ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাম সারোয়ার

অভিমত ॥ বাঁশখালীতেও উন্নয়ন বিরোধীদের ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

অভিমত ॥ বাঁশখালীতেও উন্নয়ন বিরোধীদের ষড়যন্ত্র

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রীরা নারকীয়তা ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ পুলিশসহ অন্তত ১৯ জন। জানা গেছে, বিদ্যুত কেন্দ্রবিরোধী পক্ষের লোকজন পুলিশের গাড়িবহরেও গুলি ছুড়েছে। বুঝতে কষ্ট হয় না পুলিশও গুলি ছুড়েছে। বাংলাদেশে মানুষের প্রাণ এখন ডালভাত। দুই কিস্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই প্রাণ গেল ৩৪ জনের। যা বলছিলাম, বাঁশখালীর গণ্ডামারার পশ্চিম বড়ঘোনায় দেশী-বিদেশী যৌথ উদ্যোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে চুক্তি হয়। তারপরই একটি মহল তৎপর হয়ে ওঠে। এই মহলটির তোতাপাখির মতো কিছু বুলি আছে। সেগুলোর একটি হলো- কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র হলে পরিবেশ বিপর্যয় হবে। তারপর তাদের প্ররোচনা ও স্থানীয় আরও বহু এজেন্ডাধারী চরদের পৃষ্ঠপোষকতায় সংগ্রাম কমিটি করে মানুষকে উস্কিয়ে দেয়া হয়। পরিণামে বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের একটি গাড়িতে প্রথমে হামলা করে বিরোধীরা। পুলিশ হামলাকারীকে গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে বিদ্যুত কেন্দ্র বিরোধীরা সমাবেশ ডাকে। বিদ্যুত কেন্দ্রের পক্ষের লোকজনও সমাবেশ ডাকে একই স্থানে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে কারা উৎসাহিত করেছে তা খুঁজে বের করতে হবে । সম্প্রতি একটি গোষ্ঠী যেনতেনভাবে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম তনুর নাম করে অন্য একটি মেয়ের ভয়ঙ্কর বিবস্ত্র লাশ দেখানো হলো। পরে দেখা গেল সেটা প্রকৃত তনুর লাশ সেটি ছিল না। রিপোর্ট বের হলো, মৃত্যুর আগে সে ধর্ষণের শিকার হয়নি। অথচ এই নিয়ে সরকারকে সময় দিতে আন্দোলনকারীরা নারাজ ছিল ভাবটা এমন যেন বিচার একরাতেই করে ফেলা সম্ভব। নিকট অতীতে আমরা আরেকটি বিষয় দেখলাম, ওই গোষ্ঠীটি কয়লা খনি থেকে কয়লা তুলতে দেবে না। মানুষকে বোঝাল কয়লা তুললে পরিবেশ নষ্ট হবে। তাদের দাবি মতে, কয়লা মাটির নিচেই ফেলে রাখতে হবে। যতদিন আমরা উন্নত দেশের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারছি ততদিন কয়লা তুলতে পারব না। আবার সরকার বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ দিতে চাইলেও তেল-গ্যাস-কয়লা-বন্দর রক্ষা কমিটি মাথা নাড়ে। তারা একই। সব রসুনের কোয়া এক জায়গাতে। আমরা বুঝি কয়লা তুলতে না দিলে কয়লা আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। আমাদের কয়লা আনতে হয় বেশিরভাগ মূলত রাশিয়া থেকে। যারা পরিবেশের দোহাই দিয়ে কয়লা তুলতে ঠেকায় তারা একটি বিশেষ দেশের স্বার্র্থ দেখে। এভাবে আড়িয়ল বিলে ঠেকানো হলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা। মনে রাখতে হবে, আমাদের একটি বিশ্বমানের বিমানবন্দর এখনও নেই। অনেকে হয়তো জানেন, বিমানবন্দরও বর্তমানে একটি ব্যবসার মাধ্যম। পৃথিবীর বড় বড় বিমানবন্দর বিশ্বের বিমান কোম্পানিগুলোর হ্যাঙ্গার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত হয় টার্মিনাল হিসেবে। যে দেশে বিমানবন্দর-ব্যবসা জমে সেখানে পর্যটন ও জ্বালানি ব্যবসাসহ অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আমাদের একটি আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর হলে সাউথ-ইস্ট-এশিয়ানের ভেতরে জাপান, চীন, মালয়েশিয়াসহ অনেক রাষ্ট্রের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে। তাই বিমানবন্দর ঠেকাতে হবে। সরাসরি তো আর