ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্যাশিত মেট্রোরেল

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ২৯ জুন ২০১৬

প্রত্যাশিত মেট্রোরেল

বাসে যানজটের ধকল সয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পৌঁছতে লাগে তিন ঘণ্টা! মেট্রোরেল চালু হলে এই পথ পাড়ি দেয়া যাবে মাত্র ৩৮ মিনিটে। চার মিনিট পরপর ট্রেন। একসঙ্গে যেতে পারবেন ৬০ হাজার যাত্রী! সত্যিই স্বপ্নের মতোই লাগছে শুনতে। সবকিছু ঠিক থাকলে মাত্র চার বছর পরেই এই স্বপ্ন বাস্তব রূপ নেবে। যানজটের শহর ঢাকায় নিঃসন্দেহে এ এক বৈপ্লবিক ব্যাপার! এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের দৈনিক দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় দিনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। যানজট নিরসনে সরকার স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন কর্তৃপক্ষ করতে চলেছে- এমন স্বস্তিদায়ক খবর মিলেছে কিছুকাল আগে। এতে সড়কের শৃঙ্খলা কিছুটা ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি। যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট আইনী কাঠামো হালনাগাদকরণ করা হচ্ছে। এটাও ভাল খবর। সবশেষে মিলল বহু প্রত্যাশিত মেট্রোরেল কর্মযজ্ঞের নিশ্চিত সংবাদ। বলা দরকার, বেশকিছু ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে রাজধানীর একাংশ তীব্র যানজটের কবল থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি যানজট আরও কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। তবে মনে রাখতে হবে, রাজধানীর সড়ক নানা ধরনের ব্যাধির শিকার। প্রথমত মাত্রাতিরিক্ত ভারাক্রান্ত থাকা। যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে হয় ঢাকার প্রতিটি রাস্তাকে। ফলে রাস্তাগুলো ক্ষয় হয় তাড়াতাড়ি। ছোট খানাখন্দ বড় গর্ত হয়ে উঠতে সময় লাগে না। তার ওপর বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি তো রয়েছেই। সামান্য বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে রাস্তার ওপর আরেক দফা ধকল যায়। পৃথিবীর যে কোন আধুনিক নগরীতে রুটিন অনুযায়ী রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলে। ফলে নগরবাসী কোন সমস্যায় পড়েন না। আমাদের দেশে রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে ওঠে বছরজুড়ে। আর সেসব মেরামত বা সংস্কারের কাজটি করা হয় কালেভদ্রে। মেট্রোরেলের খবরে স্বস্তির আতিশয্যে এই বাস্তবতা যেন আমাদের মেয়রদ্বয় ভুলে না যান। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৮ সালে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি গঠনের মাধ্যমে ঢাকার অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় কার্যকর পথসন্ধানের সূচনা হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে একাধিক গবেষণা, জরিপ ও স্ট্র্যাটেজিক প্রকল্প গ্রহণের পথে এগিয়ে অবশেষে সার্বিক দ্রুত গণপরিবহন উন্নয়ন প্রকল্পটির অধীনে ২০১৩ সালে সরকারী খাতে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড গঠিত হয়। এরপর তিন বছরের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়া সরকারের গতিময়তা এবং দায়বদ্ধতারই পরিচায়ক। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, প্রকল্প বাস্তবায়নকাল দীর্ঘায়িত হয়, হু হু করে ব্যয় বাড়ে এবং বাস্তবায়নকালে মানুষের দুর্ভোগ কম রাখার নির্ধারিত দায়িত্ব ঠিকাদাররা পালন করেন না। চলমান মগবাজার-মৌচাকসহ একাধিক ফ্লাইওভার প্রকল্প তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। নগরবাসী মেট্রোরেল বাস্তবায়নে এসব বিষয়ে দক্ষতা, মান রক্ষা ও স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করে। আরেকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী সড়কমন্ত্রীকে বলেছেন, প্রকল্পটি আগারগাঁও নয়, ফার্মগেট পর্যন্ত যেন সম্পন্ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। ফার্মগেট হলো ঢাকার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমমুখী প্রায় কোটি মানুষের ঢাকার কেন্দ্রস্থলে গমনাগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট। তাই মেট্রোরেলের প্রকল্প ফার্মগেট পর্যন্ত এগিয়ে রাখাই হবে যুক্তিযুক্ত। বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
×