক বামদের প্রায় সমস্ত সঙ্কট ধারণ করে আছে। নির্বাচনে তাদের রেটিং ১০ বছর আগে যে নিচু অবস্থায় ছিল সেই একই জায়গায় আটকে আছে। ইউরোপের লেবার পার্টির অবস্থাগুলোও এ থেকে ভিন্ন কিছু নয়। লেবার পার্টির এই সমস্যাগুলো সিস্টেমিক সমস্যা যা অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামোর গহীনতম অঞ্চলে নিহিত। বামদের মূল আদর্শ সাম্য, সংহতি ইত্যাদি কালোত্তীর্ণ সন্দেহ নেই। কিন্তু একদা এরা যা থেকে শক্তি আহরণ করেছে সেই সবকিছুই হয় অদৃশ্য হয়ে গেছে নয়ত দ্রুত সঙ্কুুচিত হয়ে পড়ছে। পাশ্চাত্যের বামরা তিনটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রথমত. চিরাচরিত শ্রম এবং শ্রমিকের ধারণাটি ফিকে হয়ে আসছে। সে জায়গায় এখন মানুষকে সাময়িক কাজকর্ম ও ক্রমবর্ধমান আত্মনিয়োগের এক নতুন যুগের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। অচিরেই হয়ত সেখানে অটোমেশনের সম্পূর্ণ নতুন যুগ আসবে। দ্বিতীয়ত দক্ষিণপন্থীদের নেতৃত্বে বিশ্বায়নের বিরোধিতার এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে যারা বহিরাগতদের ‘অবিশ্বাসের চোখে দেখে। তৃতীয়ত. রাজনীতি দ্রুত খ-িত হচ্ছে এবং তার ফলে কোন একটি দল বা মতাদর্শ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এমন ধারণা বস্তাপচা জিনিসে পরিণত হয়েছে। বিংশ শতাব্দী সত্যিকার অর্থে শেষ হয়ে গেছে এবং এই একবিংশ শতাব্দীতে বামরা অর্থপূর্ণভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে সুগভীর সন্দেহ আছে। সেই ২০০৫ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, ‘আরেকটা পরিবর্তন আসছে। সেই পরিবর্তনশীল বিশ্বের চরিত্রটা ঐতিহ্যগতভাবে ভিন্ন সেখানে দুর্বলতা, কোমলতার কোন ক্ষমতা নেই। অতীতের সুনাম, সুখ্যাতির কোন মর্যাদা নেই। এর কোন প্রথা নেই, আচার নেই। এটা নানাবিধ সুযোগে পরিপূর্ণ। তবে সেই সুযোগ শুধু তারাই পায় যারা দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে, অভিযোগ প্রকাশে মন্থর, মুক্তমনা, পরিবর্তন সাধনে আগ্রহী ও সক্ষম।’ বাস্তবেই এই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব চরিত্রগতভাবে ভিন্ন। এখানে শ্রমিক দল তথা বামপন্থীরা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাদের শক্তির অন্যতম স্তম্ভ যে ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা তাদের সংখ্যা সর্বকালের সর্বনিম্নে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারি শিল্প অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং চিরাচরিত শ্রেণী সচেতনতাও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই ভিত্তিগুলো ধসে পড়ায় শ্রমিক দলের শিল্প জাতীয়করণ ও সম্পদ পুনর্বণ্টনের পুরনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো ধসে গেছে। এদিকে বিংশ শতাব্দীর পুরনো অর্থনীতিতে বিশিল্পায়নের কারণে আর্থিক ও সার্ভিস সেক্টরে অস্থিরতা ও ভাঙ্গনের যৌক্তিক পরিণতিতে সে জায়গায় আবির্ভূত হয়েছে নতুন ডিজিটাল ব্যবসা যেটাকে অনেকে নাম দিয়েছেন প্লাটফর্ম পুঁজিবাদ, সেখানে পণ্য, সার্ভিস ও শ্রম দ্রুত জনগণ, কোম্পানি ও বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে বিনিময় করা যায়। যেমন উবার, ই-বে, এয়ারবিএনবি ও টাস্কর‌্যাবিটের কথাই ধরা যাক। এরা ফ্রিল্যান্স শ্রমিক বা কর্মীদের সেই সব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয় যাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ, ডেলিভারি দেয়া বা বাড়ি বদল করার কাজে সাহায্যের প্রয়োজন। এর ফলে খুচরা ও পাইকারি কারবারীরা কোণঠাসা অবস্থায় চলে গেছেই শুধু নয়, উপরন্তু ট্রেড ইউনিয়নগুলোর চিরাচরিত ভূমিকাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা আরও খর্ব হয়ে গেছে। আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এত দ্রুতগতিতে ঘটে চলেছে যে রাষ্ট্র তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারছে না। বামদের সুবর্ণ যুগটার সঙ্গে আজকের কোন তুলনাই চলে না। তখন কাজ শেষে কারখানার গেট খুলে যেত। হাজার হাজার শ্রমিক বেরিয়ে আসত। অপরিবর্তনীয় দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় তারা ছিল ঐক্যবদ্ধ। তারা এমন এক রাজনৈতিক শক্তিকে সমর্থন করতে প্রস্তুত ছিল যারা তাদের ইউনিয়ন, রাষ্ট্র ও কল্পিত গণভিত্তিক পার্টিকে কাজে লাগিয়ে এক নতুন এবং অনেক ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবে। এখনকার অর্থনীতি সেই সব কাঠামোকে অতিক্রম করে গেছে