ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করতে হবে॥ গবর্নর

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করতে হবে॥ গবর্নর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় শুধু বিদেশী সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। এজন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। কারণ উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের প্রভাব আমরা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করতে শুরু করেছি। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ‘ওয়েটিং ফর চেঞ্জ’ ও ‘সিএসআর : ইমপেক্ট এসেসমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণাপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আতিউর রহমান বলেন, আমরা প্রফিট করতে ব্যাংকগুলোকে বাধা দিচ্ছি না। প্রফিটের একটি অংশ সমাজের অসহায় ও দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য রাখতে হবে। সবগুলো ব্যাংক যদি হাতে-হাত মিলিয়ে উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ততা দূর করে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও আয় রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলেই বিশ্বে রোল মডেল হবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএসআর কার্যক্রম। গবর্নর বলেন, আমাদের দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে সুযোগ পেয়েও বিদেশে পড়াশোনা করতে পারেন না। প্রত্যেকটি ব্যাংক যদি বছরে একজন করে শিক্ষার্থীর বিদেশে পড়াশোনার খরচ বহন করে, তাহলে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হলে পরিচালনার জন্য অনেক মেধাবীর প্রয়োজন হবে। তাদের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর মনোজগতের পরিবর্তন হয়েছে। সিএসআর কার্যক্রমে নিজেরাই যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করাতেই সেটা বোঝা যায়। আতিউর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় শুধু বিদেশী সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। এজন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। কারণ উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের প্রভাব আমরা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করতে শুরু করেছি। ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে খাবার পানি সঙ্কট নিরসন ও আয় রোজগারমূলক কাজ করতে ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি উৎসাহী হওয়া উচিত। এবিবির চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, সিএসআর কার্যক্রমে ব্যাংকগুলোর বাইরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এক্সিম ব্যাংকের এমডি হায়দার আলী মিয়া, জনতা ব্যাংকের এমডি আব্দুস সালাম প্রমুখ। ‘ওয়েটিং ফর চেঞ্জ’ শীর্ষক বইটি উপকূলীয় জেলা ভোলার বিভিন্ন চরের মানুষের সুপেয় পানি ও কর্মসংস্থানের অভাবের ওপর গবেষণালব্ধ ফলাফল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় গবেষণা কার্যক্রমটি করেছে ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনশিয়েটিভ (এমআরডিআই)। অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্রটির প্রাথমিক ধারণা দেন এমআরডিআইর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী চৌধুরী। ‘সিএসআর : ইমপেক্ট এসেসমেন্ট’ শীর্ষক বইটিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থায়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে মোট ৫১০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ২০১৩ সালে এ ব্যয় ছিল ৪৪৭ কোটি, ২০১২ সালে ৩০৪ কোটি ও ২০১১ সালে ২১৮ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সিএসআর ব্যয়ের মধ্যে সরকারী ব্যাংক ৫ শতাংশ, বিদেশী খাতের ব্যাংক ৩ শতাংশ ও বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। গত বছর সিএসআর ব্যয়ের মধ্যে শিক্ষায় গেছে ৩০ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ২৭, মানবসেবা ও ত্রাণ সহায়তায় ১৯, শিল্প-সংস্কৃতিতে ৮, খেলাধুলায় ৪, পরিবেশে ৩ ও অন্যান্য খাতে ১০ শতাংশ। ২০১৪ সালে শিশুদের মধ্যে ৩ শতাংশ, মহিলা ৪৭ শতাংশ ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয় হয়েছে। ২০১৩ সালে সিএসআর খাতে শিশুদের মধ্যে অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। এছাড়া পুরুষের ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৩৯ শতাংশ সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয় হয়েছে।
×