ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

গ্যালারি চিত্রকে অপার জামানের স্থাপনাশিল্প প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গ্যালারি চিত্রকে অপার জামানের স্থাপনাশিল্প প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরুণ শিল্পী অপার জামান। চারুশিক্ষায় অধ্যয়ন করছেন যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি ছুটির ফাঁকে এসেছেন ঢাকায়। ঘুরে বেড়িয়েছেন শহরের নানা প্রান্তে। প্রত্যক্ষ করেছেন যাপিত জীবন। অবলোকন করেছেন মানুষের কর্মতৎপরতা এবং শহরের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা বিষয়। নবীন শিল্পীর সে ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে স্থাপনাশিল্পে। সেখানে আছে বিপর্যস্ত জীবনের কথা, বিপন্ন পরিবেশের চিত্র কিংবা বাতিল বলে গণ্য হওয়া পণ্যের অব্যক্ত হাহাকার। আর এসব শিল্প সৃজনের ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছেন নিরীক্ষার পথ। আলোর সঙ্গে সুরের সংযোগ এবং কাঠ, গজাল, লোহার পাতসহ নানা ধাতব বস্তুর সম্মিলনে গড়া হয়েছে শিল্পকর্মগুলো। সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে শুক্রবার থেকে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হলো ডিসকরডেন্ট শীর্ষক স্থাপনাশিল্প প্রদর্শনী। ছুটির দিনের সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি ও শিল্প-সমালোচক রবিউল হুসাইন। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন অপার জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক শিল্পী মনিরুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, আবুল বারক্্ আলভীসহ নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তরুণ শিল্পী অপার জামানের শিল্পযাত্রা শুরু হলো। স্থাপনাশিল্পগুলোর মাধ্যমে এ শিল্পী তার ভেতরের ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন। তার শিল্পে নানা কিছুর সঙ্গে চমৎকারভাবে আলোর ব্যবহারে উদ্ভাসিত হয়েছে বিষয়। ফলে সেটা দেখার পর এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের স্থাপনাশিল্পের এখন নানাভাবে কাজ হচ্ছে। ক্রমশ আধুনিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে এ শিল্প-মাধ্যমটি। এ তরুণ শিল্পীর কাজের মধ্যেও দৃশ্যমান হয়েছে সে প্রবণতা। এছাড়া সে এখন অনেক কিছু দেখছে ও জানছে। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে তার শিল্পধারাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রবিউল হুসাইন বলেন, আধুনিক শিল্পের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে স্থাপনাশিল্প। উপমহাদেশে অবন ঠাকুর প্রথম এ শিল্পধারাটির ধারণা মেলে ধরেন। আপাতদৃষ্টিতে মূল্য নেই অথচ নির্মাণের মাধ্যমে সেটিকে মূল্যবান করে তোলা হচ্ছে স্থাপনাশিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য। অপার জামানের কাজের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টির প্রয়োগ ঘটেছে। খুব তুচ্ছ জিনিসকেও সে অবয়বের মাধ্যমে শিল্পে রূপান্তর করেছে। তাই শিক্ষানবিস হলেও তার কাজ দেখে মোহিত হতে হয়। শিল্পের মাঝে রেখেছে তার সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর। অনুভূতি প্রকাশ করে অপার জামান বলেন, মূলত ব্যক্তি কিংবা মানুষের জীবনকে উপজীব্য করেই সৃষ্টি হয়েছে আমার শিল্পকর্ম। স্পেসের মাধ্যমে ফাউন্ডিং অবজেক্ট নিয়ে কাজ করেছি। এক মাস আগে ঢাকায় এসে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াই। তখন বিভিন্ন বিষয় অবলোকন করি। এ অবলোকন আমার ভেতরে নানামুখী ভাবনার সৃষ্টি করেছে। সেসব ভাবনাকেই প্রকাশ করেছি আমার শিল্পকর্মে। আমি নিজের শিল্পকর্ম সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলতে চাই না। প্রতিটি মানুষের রয়েছে নিজস্ব মনন। প্রত্যেকের ভাবনার মধ্যে রয়েছে স্বতন্ত্র। তাই দর্শক তার নিজের ভাবনায় উপলব্ধি করবে আমার শিল্পের বিষয়কে। আলোকে ছাপিয়ে কালো গ্রাস করছে জীবন, পরিবেশ। বাতিল শিল্পবর্জ্যরে উপকরণগুলো যেন পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলতে চাইছে কিংবা বিপর্যস্ত জীবনের কথা। আবার সেসব বাতিল জিনিস ধ্বংস হতে হতেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। সে ক্ষয়িষ্ণু জীবনেও রয়েছে ছন্দ, যে ছন্দ ছেঁড়া চটের বুননে, যে ছন্দ পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকার সারি সারি সুতোয় ধনুকের ছিলার মতো টানে। অন্ধকার সবকিছু গ্রাস করে নিতে চায়, সে আগ্রাসনের চেষ্টার মাঝেও জীবন আলো হয়ে টিকে রয়েছে। পুরোটা গ্রাস করতে দিচ্ছে না। চলতি সময়ের গল্প, মানুষের টিকে থাকার লড়াই আর ইতিহাসের নানা কাহিনীকে উপজীব্য করে ছবি এঁকেছেন শিল্পী অপার জামান। জীবনের নানা গতিপ্রকৃতি আর রংবেরঙের সংস্কৃতিকে তিনি মেলে ধরতে চান তার নিজস্ব ঢঙে। সব মিলিয়ে সাতটি স্থাপনাশিল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য।
×