ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৫ পাক সেনার বিচার

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৯ মে ২০১৬

১৯৫ পাক সেনার বিচার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৫ পাকিস্তানী সেনা সদস্যের বিচারের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। এর অবশ্য যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিলম্বে হলেও বর্তমান সরকার একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী এদেশীয় দোসরদের বিচার করছে একে একে। দুঃখজনক হলো, প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর দ- কার্যকর হওয়ার পরপরই পাকিস্তান তাদের পক্ষাবলম্বন করে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এই প্রতিবাদ শুধু পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীই জানায়নি বরং তাদের সঙ্গে একই সুরে কণ্ঠ মিলিয়েছে মুসলিম লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও পাকিস্তান সরকার। এতে অবশ্য এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা আসলেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও শাসকদের পক্ষাবলম্বন করে ঘৃণিত গণহত্যায় লিপ্ত ছিল। তদুপরি এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের রায় যে সঠিক ও যথার্থ, সেটাই প্রমাণিত হয়। পাকিস্তান এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ, একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আলবদর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর আবারও তীব্র প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। তারা এই বলে হুমকি দিয়েছে যে, এবার তারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে যাবে নালিশ জানাতে। বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ যথারীতি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনারকে একাধিকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে লিখিত প্রতিবাদ তুলে দেয়া হয়েছে। অনুরূপ হয়েছে তুরস্কের ক্ষেত্রেও। সেক্ষেত্রেও পিছু হটেনি বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের এহেন সুদৃঢ় অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং একই সঙ্গে বিশ্ববাসীরও। অনেকটা এ প্রেক্ষাপটেই সামনে চলে এসেছে ১৯৫ পাক সেনার বিচারের প্রসঙ্গটি। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের নয়াদিল্লীতে স্বাক্ষরিত একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রেক্ষিতে ওই ১৯৫ যুদ্ধবন্দীকে ফেরত দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। অতঃপর পাকিস্তান বলছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় চুক্তি লঙ্ঘন করছে। পাকিস্তানের অন্ধ শাসককুল একবারও ভেবে দেখেনি যে, তারা অনেক আগেই এই চুক্তি ভঙ্গ করে বসে আছে। যেমন, চুক্তি মোতাবেক হস্তান্তরিত ১৯৫ পাক সেনার বিচার করার কথা ছিল পাকিস্তানের। তারা কোনদিনই তা করেনি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাপ্য সম্পদও তারা ফেরত দেয়নি আজ পর্যন্ত। তদুপরি বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের ফেরতও নেয়নি। অর্থাৎ ওই চুক্তি তারা নিজেরাই লঙ্ঘন করেছে পদে পদে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বলে, কোন পক্ষ যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তবে তা বাতিল হয়ে যায়। তদুপরি যেহেতু ত্রিদেশীয় চুক্তিটি সংসদে পাস হয়নি, সে কারণে এই চুক্তির আইনগত ভিত্তিও নেই। ১৯৫ পাক সেনার বিচারের জন্য প্রয়োজনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তাও চাওয়া যেতে পারে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অহঙ্কার ও গর্ব। ত্রিশ লাখ শহীদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে লাল-সবুজের অমলিন যে স্বাধীনতার পতাকা অর্জিত হয়েছে, সর্বদাই তা সমুন্নত রাখতে হবে। আর তাই একাত্তরে ঘৃণিত গণহত্যার জন্য দায়ী ১৯৫ পাক সেনার বিচার আজ পরিণত হয়েছে গণদাবিতে।
×