ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থানীয়দের ভাষ্য

আগে থেকেই কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিং ছিল শিবিরের আস্তানা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৭ জুলাই ২০১৬

আগে থেকেই কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিং ছিল শিবিরের আস্তানা

আরাফাত মুন্না ॥ বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের হরতালসহ সরকারবিরোধী কর্মকা-ে কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত ওই বাড়ি থেকে তিন-চার যুবক অংশ নিত, এমন তথ্য উঠে এসেছে স্থানীয় এক বাসিন্দার বর্ণনায়। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই ভবনে বেশ কয়েকবার অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানের সময় একবার কয়েকজন আটকও হয়েছে বলে জানান অপর এক স্থানীয়। এদের চলাফেরা অন্যদের তুলনায় একটু ভিন্ন বলে জানান স্থানীয় এক মুদি দোকানের কর্মচারী। জাহাজ বিল্ডিং অনেক আগে থেকেই জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। স্থানীয়রা জানান, জামায়াতের হরতালের সময় ফজরের নামাজের পর ওই ভবন থেকে আসা যুবকরা জামায়াত-শিবিরের মিছিলে মিশে যেত। ওই সময়গুলোতে কল্যাণপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ, বাকী মসজিদ ও শাহী মসজিদ থেকে বের হয়ে জাহাজ বিল্ডিংয়ের সামনের মোড়ে একত্রিত হয়ে মিছিল বের করা হতো বলে জানান কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়া স্থানীয় ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, মিছিল শেষে ককটেলও ফাটাত ওরা। তবে এই অভিযানে নিহত নয় জনের মধ্যে মিছিলে অংশগ্রহণকারী কেউ আছে কি-না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। কল্যাণপুর ১১ নম্বর রোডের অপর এক বাসিন্দা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই ভবনে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানের সময় একবার কয়েকজন আটকও হয়েছেন। ওই ভবনের কাছের এক মুদি দোকানের মালিক জনকণ্ঠকে বলেন, পুরো এলাকাটাতেই মেস ভাড়া দেয়া আছে। এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না, যেখানে অন্তত একটি মেস নেই। এই দোকানী বলেন, ছয় তলাবিশিষ্ট জাহাজ বিল্ডিংয়ের ওপরের তিন তলা পুরোটাই মেস। এই বিল্ডিংয়ের অধিকাংশই শিবিরের মেস বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়েই এই এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিবির সদস্যদের গ্রেফতার করে। জামায়াতের হরতালেও এই এলাকায় মিছিল হয়, ককটেল ফোটে। ওদের কারণে নিজেরাও আতঙ্কে থাকেন বলে জানান তিনি। পাশের আরেক মুদি দোকানের কর্মচারী রোমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ওই বিল্ডিংয়ের অনেকেই আমাদের দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিত। তাদের সবারই বয়স কম। ২৫-২৬ বছর হবে।’ রোমান বলেন, ‘এরা দোকানে আসলে বেশি সময় থাকত না। কখনই বাকিতেও কেনাকাটা করত না।’ অন্যদের চেয়ে একটু অন্যরকম মনে হতো বলেও জানান রোমান। জঙ্গীবিরোধী এই অভিযানে নিহতদের মধ্যে কেউ দোকানে আসত কি-না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি রোমান। এদিকে, কল্যাণপুরের এই জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে আহত অবস্থায় আটক হাসান এইচএসসি পাস করার পর মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। গত বছর ২৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টায় কোচিংয়ের যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে আর ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও তখন থেকে বন্ধ। হাসপাতালে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আইএসে যোগ দিতে তার সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল বলেও জানিয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জাহাজ বিল্ডিংয়ের ওই মেসে হাসান বাবুর্চির কাজ করত বলে দাবি করেছে। হাসান ছাড়াও আরও ১০ জন ওই মেসে থাকত বলে জানা গেছে। জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত হলেও এই বাড়িটির প্রকৃত নাম তাজ মঞ্জিল। দেখতে অনেকটা জাহাজের মতো হওয়ায় এ নামেই পরিচিতি পায়। বিল্ডিংয়ের বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা আতাহার আলী। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, ভাড়াটিয়ারা তথ্য গোপন করে বাড়ি ভাড়া নেয়। ওই বাড়ির মালিকও থানায় তথ্য জানায়নি। তথ্য গোপন করার অপরাধে প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এসআই মিজানুর রহমান।
×