ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

শরীফ রুহুল আমীন

এক ধরনের সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এক ধরনের সন্ত্রাস

ইভটিজিং বাড়ছে বৈ কমছে না। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তাই মনে করিয়ে দেয়। ঢাকা শহরের অনেক প্রগতিশীল বাবা-মায়েরা তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠান হিজাব পরিয়ে। এটা যতটা না ধর্মীয় কারণে তার চেয়ে বেশি ইভটিজিং আতঙ্কে। ইভটিজাররা এতই বেপরোয়া যে, তাদের সামনে দিয়ে একটি কিশোরী বা তরুণী শালীন পোশাকে হেঁটে বা রিক্সায় গেলেও ইভটিজিং থেকে রেহাই পায় না। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আইন এরা তোয়াক্কা করছে না। ইভটিজাররা অনেকেই জঙ্গীসম ভয়াবহ ব্যাধিতে যেন আক্রান্ত। বিশেষত কেউ যদি ছত্রছায়ায় থাকে, তারা এমনই নির্ভয় যেন থানা পুলিশও কিনে নিয়েছে। প্রভাবশালীদের সম্প্রতি রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের একটি ক্লাস- এইট পড়ুয়া ছাত্রী ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হলো। প্রশ্ন হলো, ইভটিজিং কেন হয়? কারা এই ইভটিজার? এ সংক্রান্ত কয়টি ঘটনা সম্পর্কে মানুষ জানে? এদের শতকরা কত ভাগ শাস্তির আওতায় আসে? এসব প্রশ্নের উত্তর নিরাশাব্যঞ্জক । ইভটিজার সমাজের বিভিন্ন স্তরের ছেলেদের মধ্য থেকেই হয়। তবে ভবঘুরে বেকার, অর্ধশিক্ষিত ছেলেদের মধ্যেই এটি হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ইভটিজিং এক ধরনের নৃশংস সন্ত্রাস। মায়ের সঙ্গে রিক্সায় যাচ্ছে সেই রিক্সা থামিয়েও ইভটিজাররা মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়, এ রকম নজির ঢাকা শহরে দেখা গেছে। ইভটিজিং বন্ধের জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন হয়েছে বিভিন্ন সময়। ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ, দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার, প্রভাবশালী কর্তৃক সরকারী জায়গা দখল করা, দোকানে, ফুটপাথে হকারের সঙ্গে চাঁদাবাজি সবই একই সূত্রে গাঁথা। ইভটিজিং বন্ধে তাই মানুষকে মানুষ কিভাবে করা যাবে- সেই কর্মসূচী নিতে হবে। আমাদের সমাজে মানবিক আদর্শ প্রচারের জন্য ত্যাগী মানুষের খুব বেশি অভাব পরিলক্ষিত হয়। শুধু স্কুল-কলেজের সিলেবাসে ইভটিজিং বিষয়ে একটা চ্যাপ্টার ঢুকিয়ে দিলেই হবে না। যে শিক্ষক ক্লাসে বা স্কুলের বারান্দায় ধূমপান করবেন তিনি যতই ধূমপানের ক্ষতি বিষয়ে ক্লাসে পড়ান না কেন তার ফল হবে শূন্য। শিক্ষকরা আজ অন্যান্য পেশার লোকের মতোই অর্থগৃধ্নু। ডাক্তাররা হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে প্রজাসুলভ ব্যবহার করেন। সমাজের কার কাছে তরুণ-তরুণীরা শিখবে? আদর্শ, ত্যাগ, তিতীক্ষা, মায়া-মমতা, পরোপকার এসব একটা সংস্কৃতি- যা পূর্বে ছিল, এখন দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। এ দেশের তরুণীরা তাই ইভটিজিং আর ভালগরিজমের (বিকৃতি) শিকার হচ্ছে। শিশু নির্যাতন বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকান, দেখতে পাবেন সেখানে মাদার তেরেসার মতো মানুষের অভাব নেই। বহু আশ্রমে অনাথ অনাথিনীরা মানুষ হচ্ছে মানবিক বোধ ও সংস্কৃতি নিয়ে। আমাদের এখানে সে রকম সংগঠন খুঁজে পাবেন না। সহনশীলতা, চরিত্র-মাধুর্য, পরোপকার এসবের পেছনে হাতেগোনা দু’চারজন শাদা মনের মানুষ যারা আছেন তাদের নিবু নিবু আলো দিয়ে। আঁধার রাতের ঝঞ্ঝার মোকাবেলা করা খুবই দুঃসাধ্য তা দিয়ে। শেরেবাংলানগর, ঢাকা থেকে
×