ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জ ও বি’বাড়িয়ার দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ৬ জুন ২০১৬

কিশোরগঞ্জ ও বি’বাড়িয়ার দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী বাদল চন্দ্র বর্মণ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আসামিদ্বয় ৩৪ জন হিন্দুকে আটক করে শ্মশান ঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া আসামিরা বলেন, হিন্দুরা মুসলমান না হলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হবে। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। জবানবন্দী শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীর জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম বাদল চন্দ্র বর্মণ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৯ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-দামপাড়া, থানা- নিকলী, জেলা- কিশোরগঞ্জ। আমি শুকনা মাছের ব্যবসা করি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স আনুমানিক ১৪ বছর ছিল। ঐ সময় আমার মা বাবার সঙ্গে আমি আমাদের দামপাড়ার গ্রামের বাড়িতে থাকতাম। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ওই সময় আমাদের গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো অত্যন্ত আতঙ্কে বসবাস করত। অনেক হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়। ওই সময় আমাদের দামপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টেকু আমাদের ওই ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে টেকু চেয়ারম্যান তার দল বল নিয়ে আমাদের গ্রামে এসে হিন্দু পরিবারগুলোকে বলে যে, তাদের আমাদের নিকলী থানার রাজাকার কমান্ডার আসামি সৈয়দ মোঃ হোসাইন পাঠিয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা যেন সকলে মুসলমান হয়ে যাই। নতুবা আমাদের গুলি করে হত্যা করা হবে। তখন আমরা ভয়ে মুসলমান হতে সম্মত হই। তারা করিম মৌলভীকে ডেকে এনে আমাদের কালেমা পড়ে মুসলমান বানায়। আমাদের প্রত্যেককে একটি করে টুপি দিয়েছে। সাক্ষী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের ৬ তারিখে বেলা আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে নিকলী থানার রাজাকার কমান্ডার মোঃ হোসাইন আনুমানিক ৫০/৬০ জন রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মিসহ একটি লঞ্চযোগে দামপাড়া বাজারের ঘটে আসে। সেই লঞ্চ থেকে ২০/২৫ জন রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মি ওই লঞ্চ নিয়ে আমাদের দামপাড়া গ্রামে বনবাসী সূত্রধরের বাড়ির ঘাটে আসে। এর পর তারা বাজারের দিকে যায়। বাজারে গিয়ে ১০/১২ জন হিন্দুকে আটক করে। পাকিস্তান আর্মিরা বনবাসী সূত্রধরের বাড়ির সামনে আটক রাখা ৩৯ জনকে লক্ষ্য করে বলে এই মালাউনদের নৌকায় করে নিকলী থানায় নিয়ে যাও। নিকলী থানায় আটককৃতদের মধ্যে ৩৫ জনের মধ্যে শ্মশানঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন আমাদের দামপাড়া গ্রামের বনবাসী সূত্রধর, সুনীল সূত্রধর, মধু সূত্রধর, সুনীল সূত্রধর, সুরেন্দ্র সূত্রধর, অবিনাশ সূত্রধার, আরাধন সূত্রধর, কার্তিক সূত্রধর, সুধীর সূত্রধর, মনিন্দ্র সূত্রধর, শিরিষ সূত্রধর, রজনী বর্মনও ছিল।
×