ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দিশেহারা কৃষককুল

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

দিশেহারা কৃষককুল

যুগ যুগ ধরে শস্যসম্ভার পরিপূর্ণ এই বাংলাদেশ। শস্যসম্ভার দ্বারা মানুষের উদরপূর্তি করে বাঁচিয়ে রাখে এ দেশের কৃষক সমাজ। এ দেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষিজীবী। বাকি ২০ ভাগও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এজন্য এ দেশের উন্নতি-অবনতি কৃষকের ওপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের দেশের সরকারপ্রধানগণ বলে থাকেন, ‘দেশ বাঁচাও কৃষক বাঁচাও’। আমরা সাধারণ মানুষও বলে থাকি ‘কৃষকই জাতির মেরুদ-’। সকলেই কৃষকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, বাস্তবে কি তাই? মোটেও নয়। পূর্বে বাংলার কৃষিজীবী মানুষের জীবন সুখী ও শান্তিময় ছিল, কারণ তখন তাদের গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর কৃষক ছিল স্বাস্থ্যবান। খেয়েপরে কৃষকের ঘরে উদ্বৃত্ত থাকত খাদ্যশস্য। তখন তাদের জীবনযাত্রা ছিল সহজ-সরল। পূজা-পার্বণে এবং ঈদ উৎসবে তাদের আনন্দের সীমা থাকত না। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নত ধরনের কৃষি উপকরণের প্রভাবে ও সরকারের সাহায্য-সহানুভূতিতে কৃষকের ভাল থাকার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারের কিছুটা ভ্রান্তনীতির কারণে কৃষক তাদের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে কৃষিকাজের লোকের দৈনিক মজুরি অনেক বেশি। তিনবেলা খাওয়া ও অন্যান্য খরচ ছাড়া দৈনিক নগদ মজুরি বাবদ ৫শ’ থেকে ৬শ’ ৫০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া ধান লাগানো থেকে ফসল ফলিয়ে ঘরে তুলে আনতে যে খরচ পড়ে তা কৃষক কোনভাবেই পুষিয়ে আনতে পারছে না। এ বছর ধানের মূল্য মণপ্রতি ৪শ’ ৫০ থেকে ৬শ’ ৫০ টাকা পর্যন্ত ছিল, যা বর্তমানেও আছে। এক মণ ধান উৎপাদন করতে কমপক্ষে ৮শ’ টাকা খরচ হয়, যে কারণে বর্গাচাষীরা দিন দিন ঋণের ভারে জর্জরিত হওয়ায় বর্গাজমি চাষ করবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে চলতি বছরে অনেক জমিই অনাবাদি রয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষকের ঘরে চাল না থাকায় অর্ধাহারে ও অনাহারে বিভিন্ন রোগে দিশাহারা। এদের দুর্ভোগের খবর সরকার সঠিকভাবে জানতেও পারে না। এজন্য দায়ী হলো রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সমাজের ক্ষমতাধর ব্যক্তিগণ। জমির মালিক কৃষককুল ও ধানচাষের বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করছে। কারণ তাদের ধানের উৎপাদন খরচও ঘরে তুলে আনতে পারছে না। কৃষকগণ কৃষি উৎপাদিত শস্য বিক্রি করে তাদের পরিবারের যাবতীয় ভরণপোষণ, চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, বিয়েশাদি ও আকস্মিক খরচপত্র চালায়। বর্তমানে ধানের বাজারমূল্য কম থাকার কারণে দিন দিন কৃষককুল দেউলিয়া হয়ে পড়ছে। তাই কৃষিজমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ধানের মূল্য কমের কারণে জমির মূল্য কমে গেছে এবং জমি ক্রয়-বিক্রয়ও কম হচ্ছে, যে কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়ন সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে মোটামুটি দেশের মানুষ তাই মনে করে। সরকার বিভিন্ন পেশার মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকার দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন দ্বিগুণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষককুলের আর্থিক উন্নয়নের ব্যবস্থার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে আমার জানা নেই। অথচ বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলতে হয় যে, কৃষককে বাঁচাতে হলে ধান-চালের মূল্য বাড়াতে হবে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যের সঙ্গে এর মিল নেই। ধানের মূল্য বাড়ানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। ধানের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে সরকারকে কৃষক থেকে সরাসরি ক্রয় করে গুদামজাত করতে হবে। বিনা কারণে বিদেশ থেকে ধান বা চাল আমদানি করা যাবে না। দেশের উৎপাদিত ধান জনগণের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত হলে বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। প্রয়োজনে সরকার কৃষকদের ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা করবে। আগামীতে অর্থাৎ বর্তমান আমন ধানের মূল্য কমপক্ষে ৮শ’ থেকে ৮শ’ ৫০ টাকা ধার্য করতে হবে। সামগ্রিক বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে সরকার কৃষকের প্রতি সুনজর দেবে বলে আমি মনে করি। কারণ এ সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। তা না হলে কৃষককুল বেঁকে গেলে সরকার ও দেশের ক্ষতি হবে। কাজী গোলাম মোহাম্মদ ফুলগাজী, ফেনী
×