ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া কিনতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চামড়া কিনতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকসহ দশ বাণিজ্যিক ব্যাংক এবার ব্যবসায়ীদের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। গত কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে, তার সিংহভাগই আদায় হয়নি। এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কমিয়ে দিয়েছে ঋণের পরিমাণ। মূলত চামড়ার বড় সরবরাহ আসে কোরবানির ঈদে। এ ঈদেই বেশি চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ দেয়ার উদ্যোগও থাকে ব্যাংকগুলোর। চামড়া খাতে দেয়া এবারের ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ। জানা গেছে, প্রতি বছরই এ খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও ঋণ নেয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমছে। সোনালী ব্যাংক ১০০টি থেকে কমিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে, জনতা ব্যাংক ৭৮টি থেকে কমিয়ে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে, রূপালী ব্যাংক ৩০টি থেকে কমিয়ে চারটি এবং অগ্রণী ব্যাংক ৭৫টি থেকে কমিয়ে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে এবার ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের নীতিমালা অনুসরণ করে ঋণ দেয়া হবে। যারা ভাল গ্রাহক কেবলমাত্র তাদেরই ঋণ দেয়া হবে। তবে ঋণ বিরতণের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে সামান্য বেশি হতে পারে। সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর চামড়া কেনায় সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটি চামড়া কিনতে ২০ ব্যবসায়ীকে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করছে। এজন্য গত সপ্তাহে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভাও করেছে ব্যাংকটি। সভায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগের ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে তাদের নতুন করে ঋণ দেয়া হবে। গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল ব্যাংকটি। দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানই ঋণ ফেরত দিয়েছে। জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, নিয়মিত গ্রাহকদের এবার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। নতুন ঋণ পেতে আমরা আগের ঋণ পরিশোধে জোর দিয়েছি। রূপালী ব্যাংক সূত্র জানায়, চামড়া খাতে তারা আগে বেশি ঋণ দিলেও এবার অনেক কম দিচ্ছে। এখাতে এবার ব্যাংকটির প্রায় ১৬০ কোটি টাকার ঋণের চাহিদা ছিল। সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির চামড়া কিনতে গত বছর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এবারও প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের জন্য আবেদন করেছে। সব মিলিয়ে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠান ১৭০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে। তবে সোনালী ব্যাংক দুই গ্রাহককে ৫০ কোটি ও এক গ্রাহককে ২০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছরের মতো এ বছরও চাহিদামাফিক ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকটি। গত বছর ১৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এ বছর ১০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করেছে ব্যাংকটি। সরকারী খাতের বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এ খাতে সীমিত আকারে ঋণ দিয়ে থাকে। গত বছর ব্যাংকটি কোরবানির চামড়া কিনতে ছয় কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও এ খাতে সীমিত আকারে ঋণ দিয়ে থাকে। এছাড়া বেসিক ব্যাংক ও বেসরকারী খাতে সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ দশ ব্যাংক এ খাতে সীমিত আকারে অর্থায়ন করছে। ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চামড়া কেনায় দেয়া ঋণ সহজে আদায় হয় না। তাই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখায় না। তারপরও চামড়া ব্যবসায়ী ও সরকারের পরামর্শে ঋণ দিতে হয়। জানা গেছে, পশুর ভালমানের চামড়ার সিংহভাগ যোগান আসে কোরবানির পশু থেকে। কোরবানি করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বাছাই করা পশু ক্রয় করে থাকেন। ফলে শিল্পের জন্য উন্নতমানের চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীরাও এ সময় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। ট্যানারিশিল্পে বার্ষিক চামড়ার চাহিদার বড় অংশই সংগ্রহ করা হয় কোরবানি দেয়া পশু থেকে। এ চামড়া অন্যান্য সময় সংগৃহীত পশুর চামড়া থেকে উন্নতমানের। বিপুল পরিমাণ চামড়ার সরবরাহ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ সময় সব চামড়া নিজেদের নগদ অর্থে কিনতে পারেন না। তাই প্রতিবছরই ঈদ-উল-আযহার আগে চামড়া খাতে ঋণ বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা তৎপর হন। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলোতে বিশেষত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ধরনা দিয়ে থাকেন। তবে তথ্যমতে, চামড়া খাতে ৪৫০ কোটি টাকার মতো খেলাপী ঋণ রয়েছে; যার বেশির ভাগই বিতরণ করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে। বর্তমানে এ খাতে ঋণ আদায়ের হার আগের তুলনায় ভাল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে চামড়া খাতে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেয়া হয়। এবারও একই পরিমাণে ঋণ মিলবে। তিনি বলেন, এসব ঋণ চলতি মূলধন হিসেবে প্রায় ১১ শতাংশ সুদে দেয়া হয়। অথচ রফতানি ঋণ হিসেবে দেয়া হলে ৮ শতাংশ সুদে তা পাওয়া যেত।
×