ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের চোখ ধাঁধানো আলো, বিপদে পাইলট

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ৩০ জুলাই ২০১৬

 উৎসবের চোখ ধাঁধানো আলো, বিপদে পাইলট

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিরাটির দিক থেকে নামছিল কাতার এয়ারওয়েজের বিমান। যশোহর রোড পার হওয়ার সময়ে মাটি থেকে বিমানটি তখন প্রায় ২০০ ফুট উপরে। আচমকা ধাঁধিয়ে যায় পাইলটের চোখ। ককপিটের সামনে খেলা করে যায় লেজার রশ্মি। গত ৮ তারিখ গভীর রাতের ঘটনা। বিমানের গতি তখন ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। কলকাতা বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়ে থেকে কয়েকশো মিটার দূরে বিমান। বিশেষজ্ঞ পাইলটদের কথায়, এই ব্রাহ্ম মুহূর্তে পাইলটকে সব চেয়ে বেশি সজাগ থাকতে হয়। মাটিতে নেমে আসাটাই সব চেয়ে কঠিন। বিপুল ওজনের বিমানকে তখন প্রাণপনে টানতে থাকে পৃথিবীর মাটি। এই অবস্থায় মসৃণ ভাবে মাটি ছোঁয়াটা একটা চ্যালেঞ্জের পর্যায়ে চলে যায়। বিমানবন্দরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এমন সময়ে পাইলটের চোখ ধাঁধিয়ে গেলে যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ সে দিন পাইলট পরিস্থিতি সামলে নির্বিঘ্নে নেমে আসার পরে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে (এটিসি) বিষয়টি জানান। পরে বিমানবন্দরের তরফে প্রাথমিক খোঁজখবর করে জানা যায়, যশোহর রোডের ধারে কোনও বিয়েবাড়ি বা জলসা চলছিল। সেখানে নাচের আসরের জন্য ওই ঘোরানো লেজার আলো লাগানো হয়েছিল। যে আলো ঘুরতে ঘুরতে ককপিটের কাচ ছুঁয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হবে বলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। এই প্রথম কলকাতায় নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করছে এয়ারলাইন অপারেটর কমিটি (এওসি)। বিভিন্ন বিমান সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি এই কমিটি শুক্রবার যে আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল, সেখানেই এই লেজার আলোর বিষয়টি উঠে আসে। এক বক্তা জানান, চেন্নাই বিমানবন্দরে বেশ কয়েক বার এমন ঘটনা ঘটার পরে স্থানীয় পুলিশের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে চেন্নাই এটিসি-র সরাসরি হটলাইন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এ রকম ঘটনা ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ দিন নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। এওসি-র চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত জানান, কলকাতা বিমানবন্দরের টারম্যাকে (যেখানে বিমান দাঁড়ায়) যাত্রীদের বাস, বিমানের সিঁড়ি, মালবাহী গাড়ি, জ্বালানির ট্যাঙ্কও যাতায়াত করে। সর্বেশের কথায়, ‘‘গত ছয় মাসের মধ্যে এমন দু’তিনটি ঘটনার কথা জানা গিয়েছে, যেখানে ওই টারম্যাকে হয় একটি বাস গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানকে ধাক্কা মেরেছে। নয়তো একটি বাসের সঙ্গে অন্য বাসের ধাক্কা লেগেছে। আগামী দিনে বিমানের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং এই ধরনের বাস ও অন্য গাড়িও বাড়বে। নিয়মিত প্রশিক্ষণের খুব প্রয়োজন।’’ এমনকী এই ধরনের যানবাহনের চালকদের যাতে পরপর দু’দিন রাতের ডিউটি করতে না হয়, তার জন্যও আলোচনা সভায় প্রস্তাব ওঠে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর ডিরেক্টর (এয়ার সেফটি) মণীশ কুমার বলেন, ‘‘যে বিমান সংস্থা চালকদের নিয়োগ করছেন, এটা তাদেরই দেখতে হবে। প্রতি মুহূর্তে প্রত্যের কর্মীকে সজাগ রাখার দায়িত্ব তাদেরই।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×