ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১০ মাসে কমেছে আড়াই শতাংশ

প্রবাসী আয়ে মন্দা কাটছে না

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৫ মে ২০১৬

প্রবাসী আয়ে মন্দা কাটছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী আয়ে মন্দা কাটছে না। প্রতি মাসেই কমছে রেমিটেন্স। এপ্রিল মাসে যে পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে তা মার্চের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কম। সেই সঙ্গে এটি আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। কারণ মূল্য হ্রাসের ফলে জ্বালানি তেলনির্ভর দেশগুলোয় কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের কাজ কমে গেছে। ফলে তারা আগের তুলনায় কম রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য কমে যাওয়া ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা সমস্যার কারণে প্রবাসীদের আয়ও কমে গেছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলনির্ভর দেশগুলোয় আয় কমে গেছে। ফলে ওইসব দেশের শ্রমিকরা বাড়তি আয় করতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল এই ১০ মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স বাবদ ১ হাজার ২৫৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম। গেল অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রেমিটেন্স কমেছে ১০ কোটি ডলার। গেল বছরের এপ্রিল মাসে দেশে যেখানে ১২৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে, সেখানে চলতি বছরের এপ্রিলে এসেছে মাত্র ১১৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া চলতি বছরের মার্চ মাসে রেমিটেন্স আসে ১২৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গেল বছরের মার্চ মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। একইভাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই, নবেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স কম এসেছে। অন্য মাসগুলোতে বাড়লেও তা অতি সামান্য। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জুলাই মাসে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে। যা গেল অর্থবছরের একই মাসে ছিল রেকর্ড ১৪৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আগস্টে রেমিটেন্স আসে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার; যা গেল বছরের আগস্টে ছিল ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে আসে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১৩৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, অক্টোবরে আসে ১০৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের অক্টোবরে ছিল ১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, নবেম্বরে আসে ১১৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের নবেম্বরে ছিল ১১৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে আসে ১৩১ কোটি ২৬ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের ডিসেম্বরে ছিল ১২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে আসে ১১৫ কোটি ডলার; যা গেল অর্থবছরের জানুয়ারিতে ছিল ১২৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ১১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১১৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এদিকে এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ এক কোটি ১৯ লাখ ডলার। দেশীয় মালিকানাধীন বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮০ কোটি ৭১ লাখ ডলার। আর বিদেশী মালিকানার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ এক কোটি ৩৩ লাখ ডলার। অন্যদিকে বরাবরের মতো এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ৩০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো সময়ে দেশে রেমিটেন্স আসে রেকর্ড ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসেছিল ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
×