ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুটবলকন্যাদের অভিনন্দন

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

ফুটবলকন্যাদের অভিনন্দন

বিজয়ের মাসে জাতিকে আরেকটি গৌরবময় বিজয়ের স্বাদ এনে দিয়েছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। অনুর্ধ-১৪ ফুটবলযুদ্ধে তারা আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে বেশ দুর্বল, সেখানে কিশোরীদের এই দলটি এ রকমই এক টুর্নামেন্টে (এএফসিÑ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন) চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছে। এক অর্থে হিমালয় জয় করেই ফিরেছে মেয়েরা। নেপালে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে ইরান ও ভারতের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী দল খেলেছে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অবশ্যই একটি বিরাট অর্জন। মেয়েদের জাতীয় বা বয়সভিত্তিক কোন দলের প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য এটি। তাদের অভিনন্দন। জয়তু ফুটবলকন্যারা। গত ২৫ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল এই ফাইনাল। কিন্তু সেদিন ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল পুরো নেপাল। বাংলাদেশের মেয়েরা অনুভব করল যেন মৃত্যুর বিভীষিকা। দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালে নামার বদলে সারারাত তারা কাটিয়েছিল খোলা আকাশের নিচে। পরের দিন অনেকটা হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে তারা দেশে ফিরে আসে বিশেষ বিমানে চড়ে। সেদিন এই ছোট মেয়েদের কেউ ভাবতেও পারেনি আবার নেপালেই যাবে তারা এই ফাইনাল ম্যাচটি খেলতে। শিরোপার চিন্তাও তখন আর মাথায় ছিল না। অথচ বাস্তবে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। উল্লেখ্য, ওই টুর্নামেন্টে ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত কলসিন্দুরের ১০ কিশোরী খেলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার এবং বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ৪০ মহিলা ফুটবলারকে চাকরি দিয়েছে। দেশের নারী ফুটবলারদের পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ প্রদানের জন্য এমন মনোভাব খুব জরুরী। তাই এই দুটো প্রতিষ্ঠান অবশ্যই ধন্যবাদপ্রাপ্য। এ রকম আরও সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসুক, এটাই চাওয়া। প্রায় হতোদ্যম, ঝিমিয়ে পড়া দেশীয় ফুটবলে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল চলতি বছরই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনের মাধ্যমে। এরপর সঞ্চারিত হয়েছে প্রাণ-চঞ্চলতা। ভারতকে হারিয়ে ফুটবলে বিজয়ী হয়েছিল বাংলাদেশÑ এভাবেই দেখছেন দেশের কোটি ফুটবলপ্রেমী। ‘চট্টগ্রাম আবাহনী’ ও ‘কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল’ নামযুক্ত দুটি ঐতিহ্যবাহী ফুটবল দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিতে শিরোপা পাওয়া এক মহানন্দের ব্যাপার, যেন জাতীয় উৎসবেরই সমতুল্য। তাই বিদায়ী বছর ২০১৫ সালকে ফুটবলে দেশের জন্য সাফল্য ও উদ্দীপনার বছর হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কিশোরীরা বছরের শেষে দেশের জন্য নিয়ে এলো বিরল সম্মান। দেশে মহিলা ফুটবলের জাগরণ হচ্ছে, তৃণমূলে অনেক প্রতিভাধর মেয়েরা ফুটবল খেলছে। এদের ধরে রাখার দায়িত্ব প্রথমত বাফুফের, তারপর সমাজের। কারণ এর আগে দু’বছর প্রশিক্ষণ দেয়ার পরও দুই কিশোরী গোলকিপারের বিয়ে হয়ে গেলে উভয়ের ফুটবল জীবনের ইতি ঘটেছিল। কিংবদন্তিতুল্য ফুটবলার সালাউদ্দিনের অভিভাবকত্বে ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চায় বাফুফে। সেজন্য কিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করতে পারি নারী ফুটবলারদের এখন থেকে প্রতিটি ফুটবল উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। উপেক্ষিত ফুটবলও পুনরায় ফিরে পাবে তার যথাযথ আসন।
×