ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমিক ফান্ড গঠন হলেও বিরতণ নেই

সাইফ পাওয়ারটেক মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৪ জুলাই ২০১৬

সাইফ পাওয়ারটেক মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখাচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড (বিএএস) না মেনে নিয়মিতভাবে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেবা খাতের কোম্পানি সাইফ পাওয়ার টেক। একই সঙ্গে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বিএএস-১২ অনুযায়ী, জমি রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপরে ডেফার্ড টেক্স গণনা করতে হয়। যা নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান ফিডের ক্ষেত্রে করতেও দেখা গেছে। আমান ফিডের তথ্য কণিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকার জমি রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপরে ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ডেফার্ড টেক্স চার্জ করে। কিন্তু সাইফ পাওয়ারটেকে ৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাস থাকলেও কোম্পানিটি ডেফার্ড টেক্স চার্জ করেনি। এই ডেফার্ড টেক্স বা বিলম্বিত কর চার্জ না করায় কোম্পানিটি প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড (বিএএস)-১৬ অনুযায়ী, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ। কিন্তু সাইফ পাওয়ারটেক কর্তৃপক্ষ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপরে অবচয় চার্জ না করে নিয়মিতভাবে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। বিএএস-৩৬ অনুযায়ী, অবচয়যোগ্য সম্পদের বর্তমান মূল্য যদি ভবিষ্যতে সুবিধা আনার তুলনায় কম হয় তাহলে ইমপেয়ারম্যান্ট করতে হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ও সম্পদ কমে আসে। যা হওয়াটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সাইফ পাওয়ারটেকও অন্যান্য কোম্পানির মতো ইমপেয়ারম্যান্ট টেস্ট না করিয়ে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে প্রতারণা করে আসছে সাইফ পাওয়ারটেক কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটি ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, ফান্ড গঠন করলেও বিতরণ করে না। এছাড়া ওই অর্থ আবার অন্য কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগও করে না। শুধু বছরের পর বছর ফান্ড গঠন করে। ২০১২-১৩ হিসাব বছর থেকে কোম্পানিটি এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার ফান্ড গঠন করেছে। এছাড়া আইনটি ২০০৬ সাল থেকে কার্যকর হলেও সাইফ পাওয়ারটেক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সাল থেকে পালন করে। আইন অনুযায়ী কোম্পানিটির আগে থেকেই এই ফান্ড গঠন করা উচিত ছিল। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সাবেক হেড অব ইন্টারনাল অডিট সামসুর রহমান (এফসিএমএ) বলেন, বিএএস-১২ অনুযায়ী ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপরেও ডেফার্ড টেক্স গণনা করতে হয়। অন্যথায় সঠিক হিসাব করা হবে না। আর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য হিসাব। এক্ষেত্রে অবচয় চার্জ না করা হলেও মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হবে। বিএসইসির সাবেক অফিস অব দ্য চীফ এ্যাকাউন্টেন্ট, কনসালটেন্ট মো. মনোয়ার হোসেন (এফসিএমএ, সিপিএ, এফসিএ, এসিএ) বলেন, এ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড অনুযায়ী অবশ্যই ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর অবচয় চার্জ করতে হবে। অন্যথায় মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হবে। যা বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভুল তথ্য প্রদান করা হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) করপোরেট গবর্নেন্স ফাইন্যান্সিয়াল বিভাগের কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, যে কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে ইমপেয়ারমেন্ট টেস্টে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কোম্পানিগুলো গতানুগতিকভাবে তা না করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে থাকে। সাইফপাওয়ার টেকের কোম্পানি সচিব শফিক ৃসালেহীনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন বক্তব্য দেননি।
×