ঠেকানো যাবে না। তাই ছুতা হলো পরিবেশ বিপর্যয় হবে। আড়িয়ল বিলের মানুষের বুঝানো হলো তোমরা মাছ ধরতে পারবে না। বিমানবন্দর হলে তাদের হাজার টাকার জমি শত কোটি টাকা হবে এবং তাদের দরিদ্র অর্থনীতি ঘুরে কসমোপলিটনের অর্থনীতি হবে এই তথ্য না বুঝে তারা পুঁটি মাছ ধরার স্বপ্নে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সরকারের রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী জনগণের কাছে যায়নি তাই তারা সুযোগ নিল। পরিণামে মানুষ বিগড়ে যাওয়াতে সরকার পিছু হটল। আর এয়ারপোর্ট ব্যবসার লাভের একটি খয়রাতি অংশ ওইসব দেশ থেকে আমাদের কথিত পরিবেশবিদরা বাগাতে পেরেছে নিশ্চয়। সরকার সবই বোঝে কিন্তু কূটনীতির বেড়াজালে ওইসব রাষ্ট্র সরকারকে আটকিয়ে রাখলে সরকারকে তো ধীরে চলতেই হয়। আর যে কোন দেশের সর্বশেষ অন্তর্নিহিত শক্তি হলো তার জনগণ। জনগণ যা চাইবে সরকারকে তাই করতে হবে। জনগণকে সরকারের এমপিরা বোঝাতে পারেনি। তারা গ্রামে-গঞ্জে আসে না। ঢাকায় পড়ে থাকে। পরিণামে সরল মানুষগুলোকে ভুল বোঝায় বিভিন্ন পক্ষ। এমনি করে ঠেকাতে মরিয়া রামপালের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন। ঠেকানো হচ্ছে বন্দর-ব্যবসা। অথচ এক বন্দর ব্যবসা দিয়েই সিঙ্গাপুর আজ উন্নয়নের রাজধানী। ঠেকানো হচ্ছে জাহাজ শিল্প। মেট্রোরেলকে তারা বলছে অপউন্নয়ন। আমরা জানি রাষ্ট্রের নিচে উন্নয়নের ইঞ্জিন লেগে গেলে রাষ্ট্র যে গতিতে দৌড়াবে তাতে ভূরাজনীতিতে অনেক রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করতে হবে শুধু বাংলাদেশ চ্যাপ্টার মাথায় রেখেই। তাই বিশ্বের বড় বড় খোলোয়াড় রাষ্ট্ররা চায় না, বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হোক। তাই তারা রাষ্ট্রের ভেতরে ষড়যন্ত্রী পালে। যেসব মানুষ পরিবেশের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে মাতম তোলেন সারাবেলা তাদের অনুদান আসে উন্নত দেশের মুনাফা থেকে। আর সে মুনাফা আসে পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে। পৃথিবীতে সবচেয়ে কার্বন বেশি পোড়ায় আমেরিকা। অথচ বিশ্বব্যাপী পরিবেশের ধোয়া তুলে বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে টাকাও সব চেয়ে বেশি উড়ায় আমেরিকা। বাঁশখালীর ঘটনায় সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের নাম আসছে। হত্যায় তার উস্কানি কতটুকু বের করতে হবে। একজন সহজ সরল শুক্কুর আলী বলেছেন, বিদ্যুত প্রকল্প হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে, তাই তারা আন্দোলন করছে। চিন্তা করে দেখুন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত গভীরে পৌঁছে গেছে! উন্নয়ন আমাদের লাগবে, বিদ্যুতও লাগবে। যারা বলে এখানে করা যাবে না, ওখানে করা যাবে না, তাদের এক টেবিলে ডাকুন। আলোচনা করুন। জিজ্ঞেস করুন, কোথায় করলে তারা খুশি। যদি তারা কোন সদুত্তর দিতে না পারে তবে তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মতৎপরতার অভিযোগে আইনের আওতায় আনুন । রাষ্ট্র সবার, উন্নয়নও সবার। বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন আওয়ামী লীগ একাই ঘরে নিয়ে যাবে না। তবে বিরোধী দলকে আন্তরিকভাবে ডাকার দায়িত্ব সরকারের। অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যার যায় সেই বোঝে। সন্তান হারানোর কোন ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্র কেন কারোরই নেই। তবু বলি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিন। বিচার নিশ্চিত করুন। বাঁশখালী কিংবা ফুলবাড়ীতে যেসব লাশ পড়েছে, সেসব লাশে যাদের দায় আছে, তাদের বিচার চাই আমরা। এমনকি পুলিশ বাড়াবাড়ি করে থাকলে সে বিচারও নিশ্চিত করতে হবে। লেখক : ব্যাংকার [email protected]
×