এবং জনগণকে এত পূর্ণাঙ্গরূপে খ-িত করে ফেলেছে যে অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক কোয়ালিশন গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আজকের অর্থনীতিতে কাজের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনেক বদলে গেছে। এ যুগের শ্রমিক-কর্মচারীদের অনেকে ট্রেড ইউনিয়ন চেনে না। আজ ব্রিটনদের ৭ জনের ১ জন স্বনিয়োজিত। মার্কিন ‘ফোরবিস’ ম্যাগাজিনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ লোক অন্ততপক্ষে আংশিকভাবে ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে কাজ করবে। এভাবেই কথিত ‘গিগ ইকোনমি’র উদ্ভব ঘটেছে। সেখানে অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা ‘প্রিক্যারিয়েট’ নামে এক নতুন শব্দ ব্যবহার করছেন। এর দ্বারা জনগণের ক্রমবর্ধমান সেই অংশের কথা বোঝানো হয় যাদের জন্য কাজটা ব্যক্তিগত পরিচিতির ভিত্তি নয় বরং জীবনের সক্রিয়-অক্রিয় অংশমাত্র। এমন এক বিশ্বে মানুষকে যেখানে ঘণ্টার ভিত্তিতে কাজ করানো এবং স্রেফ বোতাম টিপে সাময়িকভাবে কর্মচারী ভাড়া করা যায় সেখানে নিয়োগ কর্তারা বহু বছর স্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগে কেন যাবে। কাজ ও শ্রমের ধরন যেখানে আমূল পাল্টে যাচ্ছে সেখানে শ্রমিকরা আর সংহতির প্রতীক নয় বরং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের প্রতীক। দৃষ্টান্ত হিসেবে আধুনিক ব্রিটেনে একজন আদর্শ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব রূপটি হলো ক্যাব ড্রাইভাররা। এরা ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে কাজ করে। তারা নিট পারিশ্রমিক হিসেবে সপ্তাহে ৬০০ ডলার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। তবে তার জন্য তাদের সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত খাটতে হবে। ব্রিটেনের শ্রমিক দল ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের বাম সংগঠনগুলো শ্রম ও শ্রমিকের এই পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারছে না। তারা গতানুগতিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও নিরাপদ চাকরির পুরনো ধ্যান-ধারণাই আঁকড়ে আছে। কিন্তু আধুনিক শ্রমবাজারের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ওই সব মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা রাজনীতির প্রতি কখনই সমর্থন দেবে না। বরং তারা দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। কর্মজীবী মানুষ এখন আর মনোলিথিক জনগোষ্ঠীর অংশ নয়। তাদের অনেকে উত্তরোত্তর নিজেদের একক সত্তা হিসেবে ভাবে, যারা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ঠিক যেমন কোম্পানি ও কর্পোরেশনগুলো পরস্পর প্রতিযোগিতায় জড়িত থাকে। সমর্থকদের সঙ্গে বামদের বন্ধন ও সংহতির পুরনো ধ্যান-ধারণাগুলো একেবারেই ক্ষয়ে গেছে। কারণ শ্রম ও শ্রমিকের আগের ধারণাগুলোও দ্রুত বদলাচ্ছে। অটোমেশনের কারণেই এক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। তেমনি কর্মসংস্থানের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব এসে পড়বে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের হিসাবে প্রযুক্তির কারণে প্রায় দেড় কোটি ব্রিটিশের চাকরি হুমকির মুখে আছে। রিটেইল সেক্টরে এক-তৃতীয়াংশ চাকরিজীবীর চাকরি ২০২৫ সাল নাগাদ থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রম ও শ্রমিকের পুরনো শব্দাবলীর আর কোন আবেদন থাকছে না। পাশ্চাত্যের বামরা সড়ক বা মুক্তাঙ্গন দখলের আন্দোলনকে তাদের সংগ্রামের মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে। অতিমাত্রায় ধনী ও জনগোষ্ঠীর বাকি অংশের মধ্যে উৎকট ও সুস্পষ্ট ব্যবধান দেখিয়ে তারা বলে ‘আমরাই জনগোষ্ঠীর ৯৯ শতাংশ।’ বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখলে অতি ক্ষুদ্র আন্তর্জাতিক এলিট শ্রেণী ও বাকি জনগণের মধ্যে বিভাজন অতি প্রকট। