ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালীদের ভূমিকা নিয়ে বই প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ জুলাই ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালীদের ভূমিকা নিয়ে বই প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালীদের ভূমিকা তুলে ধরে প্রকাশিত হয়েছে আরও একটি বই। সাহিত্য প্রকাশ থেকে আসা বইয়ের শিরোনাম- প্রবাসী বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ এবং ড. মাহবুবুল আলম। ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পদার্থ বিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল আলমের ভূমিকা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। রবিবার সকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মাহবুবুল আলমের ঘনিষ্টজন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আলোচনা করেন বইয়ের সম্পাদক ও মাহবুবুল আলম-পতিœ সালমা আলম, ভাই মুকুল চৌধুরী, ছেলে শুভ, বন্ধুজন অর্থনীতিবিদ সাইদুজ্জামান, কাজী জাহিদুল হাসান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকাশক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন মাহবুবুল আলম। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে নানাবিধ কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালে বোস্টন থেকে ৪০ টন ওজনের টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। কাজটির পরিকল্পনা ছিল জনৈক ফিরোজের। তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চান। আমি তাঁকে নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে যাই। কর্মকর্তাদের সহায়তায় সেসব যন্ত্রপাতি দেশে পাঠানো হয়। এই ফিরোজের নেতা ছিলেন মাহবুবুল আলম। এসব ইক্যুইপমেন্ট অপেক্ষাকৃত কম দামে কেনা ও দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ব্যক্তিগত স্মৃতি থেকেও মাহবুবুল আলমকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন অর্থমন্ত্রী। টুকরো টুকরো স্মৃতি এক করলে মহান দেশপ্রেমিক সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায়। ড. মাহবুবুল আলমকে দীর্ঘ সময় কাছ থেকে দেখেছেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি বয়সে আমার এক বছরের জুনিয়র ছিলেন। তবে সম্পর্কটি ছিল ঘনিষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে পেয়েছি। তখন ছাত্র রাজনীতি ছিল। ভাল ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিত। আমি নিজেও সংশ্লিষ্ট ছিলাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে। সেই সূত্রে মাহবুবুল আলমকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। নির্বাচনে তিনি সরাসরি অংশ নিতেন না। তবে নেপথ্যে প্রচুর কাজ করতেন। অত্যন্ত কমিটেড ছিলেন তিনি। ১৯৬১ সালে বোস্টনে পাড়ি জমানোর কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে তারও আগে থেকে অবস্থান করছিলেন মাহবুবুল আলম। আমি গিয়ে জানতে পারি তিনি ‘বড় ভাই’ নামে ব্যাপক জনপ্রিয়। সে সময় তাঁর থেকে বয়সে বড়রা ছিল। শামসুল হকসহ খুব প্রসিদ্ধরা ছিলেন। এরপরও ভালবেসে লোকে মাহবুবুল হককে বড় ভাই বলে সম্বোধন করতেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, মাহবুবুল আলম সবাইকে নিয়ে থাকতে ভালবাসতেন। যে কারও বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। সমস্যা সমাধান করে দিতেন। এসব কারণে বিশেষ শ্রদ্ধা ও পছন্দের মানুষ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে প্রকাশিত বইটিতে অনেক কিছুই ওঠে আসেনি বলে মনে করেন মুহিত। বইটি আরও সমৃদ্ধ হতে পারত বলে মত দেন তিনি। বইয়ের সম্পাদক সালমা আলম বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় নির্বিচার গণহত্যা চালায় পাকিস্তান বাহিনী। ড. মাহবুবুল আলম সে খবর পাওয়া মাত্রই নিজের করণীয় স্থির করে ফেলেন। প্রবাসী বাঙালীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ শুরু করেন। কিন্তু আকস্মিক মৃত্যু হওয়ায় তিনি সেসব কথা লিখে যেতে পারেননি। আমি তাঁর পক্ষে সে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি মাত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের বিভিন্ন দলিল ও নথিপত্র বইতে সংযুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সন্তানের মতো এগুলো আমি আগলে রেখেছিলাম। অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলম হয়ে ওঠার যে প্রেক্ষাপট, ছোট পরিসরে সেটি বর্ণনা করেন ছোট ভাই মুকুল চৌধুরী। পরিবার ও বেড়ে ওঠার পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, পরিবারেই দেশপ্রেমের চর্চাটা ছিল। আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্ববান অগ্রজরা ছিলেন। তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন মাহবুবুল আলম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মুকুল বলেন, বোস্টন থেকে তিনি টেলিফোনে দেশের খোঁজখবর নিতেন। