ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণহীনতার সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ নভেম্বর ২০১৫

নিয়ন্ত্রণহীনতার সংস্কৃতি

কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণহীনতার এই এক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে দেশে। অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে, কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে? মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশমানের এ যুগে সবাই বুঝি লাগামছাড়া এমনটা মনে হতে পারে। শুধু মনে হবে কেন, বাস্তবেও তো মেলে এই চিত্র। যে যার খেয়াল-খুশিতে যা কিছু করতে পারে, ইচ্ছেমতো অনেক কিছুতেই হস্তক্ষেপ করতে পারে; কিন্তু তাতে ভুক্তভোগী হতেই পারে জনগণ। অথচ সে নিয়ে ‘টু’ শব্দটি করার জো নেই। বরং পুরো বিষয়টি হতে দৃষ্টি অন্যত্র রেখে বলছেন যেন তারা, যাদের করার কথা নিয়ন্ত্রণ। জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করার দায়িত্ব যাদের তাদের নির্বিকারত্বের ঘেরাটোপে জনতার আহাজারি, ক্ষোভ, দুঃখ-কষ্ট প্রবেশ করতে পারে না, বরং দেয়ালে মাথা ঠুুকে ক্লান্ত প্রায় জনতার বহর। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের সুযোগ-সুবিধা বর্ধিত অবস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। সরকার প্রয়োজনে বাজারে হস্তক্ষেপ করবে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থান এর বিপরীতে। তাই বাজারে পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমাফিক বাড়ান, আবার কমান। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম হ্রাস পেলেও দেশীয় বাজারে তা হ্রাস পায় না, বরং ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গঠন করে পণ্যের দাম একযোগে বাড়িয়ে দেন। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখেশুনেও থাকে নির্বিকার। অথচ উচিত ছিল ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের হাতে একটি অস্ত্র রাখা। বাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিলে কখনই পণ্যের মূল্য কমে আসবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারেরও নজরদারি থাকা উচিত। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা আর সেজন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে তার মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখা জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অথচ জনসেবার কাজটি যদি হয় গতিহীন, মানুষের প্রয়োজনকে করা হয় উপেক্ষা তবে বেদনার ভার বহিবার শক্তি হ্রাস পেতে বাধ্য। মানবজীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য যদি রয়ে যায় নাগালের বাইরে, আকাশছোঁয়া তবে হাহাকার এসে জড়ো হয়। এমনটাই দেখা যায় যখন থলে হাতে বাজারে কেনাকাটা করতে হয়। হিসাবের গরমিল হতে থাকে অনাবিল বেদনার ধারায়। বিক্রেতার খেয়াল-খুশিতে পরিণত হওয়া মানেই নিজের সামর্থ্যরে প্রতি বিদ্রƒপ করা যেন। এই যে নিত্যদিনের বাজারগুলো সকাল-বিকেল পণ্যমূল্য দাঁড় করায় খেয়ালমাফিক তার লাগাম টেনে ধরার জন্য বুঝি নেই কেউ। সরকার এ ক্ষেত্রে নির্বিকার প্রায়। তারা তো বলেই দিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বাজারে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করে না, করবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে। ব্যবসায়ীদের আস্থার ওপর নির্ভর করে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে ব্যবসায়ীরা আদৌ জিনিসপত্রের দাম কমাতে আগ্রহী হয়ে উঠে না। দিনের পর দিন এরকমই চলে আসছে। সরকার ব্যবসাবান্ধব বা ব্যবসায়ীবান্ধব হতেই পারেন। কিন্তু গণমানুষের চাহিদাকে উপেক্ষা করে নির্বিকারত্বের ভাব নিয়ে আর যাই হোক দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এক সময় ‘বাজার মনিটরিং সেল’ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সেলের তৎপরতা আর দেখা যায় না। তাই নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে জনগণ দুর্ভোগকে বরণ করে দিনের পর দিন জিম্মি হয়ে থাকবে এটা কারও কাম্য হতে পারে না। বাজার হোক নিয়ন্ত্রিত, হোক স্থিতিশীল, যাতে প্রয়োজনীয় পণ্য থাকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। আর সেটাই হবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন। দেশবাসী নিয়ন্ত্রণহীন সংস্কৃতি হতে মুক্তি চায়।
×