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে এই বিভাজনের তেমন কোনই অভিব্যক্তি নেই। তার বদলে বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দ্বারা লালিত ক্রমবর্ধমান অসাম্যের অভিপ্রকাশ ঘটছে এমন এক সাংস্কৃতিক শূন্যতায় যা কিনা বামদের চিরায়ত সমর্থকগোষ্ঠীকে দুটি ভাগে বিদীর্ণ করে দিচ্ছে। সোশ্যাল ডেমোক্রেসি বা ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিজম যে নামেই বলা হোক না কেন একদা সেটা প্রগতিশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং ট্রেড ইউনিয়নের দ্বারা প্রতিনিধিত্বশীল শ্রমিক শ্রেণীর অংশবিশেষের সমর্থনের ওপর গড়ে উঠেছিল। এখন ওই দুই শ্রেণীর মিলিত জনগোষ্ঠী বামদের ওপর শ্রমিক শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান বিক্ষুব্ধ অংশকে দেখে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে। ইউরোপের মূলধারার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দল তথা বামদলগুলো ক্রমাগত শক্তিহীন হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ আরেক ধরনের পার্টি বা চ্যালেঞ্জার দলগুলোর উত্থান। চ্যালেঞ্জার দলগুলো ইউরোপীয় ঐক্য ও অভিবাসন সমস্যাকে সামনে তুলে আনে সেগুলোকে মূলধারার বাম দলগুলো প্রায়শই খাটো করে দেখে। এই কারণ ও অন্য আরও কারণে বামদলগুলোর গণভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং পাশাপাশি শক্তিবৃদ্ধি ঘটছে চ্যালেঞ্জার দলগুলোর। এসব দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফ্রান্সের ফ্রন্ট ন্যাশনাল, নেদারল্যান্ডস এবং অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টি, স্পেনের পোডিমোস এবং ইতালির ফাইভ স্টার মুভমেন্ট। পশ্চিম ইউরোপজুড়ে এই দলগুলো রাজনীতিতে কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষকে সোচ্চার রূপ দিয়েছে। এরা দলীয় প্রতিযোগিতার প্রকৃতির রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারে না গিয়েও রাজনৈতিক এজেন্ডাকে ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছে। ডেনমার্কের গত নির্বাচনে ডেনিস পিপলস পার্টি মধ্য ডান শিবিরের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু মধ্য ডান কোয়ালিশন সরকার গঠনের আকার থাকলেও তারা বিরোধী দলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য, সরকারে থাকলে যে দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন হয় সেটা পরিহার করা অথচ ইমিগ্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের প্রভাব অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশে মধ্য বামপন্থী দলগুলো ক্ষমতায় না থাকলেও যে অল্প ক’টি দেশে ক্ষমতায় আছে সেখানেও তারা যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে আছে। যেমন জার্মানির কথাই ধরা যাক। সেখানে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আগের অবস্থান হারিয়ে এ্যাঞ্জেলা মের্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে গ্র্যান্ড কোয়ালিশনে জুনিয়র অংশীদার হয়ে আছে। সমাজে ঘটে যাওয়া সুগভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন বামদের কঠিন সমস্যায় ফেলেছে। তাদের জন্য পরিস্থিতি এমন জটিল রূপ ধারণ করেছে যে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে পুরনো ধ্যান-ধারণাগুলো ভ-ুল হয়ে যাচ্ছে। চিরায়ত শ্রমঘন ভারি শিল্পগুলোর জায়গায় এসেছে অধিকতর সার্ভিসমুখী অর্থনীতি যেখানে কাজের ধারাটা অনেক নমনীয়। আজ ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা ক্রমবর্ধমানহারে সরকারী খাতে কেন্দ্রীভূত। এতে বামদের মূল নির্বাচনী ভিত্তি সঙ্কুুচিত হয়ে পড়েছে। ব্রিটেনের শ্রমিক দলের নির্বাচনী ব্যর্থতার অন্যতম কারণ তারা প্রাইভেট সেক্টরের অবস্থার প্রতি তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি কিংবা সেটা অনুধাবন করতে পারেনি। বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কট বা মন্দাও বামদের কঠিন দুর্বিপাকে ফেলেছে। কিছু কিছু মধ্য বামদল মন্দা আঘাত হানার সময় যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড ও গ্রীসে ক্ষমতায় ছিল। মন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় এই দলগুলোকে পরে চড়া মূল্য দিতে হয়। নির্বাচনের ময়দানে তারা আর সুবিধা করতে পারেনি। ইউরোপীয় বামদের কি পরিণতি দাঁড়াবে? অন্তত মধ্য বামরা আর টিকে থাকতে পারবে না, তাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। আশির দশকে তাদের যে নেতৃত্ব, যে কল্পনাশক্তি ও দূরদৃষ্টি এবং যে ভবিষ্যত ছিল এই ২০১৬ সালে তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। কোন কোন দেশ দুর্বল হয়ে পড়লেও মধ্য বাম ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। কিন্তু পরিশেষে তারা দিনকে দিন দুর্বল হয়ে পড়বে, এদের অনুসারীর সংখ্যা কমবে। তারপর নির্বাচন এলে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কাজেই ইউরোপের বামদের ভবিষ্যত বলতে কিছুই নেই এবং সম্ভবত থাকবেও না। সূত্র : গার্ডিয়ান
×