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার পর রনাঙ্গণ থেকে তাঁকে চিঠি লিখি। চিঠিতে তাঁর সাহায্য চাই। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে মাহবুবুল আলম দেশে টেলিযোগাযোগ যন্ত্র পাঠানোর উদ্যোগ নেন। প্রবাসী এই যোদ্ধা কোন স্বীকৃতি বা যথাযথ সম্মান পায়নি জানিয়ে এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন অন্য বক্তারা। সমাপনী বক্তব্যে প্রকাশক মফিদুল হক বলেন, আজকের আলোচনা থেকে মাহবুবুল আলম সম্পর্কে নতুন আরও অনেক কিছু জানা গেল। সেই আলোকে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করা হবে জানিয়ে সকলের সহায়তা কামনা করেন তিনি। শিল্পকলায় যাত্রাশিল্পীদের জাতীয় সম্মিলনী ॥ রবিবার আষাঢ়ের মেঘলা বিকেলে যাত্রাশিল্পীদের আড্ডায় মুখরিত হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হল। আড্ডায় ও আলোচনায় উঠে আসের এই প্রাচীন এই শিল্প সমস্যা ও সংকটের কথা। আর সেই সূত্র ধরে সমস্যা নিরসনে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। ‘যাত্রাশিল্পের জন্য চাই এক নির্মল সকাল’ সেøাগানে যাত্রামালিক-শিল্পী ও সংগঠকদের নিয়ে এই জাতীয় সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়। জাতীয় এ সম্মিলনী আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ভূমিকা রাখেন বিশিষ্ট যাত্রানট মিলন কান্তি দে। যাত্রাশিল্পী ও নির্দেশক সুলতান সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব এসএম মহসিন। অনুষ্ঠান মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন যাত্রা অভিনেত্রী রিক্তা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্যে যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে বলেন, ‘যাত্রার সোনালি দিনগুলো আজ কোথায়? যাত্রাশিল্প আজ ধ্বংসের কবলে। এ শিল্পের উন্নয়নে সাংগঠনিকভাবে আমাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে। যাত্রাশিল্পকে অশ্লীলতা ও কলুষমুক্ত করতে সম্মিলিতভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। এ বছর আমি যাত্রা নিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন যাত্রা প্যান্ডেলে যাব। সরকারী অনুমতি নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করব এবং অশ্লীলতার অভিযোগ পেলে যাত্রা বন্ধও করে দিব। তিনি আরও বলেন, অশ্লীলতা রোধ করে যাত্রাকে টিকিয়ে রাখতে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে যাত্রাদলের মালিকদের এবং শিল্পীদের। আমাদের দেশে যাত্রার অশ্লীলতা নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়, অথচ চলচ্চিত্র যাত্রার চেয়ে অশ্লীল। কিন্তু সিনেমার অশ্লীলতা নিয়ে খুব একটা সমালোচনা হয় না। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সর্বস্তরের যাত্রাদলের মালিক, শিল্পী, সংগঠক ও শুভাকাক্সক্ষীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয় এ সম্মিলনী। আয়োজনের প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা। আর দ্বিতীয় পর্বে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাঙালীর হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্পকে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থধারায় প্রবাহিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই অনবদ্য প্রয়াসে আগামী দিনে যাত্রাশিল্প থেকে অশ্লীলতা রোধে এবং পরিচ্ছন্ন যাত্রাশিল্প চর্চার নিমিত্তে এই আয়োজন। তিনি এই সম্মিলনী থেকে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের বিষয়ে বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খুবিতে চারুকলা প্রদর্শনী উদ্বোধন ॥ স্টাফ রিপোর্টার খুলনা অফিস থেকে জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) চারুকলা ইনস্টিটিটের উদ্যোগে ৫ দিনব্যাপী ৩য় চারুকলা প্রদর্শনী রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় উদ্বোধন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ আমীরুল মোমেনীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভাস্কর্র্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষক শেখ সাদী ভূঁইয়া। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রুম্মান শাজারাত আইভি। পরে খুবির উপাচার্য বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। ৫ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে মোট ২৫৫টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে।
×