ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৬ জুন ২০১৬

বিচারে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়

হারুনুর রশীদ বিচারের দীর্ঘ সূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিই জঙ্গীবাদকে উস্কে দিচ্ছে। সম্প্রতি দেশে টার্গেট সিরিয়াল কিলিংয়ের যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা এক প্রকার বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। সরকার যে অপরাধীদের বিচার করছে না তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে জঙ্গীবাদ বা জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর বিচারিক দীর্ঘ সূত্রতা একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক হত্যাকা- ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল। তৎকালীন খালেদা-নিজামীর সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্র জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়ে ওই সব হত্যাকা-ে উৎসাহ দেয়। নাটোরের আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন হত্যা, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা, খুলনায় এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, গাজীপুরের আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা এবং ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা এসবের পেছনে খালেদা-নিজামীর সে সময়কার সরকারের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রকাশ্যই ছিল। সে সময় অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্র উগ্রপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো দেশে হত্যার রাজত্ব কায়েম করেছিল। গত সাত বছরে শেখ হাসিনা সরকার জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ফলে তারা কৌশল পাল্টে দেশের মুক্তমনা, বুদ্ধিজীবী, বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশী নাগরিক এবং বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালিয়ে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য একটাই হতে পারে যাতে বিভিন্ন রাষ্ট্র সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, যখন কোন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে পৌঁছায় বা দ- কার্যকরের সময় হয় তখন বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় তাদের ভেতরকার একটা গ্রুপ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে শুরু করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ের সময় তা দেখতে পেয়েছি। এই মুহূর্তে জামায়াতের প্রধান ধনকুবের মীর কাশেম আলীর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া একেবারে শেষের পথে। গত এক-দেড় সপ্তাহে যে সিরিয়াল টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে তাতে দেখা যায় মীর কাশেম আলীর আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর পরই ঘটেছে। শুরুটা হয়েছিল সেই চট্টগ্রাম থেকে। আসলাম চৌধুরী বলুন আর মীর কাশেম আলীই বলুন তারা চট্টগ্রামের। পুলিশ সুপারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর পর নাটোরের খ্রীস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ, ঝিনাইদহের এক হিন্দু পুরোহিত ও পাবনার আশ্রমের কর্মচারী পা-ে হত্যার ঘটনাগুলো ধারাবাহিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আরেকটা বিষয় স্পষ্টÑ টার্গেট কিলিংয়ের ঘটানগুলো ঠিক সে সব এলাকায় ঘটেছে যেসব এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ও ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। গত কয়েক মাসে কয়েকজন মুক্তমনা মানুষকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হত্যার পর বিচার না হওয়ায় ধর্মীয় উগ্রপন্থী অপরাধীরা আরও বেশ সাহসী হয়ে উঠেছে, যার ফলে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করছে। অভিজিত রায়, অনন্ত বিজয় দাস, ওয়াশিকুর রহমান, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যা মামলাগুলোর চার্জশীট কি পুলিশ আজ পর্যন্ত দিতে পেরেছে? আরও অবাক করার বিষয় হলো ২০০৪ সালের একুশে আগস্টেও গ্রেনেড হামলার মামলার রায় আমরা আজ পর্যন্ত পাইনি। এই দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রমের ফলে অপরাধীরা একের পর এক সাহস পাচ্ছে এবং আরও বড় বড় অপরাধ সংঘটন করছে। বানীবহ, রাজবাড়ী থেকে
×